বিনোদন ডেস্ক

০৪ আগস্ট, ২০১৬ ১৮:০৬

ফসিলসকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানালো মাইলস

কলকাতার ব্যান্ড ফসিলসকে ঢাকায় এসে অনুষ্ঠান করার আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশের ব্যান্ড মাইলস। মাইলসের শাফিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ উদার, চাইলে ফসিলস ঢাকায় এসে অনুষ্ঠান করতে পারে, সেটাকে তারা স্বাগত জানাবে।

নিজেদের ফেসবুক পেজে আপ্লোড করা এক ভিডিওবার্তায় ফসিলসের প্রতি এ আহ্বান জানিয়েছে মাইলস।

মাইলসের প্রধান ভোকাল শাফিন আহমেদ বলেন, "ভারত থেকে যেকোনো শিল্পী আমাদের এখানে এসে পারফর্ম করতে পারবেন। আমরা স্বাগত জানাব। আমি ফসিলসকেও বলছি, আপনারা চাইলে ঢাকায় গান গাইতে আসতে পারেন। ইউ আর ওয়েলকাম। আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না। ভারতের শিল্পীরা আমাদের দেশে অনেকেই কনসার্ট করতে আসেন। আমরা চিন্তাও করতে পারি না তাদের বাধা দেওয়ার।"

প্রসঙ্গত, ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘আজাদি কনসার্টে’ গান পরিবেশনের কথা ছিল মাইলসের। সেখানে রূপম ইসলামের ফসিলস ও সংগীতশিল্পী পাপনেরও গান গাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিশ্বকাপ চলাকালে মাইলসের সদস্যদের নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থেকে করা কিছু মন্তব্যকে কেন্দ্র করে মাইলসকে ‘ভারত-বিদ্বেষী’ আখ্যা দিয়ে ব্যান্ডটিকে ভারতে গান গাইতে দেয়ার তীব্র বিরোধিতা করেন পশ্চিমবঙ্গের ব্যান্ড দল 'ফসিলস' এর ভোকাল রূপম ইসলাম। এরপর ওই কনসার্টের আয়োজকরা মাইলস ও ফসিলস উভয় ব্যান্ড দলের অংশগ্রহণ বাতিল করেন।

ভিডিওবার্তায় শাফিন আহমেদ বলেন, "ফসিলস ব্যান্ডটির কাছ থেকে আমরা এ ধরনের কিছু প্রত্যাশা করিনি, যাঁদের অনেক দিন ধরে আমরা চিনি। তাঁদের যাত্রার শুরু থেকে তাঁরা মাইলসের অনেকখানি ভক্ত ছিলেন। কিন্তু তাঁরা এখন কতখানি ভক্ত আছেন, এটা আমি জানি না। তবে আমার মনে আছে, কলকাতার কোনো একটা হোটেলে তাঁদের প্রথম অ্যালবাম আমাদের হাতে দেওয়ার জন্য কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলেন। সম্মানের জায়গাটা এত তাড়াতাড়ি নষ্ট হবে কেন? আমাদের প্রোফাইলে আমরা কী লিখছি, এটা ভারত-বিদ্বেষ নয়, এটা আমাদের দেশপ্রেম"।

মাইসল ব্যান্ডের আরেক সদস্য মানাম আহমেদ বলেন, "আমি জানি না রূপমের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী? তাঁর চিন্তাভাবনার বিষয় কী রকম। সে যদি দেশপ্রেমের বিষয়টা ভারত-বিদ্বেষের সঙ্গে মেলায়, তাহলে তাঁর জ্ঞানের অভাব রয়েছে। ফেসবুক মানে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে শুধু বাংলাদেশের মানুষ নন, কলকাতার অনেক বাঙালি অনেকেই অনেক কিছু লেখেন। আমি নিজেও লিখেছি। আসলে গালি দিলে সেটা নিজের গায়ে লাগে। কারণ, আমরা সবাই বাঙালি। এক বাঙালি হয়ে আরেক বাঙালির পেছনে দৌড়ে লাভ নেই। আমরা দেশ নিয়ে যখন কথা বলছি, তখন দেশের অবস্থানটা অন্য রকম। যখন বাঙালি বাঙালি কাজ করছি, তখন বিষয়টা অন্য রকম। এ জায়গাটা বুঝতে হবে। আমরা দেশ হিসেবে অনেক ছোট হতে পারি। কিন্তু আমাদের মন ও মানসিকতা অনেক বিরাট। বাংলাদেশে আমরা কলকাতা, দিল্লি সব জায়গা থেকে শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠান করছি। যেখানে হয়তো আমরাও অংশগ্রহণ করছি না। কিন্তু আমরা আমাদের প্রোফাইলে কখনো লিখিনি ভারতের শিল্পীরা কেন আমাদের দেশে ঘন ঘন আসছেন? আমার দেশের সমস্যা নিয়ে আমরা কথা বলতেই পারি। আমাদের দেশের ক্ষতি হচ্ছে, এটা তো আমরা মানতে পারব না। বিবেক থেকে আমরা দুটো কথা বলতেই পারি।"

শাফিন আরো বলেন, “বিশ্বায়নের যুগে সংগীত আমরা সব জায়গায় করছি। কলকাতায় আমাদের ভক্ত রয়েছে। আজকে এ ঘটনার পর থেকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো ভক্ত-শ্রোতারা, যাঁরা দেখতে পেল না, শুনতে পেল না আমাদের গান। একটা ছোট বিষয়কে কেন্দ্র করে এ রকম হবে, এটা আশা করা যায় না। কিছুদিন আগেও ঢাকায় বড় ধরনের একটা প্রোজেক্ট হয়েছিল, যেটার নাম ছিল ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’, যেখানে রাশিয়া, ভারতসহ অনেক দেশ থেকে বড় শিল্পীরা এসেছিলেন। আবারও সেই প্রোজেক্টটা হবে। আমাদের মুক্ত মনের হতে হবে। কিন্তু আপনাদের মানসিকতা প্রমাণ করল যে ইউ আর নট ওপেন। ভারতের গুজরাটে বড় ভূমিকম্প হওয়ার পর দিল্লিতে একটা কনসার্ট হয়েছিল মাইলস ব্যান্ডের। আমরা আপনাদের দেশের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য কনসার্ট করেছি। কলকাতায় করেছি ‘কনসার্ট ফর পিস’।"

ফসিলস বাংলাদেশে সফরকালে শাফিন নিজে ফোন করে তাঁদের অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। ঘটনাটি মনে করিয়ে দিয়ে শাফিন বলেন, "ফসিলস যখন বাংলাদেশের একটি টিভি চ্যানেলে কনসার্ট করতে এসেছিলেন, তখন আমি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। তাঁকে বলেছিলাম, ঢাকায় আপনাকে দেখে ভালো লাগছে। মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে থাকতে হলে মানসিকতা বড় করতে হবে। আমি দুঃখিত এটা বলার জন্য যে আপনার মন মুক্ত না হলে আপনি সংগীত নিয়ে বড় হতে পারবেন না।"

মানাম আহমেদ বলেছেন, "ফসিলস যেটা করেছে, এটার জন্য আমরাই লজ্জা পাচ্ছি। আমি খুবই দুঃখিত রূপম। তুমি ছোট মনের পরিচয় দিয়েছ।"

আপনার মন্তব্য

আলোচিত