শাকিলা ববি

০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ২১:১২

‘রঙ্গের দুনিয়া’ বাউল সম্রাটের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন

বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জীবনভিত্তিক নির্মিত সিনেমা ‘রঙ্গের দুনিয়া’ দেশে মুক্তির আগেই ইংল্যান্ডের তিন শহরে মুক্তি পেয়েছে। মোক্তাদির ইবনে ছালাম নির্মিত চলচ্চিত্রটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য সে দেশে মুক্তি দিয়েছে বেঙ্গলি ফিল্ম ক্লাব ইউকে।

গত ৩, ৪ ও ১০-১১ সেপ্টেম্বর চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হবে লন্ডনের বলিয়ান সিনেমা হলে। বার্মিংহামের পিকাডেলি ও লুটনের গ্যালাক্সি সিনেমা হলে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হয়েছে ৩-৪ সেপ্টেম্বর।

‘রঙ্গের দুনিয়া’ সিনেমা এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর সাথে কথা হয় মোক্তাদির ইবনে ছালামের।

র্দীঘদিন নিজ জেলা হবিগঞ্জে মঞ্চ চর্চা করার পর পরিচালক আশরাফুল আলম রিপনের হাত ধরে মিডিয়া জগতে পা রাখেন মোক্তাদির ইবনে ছালাম। এর পর দেশের প্রায় ২৫ জন গুণি নির্মাতার সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন বিভিন্ন নাটকে। ২০০৭ সাল থেকে পরিচালক হিসেবে নাটক নির্মান করেন তিনি। এ পর্যন্ত ১৫টি একক নাটক, বিভিন্ন টেলিফিল্ম, ডকুফিল্ম, শর্টফিল্ম, তথ্যচিত্র, টিভি বিজ্ঞাপন নির্মাণ করেছেন নিয়মিত।

দেশের বাইরে ছবি মুক্তি ও দর্শক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে মোক্তাদির বলেন, ‘ইউরোপের বিভিন্ন দেশে (বিশেষ করে ইউকে) বাউল আব্দুল করিমের অসংখ্য ভক্ত আছেন। প্রবাসীদের বিনোদনের কথা চিন্তা করেই দেশের বাইরে ছবি মুক্তির সিদ্ধান্ত নেই। ইউকের দর্শকরা খুব ভাল রেসপন্স করেছেন। লন্ডন থেকে প্রচুর ফোন পাচ্ছি, সবাই প্রসংশা করছেন।’

নির্মাতা হিসেবে প্রথম ছবির সফলতা নিয়ে শতভাগ আশাবাদী মোক্তাদির ইবনে ছালাম। তবে কোন বানিজ্যিকভাবে চিন্তা করে নয় একান্তই আব্দুল করিমের প্রতি নিখাদ ভালোবাসা থেকে সিনেমাটি নির্মান করেছেন বলে জানান।

বলেন, ‘বর্তমান বাজারে যেখানে একশন ছবি তথা তামিল ছবির আদলে সিনেমা নির্মাণের প্রতিযোগিতা চলছে। এ সময় কোন কিংবদন্তির জীবনি নিয়ে ছবি নির্মান করা যথেষ্ট সাহসের কাজ। এটা আমি করতে পারতাম না যদি না দুই প্রবাসী ভাই ছবির প্রযোজক গোলাম আনিস চৌধুরি ও মুকিত চৌধুরী এগিয়ে না আসতেন।’

মোক্তাদির বলেন, ‘ এই সিনেমা শুটিং স্পট থেকে হল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন ছিল কিন্তু আমার সুভাগ্য আমি একঝাঁক সহকর্মী পেয়েছিলাম যারা প্রেম দিয়ে কাজটা করেছেন। তাছাড়া নতুন নির্মাতাদের সার্বিক বিষয়েই অনেক প্যানা নিতে হয়, আমারও হয়েছে। একা একা কান্না করেছি, পরক্ষণেই সহকর্মীদের উৎসাহ আবার নতুন উদ্দম্যে শুরু করেছি।’

তিনি হলে সিনেমা চালানোর প্রক্রিয়াকে বেশি কঠিন বলে মনে করেন। বলেন, ‘এ ধরনের কাহিনী নির্ভর সিনেমাতে মারামারি, নাচানাচি নেই। তাই এসব সিনেমা হলে চালানো রিস্ক মনে করেন হল মালিকরা। আমাদের একটা ধারনা আছে যে ছবিতে মারামারি, নাচানাচি, নাই সে ছবি দেখতে দর্শক আসে না।’

মোক্তাদির আক্ষেপ করে বলেন, 'ছবি নির্মান শুরুর পর অনেক গুণি মানুষও প্রশ্ন করেছেন-প্রথম ছবি একজন বাউল সাধকের জীবনের গল্প নিয়েই কেন করলেন? এই বাজারে এসব চলে নাকি মিয়া ? টাকা পুরাই জলে দিলে।’

তবি পিছু হটেননি মোক্তাদির। বলেন- যে মানুষটার গান শুনে বড় হয়েছি তাকে নিয়ে ছবি বানাতে এতো হিসেব কষলে চলবে না।'

এই পরিচালক জানান, তার করিম প্রেমের শুরু যখন তিনি মঞ্চে নাটক করা শুরু করেন তখন থেকে।

বলেন- ‘সেই ১৯৯২ সালে যখন মফিজ ভাই (মহি উদ্দিন মফিজ), মুক্তা ভাইর( সৈয়দ মুফাজ্জেল সাদাত মুক্তা) হাত ধরে থিয়েটার অঙ্গনে পা দিলাম তখন ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এই গানটি কোরাসে গাইতেন থিয়েটারের বড় ভাইরা। তখন থেকে আব্দুল করিমের গানের প্রতি আমার প্রেম জন্মায়। মিডিয়াতে যখন নাটক করা শুরু করলাম তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল যদি সিনেমা বানাই আমার প্রথম সিনেমা হবে বাউল সম্রাট আব্দুল করিম কে নিয়ে।’

আগামীতে আরও ভঅলো ভালো ছবি নির্মানের আশা ব্যক্ত করে মোক্তাদির বলেন, ‘সৃষ্টির নেশা হল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আসক্তি। এ আসক্তি চলমান আছে আমার ভিতরে। যতদিন দেহে শ্বাস চলবে ততদিন সিনেমা নির্মান করে যাব। ইতিমধ্যে সিলেটের আরেক লিজেন্ট রাধারমন কে নিয়ে ছবি নির্মানের পরিকল্পনা করছি।’

সিলেটের ছেলে মোক্তাদির বলেন, ‘সিলেট বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিড়ে আছে অসংখ্য গল্প ভান্ডার। এ গল্প গুলো শুধু সিলেট নয় বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের একটা বিশাল অংশ জুড়ে আছে। আমি প্রতিটি গল্প তুলে ধরতে চাই আমার স্যালুলয়েডের ফিতায়।’

তবে এমন সিনেমা তৈরির জন্য প্রয়োজকের আরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন- ‘এ ধরনের গল্পে সিনেমাতে নান্দনিকতা আনতে হলে ক্রিয়েটিভ একটি টিম সহ প্রযোজক বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। এক্ষেত্রে বিত্তবানদের পাশাপাশি সরকারি পৃষ্টপোষকতা থাকলে সিনেমা তৈরি করা আরো সহজ সাধ্য হয়। প্রযোজকদের সতস্ফূর্ততা থাকলেই আমরা এধরনের ছবি বানাতে আগ্রহ পাব।’

শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে প্রেক্ষাগৃহ পর্যন্ত সিনেমাটিকে পৌছাঁনোর জন্য পরিচালক মোক্তাদির ইবনে সালাম কৃতজ্ঞতা জানান ছবির দুই প্রযোজক গোলাম আনিস চৌধুরী ও মুকিত চৌধুরী, চিত্রনাট্যকার সিদ্দিকী হারুন, সকল কলাকুশলী, তার ভাই-বোন, বন্ধু ও স্ত্রী লুবনা মোক্তাদির সহ অসংখ্য করিম ভক্তদের প্রতি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত