ফারিয়া রহমান

০৩ আগস্ট, ২০১৫ ১৩:০৮

আতাহার টিটো : সঙ্গীতে এক অভিমানীর আবারও ফিরে আসা!

আতাহার টিটো নাম শুনলেই সেই ঝাঁকড়া চুলের ছেলেটির কথা মনে পড়ে যায়। কাঁধে গিটার, গিটারের কর্ডে হাত রেখে যে একদিন শুনিয়েছিলেন ‘আলী আলী’।

রক্ষণশীল এক পরিবারে জন্ম নিয়েও যার ধ্যান-ধারণা ছিলো কেবলই সঙ্গীতকে ঘিরে। ছোটবেলা থেকেই যার স্বপ্ন কেবল গানের মানুষ বলে নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরা। সপ্নবাজ এই তরুণ এক সময় স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। দিনের পর দিন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর সঙ্গীত সাধনায় কেটেছে যার জীবনের অনেকটা সময়। একটি প্ল্যাটফর্ম তার চাই ই চাই।

কণ্ঠে ছিলো জোর, বুকে ছিলো সাহস সেই সাথে ভয়কে জয় করার অদম্য ঐশ্বরিক ক্ষমতা। সুযোগটা এসে গেলো ২০০০ সালে। Benson & Hedges Star Search-2000 এর লাখ লাখ প্রতিযোগীর মধ্য থেকে সবাইকে পেছনে ফেলে আতাহার টিটো সেরা দুটি পদক একাই নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন। সেরা ভোকালিস্ট ও সেরা একক শিল্পী হিসেবে দু’টি পদক তিনি পপ সম্রাট আজম খানের হাত থেকে গ্রহণ করেন সে সময়।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অসংখ্য সলো গানে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন টিটো। আলী আলী, শুভ্র সুনীল সন্ধ্যা বেলা, গোলাপ নেবে বন্ধু, অভিমানী তুমি, অসহায় জীবন, বন্ধু পরাণ বাধি, দুঃখের মাঝে, নিশ্চুপ রাত সহ অসংখ্য জনপ্রিয় বাংলা গান দিয়ে আমাদের সঙ্গীত ভান্ডার সমৃদ্ধ করেছিলেন।

এ পর্যন্ত তার একক এ্যালবামের সংখ্যা ৪টি, মিক্সড এ্যালবামের সংখ্যা ৯০ এর অধিক। সব মিলিয়ে নিজের গানের সংখ্যা ৮০০ এর উপরে।

কথা হচ্ছিলো আতাহার টিটোর সঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছিলাম কেন এখন সঙ্গীত থেকে দূরে সরে আছেন? জবাবে তিনি বলেছিলেন, কিছু কথা তোলা থাকুক যেটি আর নতুন করে এখন আর বলতে চাইছি না। তবে আমি সঙ্গীতে আবারও নিয়মিত হতে যাচ্ছি।

আতাহার টিটো জানান এ মাসের এক তারিখে অর্থাৎ পহেলা অগাস্ট তিনি নতুন একটি ব্যান্ড গড়েছেন যার নাম “ চাষা”। ব্যান্ডের নাম কেন চাষা এই প্রশ্ন করলে টিটো বলেন, “Of the People, By the People, For the People” – আব্রাহাম লিংকন-এর মহান বাণীতে সহমত পোষন করে, সন্মানের সাথে ধারণ করি সবসময়। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদেরও আরেকটি চাষাবাদের ইচ্ছে…… “Of the Chasha (চাষা), By the Chasha (চাষা), For the Chasha (চাষা)”।

তিনি আরও বলেন সমাজের উচ্চ শ্রেণির জন্য সবাই গান কিন্তু আমি আমাদের সমাজের নির্দিষ্ট কিছু শ্রেণির জন্য গাইতে চাই। তিনি বলেন, প্রথমত আমরা মস্তিষ্কে, দেহে, জমিনে চাষাবাদ করি। মস্তিষ্কে চাষাবাদ করেই দেহে শক্তি সঞ্চার করি। পরক্ষণে জমিনে চাষাবাদে নেমে যাই। আমরা মস্তিষ্কে চাষাবাদ করে চিন্তা-চেতনা উর্বর করবো এবং আমরা আমাদের নিজেদের জমিনেই ফসল ফলাতে চাই। স্বনির্ভর হবো, অন্য দেশ থেকে আমরা খাদ্য আমদানী করবো কেন? চলো চাষা হই, চলো মাঠে যাই। আমি ফসল ফলাতে চাই। আমি নিজেকে চাষা বলে মনে করি। আমি গানের জন্য শুধু শিল্পী হতে চাই না, দেশের জন্য, মানুষের জন্য শিল্পী হতে চাই।

আমাদের বাংলা ব্যান্ডের নামকরণগুলো যদি আমরা খেয়াল করি তাহলে দেখতে পাই অধিকাংশ ব্যান্ডগুলোর নামকরণ হয়েছে ইংরেজি শব্দ থেকেই। সেখানে আতাহার টিটো নিজের ব্যান্ডের নাম রেখেছেন চাষা। প্রচলিত ধারার নামের সাথে হয়তো ‘চাষা’ শব্দটি যায়না তবে মস্তিস্কে গানের চাষাবাদ যিনি করছেন, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য যিনি গান করতে চান সর্বোপরি লালন দর্শনে বিশ্বাসী যেই মানুষ তার ব্যান্ডের নাম চাষা হবে হয়তো এটাই স্বাভাবিক।

দীর্ঘ সময় ধরে রক, পপ, আধুনিক গানের পরে হঠাৎ ব্যান্ড গঠন করার পেছনে কাদের অবদান রয়েছে এই প্রশ্ন করলে আতাহার টিটো বলেন, আমার শ্রোতা আমার প্রাণ। তাদের ভালোবাসায় আবারও ফিরে আসা। টিটো আরও বলেন একজনের নাম এখানে না বললেই নয়। তিনি ড্রিম ডিউ এন্টারটেইনমেন্ট এর সত্ত্বাধিকারী মোছাদ্দিক উজ্জ্বল। যেই মানুষটি সম্পর্কে নতুন করে কিছুই আর বলার নেই। প্রতিনিয়ত আমাকে আবারো গানের জগতে ফিরিয়ে আনতে এই মানুষটি ভীষণভাবে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন।

তিনি বলেন, একজন শিল্পীর দায়বদ্ধতা অনেক। দেশের প্রতি, সমাজের প্রতি এবং সমাজের মানুষের প্রতি। আমি মনে করি অস্ত্র নয়, সঙ্গীত দিয়েই জয় করা যায় পৃথিবী। যুদ্ধের ময়দানে বারুদের পোড়া গন্ধ নয়, কামানের শব্দ নয়। এই পৃথিবী আমাদের বাসযোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে যুদ্ধ নয়, সঙ্গীত ই হোক একমাত্র বাঁচার হাতিয়ার। সঙ্গীতের মূর্ছনার শব্দে ভরে যাক পৃথিবী; গোলা গুলির শব্দে নয়।

তার শ্রোতাদের আশাবাদ অতীতের মতন আবারও আমাদের বাংলা গানের ভান্ডারকে নিজের সুরেলা কণ্ঠে সমৃদ্ধ করবেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত