বিনোদন প্রতিবেদক

০৮ এপ্রিল, ২০১৬ ১৮:৩০

দেশ টিভিতে আসাদুজ্জামান নূরের অতিথি সুষমা দাস

শনিবার রাত ৯.৪৫ মিনিটে দেশ টিভিতে দেখা যাবে সিলেটের প্রবীণ লোকসংগীত শিল্পী সুষমা দাসকে। দেশ টিভির নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান “বেলা অবেলা সারাবেলা” অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সিলেটের প্রবীণ এই লোকসংগীত শিল্পীর সংগীত জীবন ও তার স্মৃতিময় বিভিন্ন সময়ের কথা শোনাবেন।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর।  অনুষ্ঠানটি কিছুদিন আগে ঢাকায় রেকর্ডিং করা হয়। সিলেটের এই প্রবীণ লোকসংগীত শিল্পী সুষমা দাসের জীবনপঞ্জির নানাদিক ও তার সংগীত সাধনার বিষয়টি উঠে আসবে অনুষ্ঠানে।

দেশের বিশিষ্টজনদের ও স্ব স্ব ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন এমন বিশিষ্টজনের জীবন ও কর্মকে নিয়ে “বেলা অবেলা সারাবেলা” অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়ে আসছে।

সম্মিলিত নাট্যপরিষদের সিলেটের সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত সংস্কৃতি মন্ত্রীর কথায় সুষমা দাসকে নিয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠানটি রেকর্ডিং এর জন্য যান।

শাহ্ আব্দুল করিম জন্মশত বার্ষিকী উদ্যাপন পরিষদ আয়োজিত সিলেটে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি মন্ত্রীর উপস্থিতিতে দু’টি গান পরিবেশন করেছিলেন প্রবীণ লোকসংগীত শিল্পী সুষমা দাস। তাঁর গান শুনে সংস্কৃতিমন্ত্রী অত্যন্ত আবেগতারিত হন। তিনি সুষমা দাসের সংগীত প্রতিভাকে শ্রদ্ধা জানান এবং তাঁর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন সংস্কৃতি মন্ত্রী একান্ত ইচ্ছায় তাঁর সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করা হয়। এছাড়াও সুষমা দাসের ১৩টি গান রেকর্ডিং করা হয় যা অচিরেই প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে।

সুষমা দাসের সংক্ষিপ্ত জীবনী : সুষমা দাস ১৩৩৬ বাংলা, ১ মে ১৯৩০ সালে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা থানার পুটকা গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর  পিতা রসিক লাল দাস, মাতা: দিব্যময়ি দাস। পিতা রসিক লাল দাস গান লিখতেন এবং গাইতেন। তিনি পিতা-মাতার সাথে মাত্র ৭ বছর বয়সে ছোট বেলা থেকেই ধামাইল এবং বাউল গান করতেন।

১৩৫২ সালে শাল্লা থানার চাকুয়া গ্রামে তাঁর বিয়ে প্রাণনাথ দাস এর সাথে। বিয়ের পর গ্রামীন মেয়েলী আসরে ধামাইল, কবি গান ও বাউল গানের পাশাপাশি হরি জাগরণের গান, গোপিনী কীর্তন, বিয়ের গান সহ ভাটি অঞ্চলে প্রচলিত লোকজ ধারার সকল অঙ্গের গান গেয়ে এলাকায় একজন নন্দিত শিল্পী হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। একুশে পদকপ্রাপ্ত পন্ডিত রামকানাই দাসের বড় বোন সুষমা দাসের সঙ্গীত প্রতিভা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।

বিগত ১৩৮০ সাল পর্যন্ত তিনি নিজ গ্রামেই থাকেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি সিলেট বেতারে গান গাওয়া শুরু করেন এবং পাশাপাশি বিভিন্ন অনুষ্ঠান মঞ্চে গান করারও সুযোগ সৃষ্টি হয় তাঁর। বর্ষবরণ, বসন্ত উৎসব সহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন তিনি। বাংলাদেশ বেতারে তিনি প্রায় সহস্রাধিক গান পরিবেশন করেন।

জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ এর সভাপতি বেগম সুফিয়া কামালের আমন্ত্রনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে জাতীয় রবীন্দ্র সম্মেলনের অষ্টম বার্ষিক অনুষ্ঠান মালায় লোকগীতি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ পূর্বক রাধারমনের গান পরিবেশন করেন সুষমা দাস।

ঢাকার শিল্পকলা কর্তৃক আয়োজিত “লোকসঙ্গীত উৎসব” অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন তিনি এবং   বিগত ২০১১ সালের ১৬ ই মার্চ ছায়ানট কর্তৃক আয়োজিত ওয়াহিদুল হক স্মারক “দেশঘরের গান” অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন ছাড়াও অনুষ্ঠানে তিনি পিতা রসিক লাল দাস ও রাধারমণ দত্তের গান পরিবেশন করেন।

সুষমা দাস রাধা-রমন দত্তের গান, বাউল শাহ্ আবদুল করিমের গান, কালাশাহ্, দুর্বিন শাহ্, গীতিকবি গিয়াস উদ্দিন আহমদ, হাসন রাজা সহ বহু মরমী কবি ও সাধকের গান গেয়ে থাকেন।

১৪১৭ বাংলায় ভারতের কলকাতায় “বাউল ফকির উৎসব’’ এবং পরবর্তীতে কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষের আহব্বানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানটি উদ্বোধন করেন সুষমা দাস। সেই মঞ্চে দর্শকের অনুরোধে পরপর কয়েকটি রাধারমণের গান পরিবেশন করেন তিনি।

তিনি চার পুত্র ও এক কন্যার জননী তিনি। অবসর সময়ে তিনি পুত্র কন্যা ও নাতি নাতনীদেরকে নিয়ে গানে গানে মেতে থাকেন। বর্তমানে তিনি আখালিয়া হাওয়ালদার পাড়া, মজুমদারপল্লী, ১০নং ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত