বিনোদন ডেস্ক

২৯ এপ্রিল, ২০২০ ১৯:১৪

শিল্পীদের আয়ু আরো দীর্ঘ হওয়া উচিত : রোকেয়া প্রাচী

যৌথ প্রযোজনার ‘ডুব’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন শক্তিমান অভিনেতা ইরফান খান। ছবিতে তাঁর স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন বাংলাদেশের গুণী অভিনয়শিল্পী রোকেয়া প্রাচী। ইরফানের অকালমৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না তিনি।

কোলন ইনফেকশন নিয়ে গতকাল মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধিরুবাই আম্বানি হাসপাতালে ভর্তির কয়েক ঘণ্টা পর মারা গেছেন ব্যতিক্রমী ধারার বলিউড-হলিউড অভিনেতা ইরফান খান। প্রিয় সহশিল্পীর মৃত্যুর খবরে হতবাক রোকেয়া প্রাচী।

ইরফান খানের মৃত্যুর খবর শুনে বিচলিত হয়ে পড়েন রোকেয়া প্রাচী। জানান তাঁর সঙ্গে কাজ করার স্মৃতি, অভিজ্ঞতা। ইরফান খানের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছেন বলেও জানান তিনি।

রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘মেধা ও মননে অসাধারণ শিল্পী ছিলেন ইরফান খান। তাঁর সঙ্গে কাজ করতে পারা বড় আনন্দের ছিল। অসাধারণ একটি অভিজ্ঞতা ছিল। দাপুটে একজন অভিনেতা। তাঁর সঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু শিখেছি। এ রকম অভিনেতা বেঁচে থাকলে ভালো হতো। মানুষ হিসেবে যেমন অসাধারণ ছিলেন, তেমনি অভিনেতা হিসেবে ভীষণ পেশাদার ছিলেন। নিজের কাজটি শতভাগ দায়িত্ব নিয়ে করতেন। তাঁর ডায়েরিতে ফাঁকিবাজি ছিল না। শট দিয়ে নিজে সন্তুষ্ট না হলে বারবার দিতেন। খুব দরদের সঙ্গে অভিনয় করতেন। সহশিল্পী হিসেবে কো-অপারেটিভ ছিলেন। এ রকম একজন শিক্ষিত অসাধারণ মাপের অভিনেতা যখন থাকেন, তখন আরেকজন শিল্পীর কাজ সহজ-সাবলীল হয়। তাঁর অকালমৃত্যু গোটা বিশ্বকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে গেল। ওপারে ভালো থাকবেন, এ কামনা রইল।’

রোকেয়া প্রাচী আরো বলেন, ‘ইরফান খানের মৃত্যু মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তাঁর মৃত্যুতে শুধু ভারতের ইন্ডাস্ট্রি নয়, গোটা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বঞ্চিত হলাম। হারালাম একজন শিক্ষককে।

বিজ্ঞাপন



আফসোস করে রোকেয়া বলেন, ‘সিনেমায় অনেক মিরাকল হয়। আমরা সিনেমায় দেখতে পাই, অনেক কঠিন অসুখ জয় করেও ফেরত আসে। এমন একজন অভিনেতা ইরফান খান, যিনি ক্যানসার জয় করে ফেরত আসলেও আসতে পারতেন। তবে তিনি আসলেন না। সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। শিল্পীদের আয়ু আরো দীর্ঘ হওয়া উচিত। খুব খারাপ লাগছে। শিল্পীর আয়ু কেন দীর্ঘ হচ্ছে না! মানুষ পৃথিবীতে আসে বিদায় নেওয়ার জন্য।’

‘ডুব’ চলচ্চিত্রে ইরফান খান, রোকেয়া প্রাচী ছাড়াও অভিনয় করেছেন নুসরাত ইমরোজ তিশা ও পার্নো মিত্র।

২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর মুক্তি পেয়েছিল চলচ্চিত্র ‘ডুব’। বাংলাদেশ, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় একযোগে মুক্তি পায় ছবিটি। ছবিটি পরিচালনা করেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

পরিচালনার পাশাপাশি চলচ্চিত্রটির গল্প ও চিত্রনাট্য করেছেন ফারুকী। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছে বাংলাদেশের জাজ মাল্টিমিডিয়া, ভারতের এস কে মুভিজ ও ইরফান খান ফিল্মস। প্রযোজনার পাশাপাশি ছবিটিতে অভিনয় করেন ইরফান খান।

কোলন ইনফেকশন নিয়ে গতকাল মুম্বাইয়ের কোকিলাবেন ধিরুবাই আম্বানি হাসপাতালে ভর্তির কয়েক ঘণ্টা পর মারা গেছেন ব্যতিক্রমী ধারার বলিউড-হলিউড অভিনেতা ইরফান খান। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ছবিতে অভিনয় ও তাঁর প্রতি বিশ্বাস রেখে বিনিয়োগ করেছিলেন ইরফান খান। সকালে উঠেই তাঁর মৃত্যুর খবর যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না ফারুকী। নিজের ফেসবুকে লেখেন, ‘অবিশ্বাস্য খারাপ খবর দিয়ে দিনটা শুরু হলো।’

২০১৬ সালের মার্চ মাসে ছবির শুটিং শুরু হয়। চলচ্চিত্রটির মূল শুটিং হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেট ও ঢাকায়। শুটে অংশ নিতে ২০১৬ সালের ১৭ মার্চ বলিউড ও হলিউড চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ইরফান খান ভারত থেকে ঢাকায় আসেন। ইরফান খান তখন জানিয়েছিলেন, ফারুকীর গল্পটি পড়ার পর তিনি চলচ্চিত্রটির ব্যাপারে আগ্রাহী হন। তিনি ফারুকীর পরিচালনা, স্টাইল ও কাজের ধরন দেখে বিস্মিত হয়েছেন। তাঁর কাজ আলাদাভাবে মানবিক দিক তুলে ধরে, যা তাঁকে সবার চেয়ে আলাদা করেছে।

গত শনিবার ইরফান খানের মা সাইদা বেগম (৯৫) মারা যান। লকডাউনের কারণে তিনি মায়ের শেষকৃত্যে সশরীরে অংশ নিতে পারেননি। তবে ভিডিওকলে অংশ নিয়েছিলেন। ইরফানের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে বিশ্ব বিনোদন অঙ্গনে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত