সিলেটটুডে ডেস্ক

২৩ নভেম্বর, ২০১৯ ১৩:৪৫

ইলিয়াস কাঞ্চনের পাশে শিল্পীসমাজ

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। ছবি: সংগৃহীত

নিরাপদ সড়কের দাবিতে গত আড়াই দশক ধরে আন্দোলন করা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের পাশে দাঁড়িয়েছে শিল্পীসমাজ।

ইলিয়াস কাঞ্চনের ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন এখন জাতীয় স্লোগানের প্রতিরূপ। নিরাপদ সড়কের এ দাবিতে একাত্ম হয়েছে দেশের অধিকাংশ লোকই। তার দাবিতে সাড়া দিয়ে সরকার সম্প্রতি সড়ক পরিবহন আইন প্রণয়ন করেছে। নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে গত কয়েকদিন বাংলাদেশের বাস-ট্রাক শ্রমিকরা 'কর্মবিরতি' পালন করেছেন। কর্মবিরতি চলাকালে শ্রমিকদের বিভিন্ন কর্মসূচি থেকে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের নেতা ও চলচ্চিত্র তারকা ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবিকে হেয় প্রতিপন্ন করার অভিযোগ উঠেছে।

ইন্টারনেট-ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইলিয়াস কাঞ্চনের ছবি সম্বলিত ব্যানার টাঙিয়ে কিংবা কুশপুত্তলিকা তৈরি করে সেখানে জুতার মালা দেয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় শিল্পীসমাজ পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চনের।

১৯৯৩ সালের ২২ অক্টোবর নব্বই দশকের তুমুল জনপ্রিয় নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের একটি ছবির শুটিং দেখতে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন। শোকার্ত ইলিয়াস কাঞ্চন এরপর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আর সিনেমাও করবেন না। একসময় শুরু করলেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলন। সাড়া জাগানো অনেক ছবির অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন সেই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এখনো। এভাবে কেটে গেছে ২৫ বছর বেশি সময়। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে এখন প্রতিবছর পালিত হয় নিরাপদ সড়ক দিবস। সংগঠনর কর্মকাণ্ড জাতিসংঘেও প্রশংসিত হয়েছে। স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একুশে পদক পেয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে অগণিত ভক্তসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারকারা। বিস্ময় নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে এ কেমন আচরণ! তিনি তো সবার ভালোর জন্যই আন্দোলনটা শুরু করেছেন, বছরের পর বছর চালিয়ে নিয়ে গেছেন।

চিত্রনায়ক রুবেল বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে যাচ্ছেন ইলিয়াস কাঞ্চন সাহেব। তার দাবি সবারই দাবি। তার এই কাজ দেশব্যাপী প্রশংসা পেয়েছে। তার সঙ্গে দেশের মানুষ রয়েছে। তাকে নিয়ে যেসব মানুষ এ ধরনের পোস্টার তৈরি করেছে, তারা নোংরা মনের পরিচয় দিয়েছে। আমি এ ঘটনার প্রতিবাদের পাশাপাশি তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘আমরা কাঞ্চন ভাইয়ের পাশে আছি। তিনি যেভাবে চাইবেন, আমরা তার সঙ্গে আছি। যারা নোংরামি করছে, তারা দেশের ও সমাজের শত্রু। শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাই। কাঞ্চন ভাই দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে সচেতন করে আসছেন, এটা আমাদের গর্বের বিষয়। তার এই সুন্দর কাজের সঙ্গে শিল্পীরা থাকবেন এবং শিল্পী সমিতি আছে।’

অভিনেতা ইমন বলেন, ‘কাঞ্চন ভাইকে নিয়ে যারা কটূক্তি করছে, আমি আমার জায়গা থেকে তাদের ধিক্কার জানাই। কারণ, কাঞ্চন ভাই আমাদের পথপ্রদর্শক, সিনিয়র অভিনেতা। নিরাপদ সড়ক প্রত্যেক মানুষের অধিকার। কাঞ্চন ভাইয়ের স্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এরপর থেকে তিনি সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ভূমিকা রেখে আসছেন। আমাদের দেশে বড় গাড়িগুলো রাস্তায় নামলে প্রাইভেট কার, রিকশা—এগুলোকে কিছুই মনে করে না। আমি ফেসবুকে দেখেছি, কাঞ্চন ভাইকে নিয়ে বাজে ছবি পোস্ট করা হচ্ছে। আমি মনে করি, কাঞ্চন ভাইয়ের সঙ্গে আমাদেরও একাত্মতা প্রকাশ করা উচিত।’

সাইমন সাদিক বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের আইন সংশোধন করার কথা বলছেন। কেন আইন সংশোধন করতে হবে। আমরা নিজেরা সংশোধন হলেই তো হয়। আমরা আইন অমান্য করব না। তা হলে তো সংশোধন করার দরকার নেই বলে মনে করছি। সারা দেশের মানুষ তাকে সমর্থন দিচ্ছেন, দেবেন। কারণ, আমরা সবাই নিরাপদ সড়ক চাই। এটা নিয়ে বিরোধ করার কোনো কারণ নেই। শ্রমিকদের ফিরে আশা উচিত। যারা ভুল বোঝাচ্ছে, তাদের শনাক্ত করা উচিত।’

এ ছাড়া অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস, পরিচালক গাজী জাহাঙ্গীর, অপূর্ব রানা, বজলুর রাশেদ চৌধুরী প্রমুখ ফেসবুকে এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা, প্রতীক্ষার পর বিভিন্ন মহলের মতামত, অনেক গবেষণা ও ব্যাপক আকারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সবাই পেয়েছে “সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮”। যুগোপযোগী এ আইন পাস হওয়ার পর সাধারণ জনগণ ও সচেতন মহলের সবাই আইনের প্রতি সমর্থন দিয়েছে। সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর ১ নভেম্বর থেকে হওয়ার কথা থাকলেও আইন সম্পর্কে সবাই অবগত না থাকার কারণে ১৪ দিন সময় দেওয়া হয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ চালক, মালিক, যাত্রী, পথচারী—সবার আইন সম্পর্কে অবহিত হওয়া প্রয়োজন। এরপর গত তিন দিন আগে থেকে যখন আইনটি প্রয়োগ শুরু হলো, ঠিক সেই সময় আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম চারদিকে এক নৈরাজ্য পরিস্থিতি। আমার প্রশ্ন হলো, কেন এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো?’

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘এসব করে কি কোনো কিছু রোধ করা যাবে? প্রতিবাদের ভাষা কি এসব হতে পারে? পৃথিবীতে যত বড় সমস্যাই হয়ে থাকে, তার সুষ্ঠু সমাধান রয়েছে। এর জন্য সব পক্ষ থেকে আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উপায় আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আইনে কোনো অসংগতি থাকলে তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করতে হবে। এসব না করে আইনটি কার্যকর হওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে আমাকে হেনস্তা করা হচ্ছে; যা অতীতেও করা হয়েছে। অথচ আমি সব সময় বলে আসছি, এ আইন করা হয়েছে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য, সড়কে দুর্ঘটনা কমানোর জন্য। জেল বা জরিমানা আদায়ের জন্য নয়।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত