নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ মে, ২০২১ ২১:১০

কটাক্ষ পরিকল্পনার অংশ, ভালো মানুষদের সংগঠিত হতে হবে: চঞ্চল চৌধুরী

মা দিবসে নিজের মায়ের সঙ্গে একটি ছবি ফেসবুকে দিয়েছিলেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। মা-ছেলের হাসিমাখা মুখ। মিষ্টি ছবি। কিন্তু এমন সুন্দর ছবিতেও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেন অনেকে। গুণী এই অভিনেতার ধর্মপরিচয় নিয়ে তারা কটাক্ষ করেন।

ফেসবুকে দেয়া ছবিতে চঞ্চলের মায়ের কপালে ও সিঁথিতে ছিল সিঁদুর- বাঙালি হিন্দু নারীদের যেমন থাকে! মায়ের সিঁদুরশোভিত কপাল দেখেই চঞ্চলের বিরুদ্ধে ঘৃণাসূচক মন্তব্য ছুড়ে দেন অনেকে।

উগ্রবাদীদের এমন মন্তব্যে বিব্রত হলেও চঞ্চল চৌধুরী মনে করেন, বিদ্বেষ পোষণকারীরা সংখ্যায় একেবারেই সামান্য।

চঞ্চল বলেন, ‘তাদের বিদ্বেষের জবাব ফেসবুকেই দিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। তারা প্রতিবাদ করছেন। আমার ও আমার মায়ের প্রতি ভালোবাসা জানাচ্ছেন। দেশে এই মানুষদের সংখ্যাই এখনও বেশি। এই মানুষেরাই আমাদের আশার জায়গা।’

ফেসবুকের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য নিয়ে সোমবার দুপুরে কথা হয় চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি ধর্মের কারণে পরিচিত না। কর্মের মাধ্যমে পরিচিত। আমার যা কিছু অর্জন, যা কিছু পরিচিতি সব আমার কাজের কারণে। এ দেশের মানুষজনই আমাকে ভালোবেসে এই অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। ফলে আমার ধর্মীয় পরিচয় কী সেটা মুখ্য বিষয় নয়। কর্মই আমার মূল পরিচয়।’

যারা ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করেছেন তাদের প্রতি বিশেষ কোনো মন্তব্য নেই চঞ্চলের। বলেন, ‘এদের নিয়ে আমি তেমন কিছু বলতে চাই না। এটা তাদের ক্ষুদ্রতা-দীনতার প্রকাশ। এসব রুচিহীন মন্তব্যকারীদের জন্য আমার করুণা হয়।’

চঞ্চল চৌধুরী আগেও ফেসবুকে বিদ্বেষের শিকার হয়েছেন। ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ শুনতে হয়েছে। এ প্রসঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘এগুলো একটা পরিকল্পনার অংশ। মানুষজনকে বিব্রত করার জন্য একটি গোষ্ঠী সংঘবদ্ধভাবে এসব করে থাকে। এরা সংখ্যায় সামান্য হলেও সংঘবদ্ধ।’

চঞ্চল চৌধুরী মনে করেন এই গোষ্ঠীর তৎপরতা ঠেকাতে ভালো মানুষদের সংঘবদ্ধ হতে হবে। ধর্ম নিয়ে উগ্রতাকে সবাই মিলে প্রতিহত করতে হবে। ভালো মানুষেরা সংগঠিত না থাকার সুযোগ এই গোষ্ঠী নিচ্ছে বলেও মনে করেন চঞ্চল।

ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেতা বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নয়, বরং মুক্তমনা মানুষই এখানে সবচেয়ে সংখ্যালঘু। যারা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেন, মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান করেন- তারাই দিন দিন সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছেন।

চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘আমি তো আমার ধর্ম বেছে নেইনি। জন্মসূত্রে আমি তা পেয়েছি, কিন্তু আমার কর্মের দায় আমার। মানুষের কর্ম দিয়ে তার বিচার হবে।’

মনপুরা, আয়নাবাজি এমন অনেক দর্শকনন্দিত ছবির এই অভিনেতা আক্ষেপ করে বলেন, ‘পৃথিবী অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সভ্যতা সবদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ আমরা এখনো ক্ষুদ্রতা ধারণ করে আছি। নিজের ভেতরের এই দীনতাকে জয় করতে না পারলে আমরা এগিয়ে যেতে পারব না।’

চঞ্চল বলেন, ‘আমার কাজ আপামর মানুষের জন্য। কোনো বিশেষ ধর্ম বা গোষ্ঠীর মানুষের জন্য না। একজন শিল্পী কোনো ধর্মের নন। তিনি সকল মানুষের।’

এর আগে ফেসবুকেই বিদ্বেষমূলক মন্তব্যকারীদের জবাব দেন চঞ্চল চৌধুরী। তিনি লেখেন, ‘ভ্রাতা ও ভগ্নিগণ। আমি হিন্দু নাকি মুসলিম তাতে আপনাদের লাভ বা ক্ষতি কী? সকলেরই সবচেয়ে বড় পরিচয় ‘‘মানুষ"। ধর্ম নিয়ে এ সকল রুচিহীন প্রশ্ন ও বিব্রতকর আলোচনা সকল ক্ষেত্রে বন্ধ হোক। আসুন, সবাই মানুষ হই।'

উগ্রবাদীদের উদ্দেশে চঞ্চল চৌধুরীর এই জবাব ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। অনেকেই চঞ্চলের এই বক্তব্য ও মায়ের সঙ্গে তার ছবি শেয়ার করে বিদ্বেষপোষণকারীদের সমালোচনা করছেন। অনেক নির্মাতা-অভিনেতাও দাঁড়িয়েছেন চঞ্চলের পাশে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত