মেরিনা দেবনাথ

১৬ মে, ২০২০ ২২:০৯

করোনা ও খাদ্য নিরাপত্তা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

করোনাভাইরাস সংক্রমণ (কোভিড ১৯) একটি প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহামারী। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস (কোভিড ১৯) রোগে পৃথিবীতে প্রায় ৪৫ লাখ লোক এবং বাংলাদেশে ২০ হাজারের অধিক লোক সংক্রমিত হয়েছে। সারা বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ লোক লকডাউনের মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশে লকডাউন শুরু হয়েছে ২৬ মার্চ ২০২০ থেকে এবং ৫ম দফায় লকডাউন বাড়ানো হয়েছে ৩০ মে ২০২০ পর্যন্ত। ২ মাসের অধিক সময় ধরে লকডাউনের কবলে বাংলাদেশ।  

যেহেতু করোনা ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ছে এবং এটি একটি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট হিসেবে দাঁড়িয়েছে, সমানভাবে এটি অর্থনৈথিক সংকটেরও কারণ হবে- যারফলে মন্দা, খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে। বৈশ্বিকখাদ্য নিরাপত্তাসূচক ২০১৯ এ বাংলাদেশ তার অবস্থার উন্নতি করেছে। বাংলাদেশের মোটখাদ্য চাহিদার ৯৫ শতাংশের যোগানদাতা প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষক পরিবার।

কৃষকদের জন্য কৃষিপণ্য ঘরে তোলার বড় মৌসুম হলো এপ্রিল ও মে মাস। দেশের চালের ৬০ শতাংশ যোগান আসে এই বোরো মৌসুম থেকে। বর্তমান সরকারের সাহসী ও সময়োপযোগী পদক্ষেপের ফলে বোরো মৌসুমের প্রায় সকল ধান ঘরে তুলতে সক্ষম হয়েছে। সরকার একইভাবে মৌসুমী ফল আম, জাম, কাঁঠাল ও লিচু খামারীদের সহায়তা করবে। পাশাপাশি ডেইরি ও পোল্ট্রি খাতকে রক্ষায় সরকার অতি দ্রুত সময়ে খামারীদের স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়েরহিসেব মোতাবেক বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য গুদামে ১৩.৮৭ লাখ মেট্রিকটনচাল ও ৩.০৮ লাখ মেট্রিক টন গমসহ বর্তমানে প্রায় ১৬.৯৫ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত রয়েছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক ‘খাদ্য শস্য পরিস্থিতি’ বিষয়ক এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে এই মজুদ সন্তোষজনক এবং খাদ্য শস্য ঘাটতির কোন সম্ভাবনা নেই। পর্যাপ্তখাদ্য মজুদ থাকা সত্ত্বেও সংকটকালীন এ সময়ে দেশে মজুতকৃত খাদ্য সরবরাহের পর্যাপ্ততা, সুষমবণ্টন, স্বচ্ছতা এবং সহজেইপণ্য কেনার সামর্থ্য তার বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাকল্পে বোরো মৌসুমে ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সংগ্রহের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষ ও অর্থনীতির জন্য ১১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, যা মোট জিডিপির ৩.৫ শতাংশ। বিভিন্ন দারিদ্র্য শ্রেণি বিশেষত দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, গৃহকর্মী, দোকান ও ফেরিওয়ালা, নরসুন্দর এবং হিজড়া সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত লোকদের নানা কর্মসূচীর আওতায় এনে বিনামূল্যে অথবা ন্যায্য মূল্যে খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দরিদ্র জনগোষ্ঠীরমাঝে ১২.৫ বিলিয়ন টাকা (১.৪৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার সমমূল্য) বিতরণ করেছেন। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারের প্রায় আড়াই কোটি মানুষের জন্য রেশন কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে যেন তাদের অন্যতম মৌলিক চাহিদা খাদ্যের সমস্যায় পরতে না হয়।

বিজ্ঞাপন



পাশাপাশি সরকার আরও ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারের জন্য জরুরিভিত্তিতে রেশনকার্ড প্রস্তুতের নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এখন পর্যন্ত দেশের উৎপাদন স্থিতিশীল রয়েছে। দেশে বিভিন্ন ফসলের উৎপাদনও ভাল হচ্ছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, অন্যায়ভাবে পণ্য মজুদকারীসহ সকল অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সেক্টরকে সচল রাখার জন্য নানা ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। শিল্প প্রতিষ্ঠান ও কৃষিখাতের জন্য তহবিল ঘোষণা করেছেন। আমারা আশাবাদী যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহসিকতা, বিচক্ষণতা ও দেশ পরিচালনায় দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এই সংকটময় মূহূর্তে জাতিকে সঠিকভাবে পরিচালিত করবে এবং দেশ এই সংকট অচিরেই কাটিয়ে উঠবে। বিশ্ব মহামারী কোভিড ১৯ সংকট মোকাবেলায় জনগণের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে সরকারি কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে আন্তরিকতা, মানবিকতা ও বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক: সরকারি কর্মকর্তা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত