নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ ফেব্রুয়ারি , ২০২২ ২২:৪৫

এসো বসন্ত, এসো প্রেম

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এদিন ঋতুরাজ বসন্তেরও প্রথমদিন। এই দুই উপলক্ষ্যে সিলেটের চা বাগানে বাসন্তি সাজে সজ্জিত হয়ে তরুণ-তরুণীদের ভিড়

শীত কিছুটা কমেছে। খসে পড়েছে কুয়াশার ঘোমটা। পাতা ঝরা দিন মনে করিয়ে দিচ্ছে, বসন্ত এসে গেছে। এসেছে বাঙালির ঋতুরাজ।

পলাশ-শিমুলও ফুটছে নিশ্চয়ই কোথাও। কোকিলও ডাকছে কী! সুনামগঞ্জের তাহিরপুর শিমুল বাগানে রীতিমত পর্যটকদের ভিড় লেগেছে। তবে নগরে এসবের দেখা মেলা ভার। ধুলোময় আর রুক্ষ্ম নগরে বসন্তের এমন রূপ মানুষের কাছে বড় অচেনা।

তবে এ ধুলিধূসর ঋতু কী করে বাঙালির প্রেমের ঋতু হয়ে গেল? গাছপালার মস্তক মুণ্ডিত করে দেয় যে ঋতু, যে কী না চৌচির করে দেয় ফসলের মাঠ- তা নিয়ে এত আদিখ্যেতাইবা কেন?- এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া কঠিন।

তবে বসন্তের সঙ্গে কামের একটি যুগসূত্র পাওয়া যায় পুরাণে। হিন্দু পুরাণে কামদেবের যে বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে- কামদেবের সঙ্গীরা হলো, একটি কোকিল, একটি হাতি, ভ্রমরের দল, বসন্ত ঋতু ও মলয় বাতাস। কামদেবের উৎসব হলো, হোলি বা বসন্ত।

এ দিকে প্রেমের সঙ্গে কামের একটি সম্পর্ক তো রয়েছেই। নইলে কী আর চন্ডিদাস লিখেন, ‘প্রতি অঙ্গ লাগি কাঁদে প্রতি অঙ্গ মোর’।

বসন্তকে এমন মহিমান্বিত করে তোলার পেছনে রয়েছেন এই কবিরাই। বাঙালির প্রধান কবিদের প্রায় সকলেই গেয়েছেন বসন্তের বন্দনাগীত। আরও অনেককিছুর মত এক্ষত্রেও অগ্রভাগে আছেন জোড়াসাঁকোর দেবেন্দ্রনাথের কনিষ্ট পুত্র। বসন্ত যখন জাগ্রত দ্বারে তখন রবীন্দ্রনাথের পরামর্শ- ‘আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো’। আর কবি নজরুল লিখেছেন, ‘আসিবে তুমি জানি প্রিয়, আনন্দে বনে বসন্ত এলো’।

বসন্ত নিয়ে এই আধিখ্যেতার একটি যুক্তি অবশ্য দিয়েছেন কবি মহাদেব সাহা। তার যুক্তি- ‘শীত, হিম, কুয়াশা, জড়তা মানুষকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। বসন্ত হচ্ছে তা থেকে মুক্তি, শীতের পর প্রথম আনন্দ শিহরণ।’

এই মুক্তি আর আনন্দ শিহরণের ঋতু শুরু হচ্ছে আজ। আজ পহেলা ফাল্গুন। আজ ‘বসন্ত এসে গেছে’ গাওয়ার দিন।
কেবল বসন্ত নয়, আজ ভালোবাসাবাসিরও দিন। ভ্যালেন্টাইন ডে। রাধাকষ্ণের দেশে, লাইলী-মজনু আর দেবদাস-পাবর্তীর দেশে, রাস উৎসব আর দোলপূর্ণিমার দেশে দূর দেশ থেকে ভালোবাসার বার্তা নিয়ে এদেশেও পেঁছে গেছেন সেনট ভ্যালেন্টাইন।

১৪ এপ্রিল ভালোবাসার দিন। গত বছরের মতো এবারও বসন্ত আর ভালোবাসা মিলেমিশে একাকার।

আজ বসন্তের রঙে ভালোবাসায় মাতবেন সবাই। বিশ্ববিদ্যালয়, পার্ক, রেস্টুরেন্ট কিংবা সড়ক আজ হয়ে উঠবে প্রেমকানন। ধুলোময় নগরও আজ রঙিন হয়ে উঠবে বর্ণিল সাজ আর উচ্ছ্বাসে।

তবে আজ হৃদয়হীন হয়ে উঠবেন ফুল দোকানিরা। ফুলের দাম বাড়িয়ে দিবেন কয়েকগুণ। রোববারও সিলেটে একটি গোলাপ ৪০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষও ‘ভ্যালেন্টাইন স্পেশাল মেনু’র বরাতে খাবারের দাম বাড়িয়ে দেবেন।

ব্যবসায়ীদের কাজ অবশ্য সবকিছুতেই ব্যবসা খোঁজা। তাত্ত্বিকদের কেউ কেউ অবশ্য বলে থাকেন, এই যে ভালোবাসা নিয়ে এতো মাতামাতি, ভালোবাসার দিবস, এসবে বাণিজ্যই নাকি মূল। তবে ভালোবাসায় এ সবে কিছু আসে যায় না। ভালোবাসায়ই গোলাপ ফুটবে। কোকিল ডাকবে।

তবে ভালোবাসার জন্য এত উতলা, এতটা উদগ্রীব থাকে মানুষ। যার জন্য তোলপাড় হৃদয়ে, এ পথ কিন্তু মোটেই কুসুমাস্তীর্ন নয়।

কহলিল জিব্রানের ‘প্রফেট’কে ভালোবাসা সম্পর্কে বলতে বলা হয়েছিল।
জবাবে ‘প্রফেট’ বলেছিলেন- ‘যখন ভালোবাসা তোমাদের ইশারায় ডাকে, তখন তাকে অনুসরণ কর, যদিও তার পথ কঠিন এবং আরোহণযোগ্য নয়। ...ভালোবাসা তোমাদের যেমন মুকুট পড়াবে তেমনি ক্রুশবিদ্ধ করবে তোমায়’।

রবীন্দ্রনাথ তো প্রশ্ন করেই বসেছেন- ‘ভালোবেসে যদি সুখ নাহি, তবে মিছে কেন ভালোবাসা। সে কি কেবলই যাতনাময়’।

যাতনা আছে। বেদনা আছে। আছে বিরহ। একইসঙ্গে ভালোবাসায় সুখও আছে, আছে অপার আনন্দ। ক্রমেই বিচ্ছিন্ন আর একলা হয়ে যাওয়ার সময়ে, আরেকজনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার আনন্দ কেবল প্রেমেই আছে।

চারদিকে এত হিংসা, এত সংঘাত, রাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রে, সম্প্রদায় থেকে সম্প্রদায়ে, মানুষে-মানুষে ক্রোধ, ঘৃণা আর বিদ্বেষের চর্চা থেকে মুক্তি এনে দিতে পারে কেবল প্রেম আর ভালোবাসা।

তাই ফাগুনের এই রঙিন দিনটা ভালোবাসার হোক, হোক প্রেমের। শিল্পী কবীর সুমনের সঙ্গে গলা মিলিয়ে গাওয়া যেতেই পারে,

‘এই প্রেমহীন সময়ে বলছি তোমায় ভালোবাসি

এই অন্ধকারেই চল জোনাকি ডেকে নিয়ে আসি।

এই পাথরে পাথর যুগে বলছি তোমায় চুমু খাও

বড় শুকিয়ে যচ্ছে সব, ঠোঁটে ঠোঁট আদরে ভেজাও।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত