ডা. মো. শফিউল ইসলাম খালেদ

১৮ জুলাই, ২০২০ ১৬:২২

শিশুদের বিষণ্ণতা, অভিভাবকদের করণীয়

শিশুকালে রাগ, দুঃখ, অভিমান এইসব আবেগ বেড়ে ওঠা স্বাভাবিক ধাপ যা বয়েস বাড়ার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে ছলে আসে। কিছু কিছু শিশুর মধ্যে এই আবেগগুলো দীর্ঘস্থায়ী বা এতটাই তীব্র হয় যে এর নেতিবাচক প্রভাব তাঁদের মানসিক ও চারিত্রিক স্বাস্থ্যের ওপর পরে যা পরবর্তী জীবনে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিশুদের অবসাদ যথেষ্ট চিন্তার কারণ। অবসাদের প্রভাব শিশুটির ভাবনা, চিন্তা, ব্যবহার এবং তাঁর জীবনের গুণমানের ওপর পড়ে।

এখনকার প্রতিযোগিতামূলক দুনিয়ায় শিশুদের ওপর পড়াশুনা ও তাঁর বাইরের ক্রিয়াকলাপে সাফল্যের জন্য অহেতুক চাপ সৃষ্টি করা হয়। বাবা-মা এবং শিক্ষকরা প্রত্যেকটা শিশুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে উপেক্ষা করেন এবং সব শিশুকেই কঠোর নিয়মাবলী আর সমান মাপ দণ্ড দিয়ে বিচার করেন। অনেক শিশুই এই ধরনের চাপ নিতে পারে না। যেহেতু তাঁরা দিনের বেশিরভাগ সময়ই স্কুলে বা বাড়িতে পড়াশুনা করে কাটায়, শিশুদের মধ্যে অবসাদের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।

মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরাও। সবথেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য হল মাত্র কয়েক মাস বয়সের শিশুদেরকেও বিষণ্ণ হতে দেখা যায়। অনেক সময় দেখা যায় যে অভিভাবকরা বুঝতেই পারেন না শিশুদের সাধারণ দুঃখ বা বদমেজাজ এবং শৈশবকালীন অবসাদের কারণগুলো। এসব লক্ষণ কিন্তু মানসিক অবসাদের কথাই ব্যক্ত করে। কিন্তু বাবা-মা এর বুঝতে পারার সামান্য অক্ষমতার জন্য কিছু শিশুদের মধ্যে শৈশবকালীন অবসাদ বিনা চিকিৎসায় থেকে যায়। যা পরবর্তী জীবনে বিভিন্নরকম মানসিক স্বাস্থ্যের জটিলতা সৃষ্টি করে

গবেষণায় দেখা গেছে, যখন একটি শিশু মানসিক অবসাদের মধ্যে দিয়ে যায়, তখন সে বুঝে উঠতে পারে না তার সঙ্গে কি যা হচ্ছে তার কারণ হল মানসিক আঘাত। যেখানে প্রাপ্তবয়স্কদের একটা ধারণা থাকে এ অবসাদ সম্পর্কে। প্রাপ্তবয়স্ক এবং শৈশবকালীন অবসাদের ভেতরকার পার্থক্য মূলত এখানেই। আর প্রতিটি অভিভাবকদের অবশ্যই এ ব্যাপারে জানা উচিত।

আপনার শিশুটি প্রায়শই বিষণ্ণ ও অন্তর্মুখী ব্যবহার করছে তাহলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে সে হয়তো নির্দিষ্ট কিছু শৈশবকালীন মানসিক অবসাদের লক্ষণ প্রকাশ করছে, যা একেবারেই উপেক্ষা করা ঠিক হবে না আপনার জন্য। তাই সঠিক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে জানতে হবে শিশুদের বিষণ্ণ ও অন্তর্মুখী অবসাদের লক্ষণ গুলো সম্পর্কে। আসুন জেনে নেই শিশুদের বিষণ্ণ বা অবসাদের লক্ষণগুলো কী:

আগ্রহের ঘাটতি
শিশুকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে যেতে চাইছেন বা মজাদার কোনও কাজ করতে চাইছেন এসময় আপনার সন্তান তা মানা করে দেয় এবং সারাদিন নিজের ঘরেই কাটাতে চায়, তাহলে বুঝবেন সেটা বিষণ্ণতার লক্ষণ।

আক্রমণাত্মক
যদি আপনার শিশু তার স্বভাবের বাইরে গিয়ে আক্রমণাত্মক ব্যবহার ও অতিরিক্ত রাগের বহিঃপ্রকাশ করে তবে তা শৈশবকালীন অবসাদের লক্ষণ হতে পারে।

উদাসীনতা
বিষাদগ্রস্ত শিশুরা সাধারণত, আনন্দদায়ক ঘটনাগুলি থেকে বা তার মা-বাবার স্নেহ-ভালবাসার অভিব্যক্তির থেকেও উদাসীন থাকে।

মূল্যহীনতা বোধ
যদি আপনার শিশু প্রায়শই বলতে থাকে, ‘আমাকে কেউ ভালবাসে না’ বা এমনি কিছু কথা। তবে এটি একটি লক্ষণ হতে পারে।

খারাপ ফল
আপনার শিশু হঠাৎ করেই স্কুলে খারাপ ফল করছে, এটি শৈশবকালীন অবসাদের একটি লক্ষণ। কারণ, অবসাদ শিশুকে অন্যমনস্ক করে দেয়, একাগ্রতা ও স্মৃতিশক্তির দক্ষতা বিঘ্নিত করে।

একটানা অবসাদ
যদি হঠাৎ করেই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেয়ার পরেও আপনার সদা প্রাণচঞ্চল শিশুটির মধ্যে অত্যন্ত ক্লান্তি দেখা দেয়, তাহলে এটি বিষণ্ণতার লক্ষণ হতে পারে।

ক্ষুধামন্দা
ক্ষুধামন্দা, এটি হঠাৎ করেও হতে পারে। এটিও অবসাদের লক্ষণ হতে পারে। এবং এটি বলা খুবই মুশকিল কারণ বেশিরভাগ শিশুরাই ঠিকঠাকভাবে খাওয়ার ব্যাপারে খুবই খামখেয়ালী হয়ে থাকে।

নিজেকে গুটিয়ে নেয়া
যদি হঠাৎ আপনার শিশু, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করা বন্ধ করে দেয় বা যদি লোকদের সঙ্গে মেলামেশা করতে না চায় তবে এটিও একটি শৈশবকালীন অবসাদের লক্ষণ।

অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুর মতো মিশে বেশি করে সময় কাটানো। বন্ধু-আত্মীয়দের সঙ্গে ভিডিয়ো কলে কথা বলানো। বাড়ির মধ্যে বাগানে, ছাদে, প্রকৃতির সঙ্গে শিশুদের নিয়ে সময় কাটানো। শুধু তাই নয়, কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে শিশুদের ইচ্ছেকে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।

ডা. মো. শফিউল ইসলাম খালেদ: এসোসিয়েট প্রফেসর, সাইকিয়াট্রি বিভাগ,জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত