সিলেটটুডে ডেস্ক

২৪ মার্চ, ২০২২ ১১:৪৫

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস আজ

বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস আজ। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘বিনিয়োগ করি যক্ষ্মা নির্মূলে, জীবন বাঁচাই সবাই মিলে’। যক্ষ্মা রোগের ক্ষতিকর দিক বিশেষ করে স্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও রোগ নির্মূলে সারাবিশ্বে দিবসটি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে।

বাংলাদেশের একটি মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা যক্ষ্মা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের যে ৩০টি দেশে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা বেশি, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

১৮৮২ সালের ২৪ মার্চ ডা. রবার্ট করু যক্ষ্মা রোগের জীবাণু মাইক্রোব্যাটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস আবিষ্কার করেন। যক্ষ্মারোগের জীবাণু আবিষ্কারের ১০০ বছর পর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ দিনটিকে স্মরণীয় করা ও যক্ষ্মারোগের চিকিৎসা সম্পর্কে গণসচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রতিবছর এ দিনটিকে বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

১৯৯৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার ও কিছু বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশে যক্ষ্মার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এছাড়া ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বর মাস থেকে জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যক্ষ্মা রোগ নির্মূল করার জন্য বিশ্ব নেতারা একমত হন। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সরকার, সুশীল সমাজ, স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি যক্ষ্মা নির্মূলে এবং যক্ষ্মার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম আরও জোরদার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ সরকার দেশের সব নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে যক্ষ্মা রোগ শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা দেওয়ার অঙ্গীকারবদ্ধ।

যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট একটি রোগ। এ রোগটি বেশিরভাগ ফুসফুসকে প্রভাবিত করে। তবে যক্ষ্মা শরীরের অন্যান্য অংশেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, এক্ষেত্রে এটি সংক্রামক নয়। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে যক্ষ্মা রোগ নিরাময় সম্ভব। তাই যক্ষ্মা হলে আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ খেলেই এর নিরাময় সম্ভব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিবেদন অনুসারে বিশ্বের ৩০টি দেশে এই রোগের প্রকোপ বেশি। এর মধ্যে যক্ষ্মা শনাক্ত ও মৃত্যুর দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। এ অবস্থায় গত বছর (২০২১ সালে) সারাদেশে ২৮ লাখ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যাতে ৩ লাখ ৭ হাজার ৪৪৪ জনের শনাক্ত হয় যক্ষ্মা। তবে ২০২১ সালে যক্ষ্মায় দেশে কতো জনের মৃত্যু হয়েছে তার পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

এরআগে ২০২০ সালে প্রতি লাখে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। অথচ এক দশক আগে প্রতি লাখে যক্ষ্মায় মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৪ জন। অর্থাৎ এই সময়ে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ কমেছে।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি (এনটিসিপি) থেকে এসব তথ্য জানা যায়। তথ্যানুযায়ী, দেশে গত বছর যক্ষ্মা শনাক্তের দিক দিয়ে শীর্ষে রয়েছে ঢাকা। আর সর্বনিম্ন ময়মনসিংহ।

বিভাগীয় পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ঢাকায় ৮০ হাজার ১৩৭, চট্টগ্রামে ৬০ হাজার ২২, খুলনায় ৩৯ হাজার ৭৯৬, রংপুরে ৩১ হাজার ৭০৮, রাজশাহীতে ২৯ হাজার ৩৩৫, সিলেটে ২৫ হাজার ৯১৮, বরিশালে ২১ হাজার ৪৮১ জন এবং ময়মনসিংহে ১৯ হাজার ৪৭ জনের যক্ষ্মা শনাক্ত হয়।

জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর ডা. খুরশীদ আলম জানান, যক্ষ্মা নির্ণয়ের জন্য বর্তমানে দেশে উন্নত ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির জিন এক্সপার্ট মেশিন, এলইডি মাইক্রোস্কোপি, লিকুইড কালচার, এলপিএ এবং ডিজিটাল এক্সরে রয়েছে। তিনি জানান, সারাদেশে ৪৯০টি জিন এক্সপার্ট মেশিনের মধ্যে করোনার সময়ে ২৩০টি স্থাপন করা হয়। আর মাইক্রোস্কোপ বসানো হয় ১ হাজার ১১৯টি। ১৭৮টি ডিজিটাল মেশিন স্থাপন করা হয়।

ডা. খুরশীদ আলম বলেন, এসব পদ্ধতিতে ড্রাগ সেনসিটিভ ও ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স উভয় প্রকার যক্ষ্মার ৮৩ শতাংশ রোগী শনাক্ত হয়। এছাড়া একটি ন্যাশনাল রেফারেন্স ল্যাবরেটরি ও ৫টি আঞ্চলিক রেফারেন্স ল্যাবরেটরির মাধ্যমে শনাক্ত হয় যক্ষ্মা।

যক্ষ্মা রোগে দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ৪৪টি সরকারি বক্ষব্যাধি ক্লিনিক, ৭টি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইনডোর-আউটডোর এবং এনজিও ক্লিনিকে যক্ষ্মা রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এদিকে, ২০২৫ সালের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে ৪৫ লাখ মানুষকে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়া ও ১৫ লাখ মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষায় প্রতি বছর তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে জাতীয়, আন্তর্জাতিক ও বৈশ্বিক নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহবান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, বিশ্বে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন চার হাজার ১০০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন যক্ষ্মাজনিত কারণে অসুস্থ হচ্ছে ২৮ হাজার মানুষ।

২০২০ সালে করোনার সময় বিশ্বে যক্ষ্মায় ১৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এর আগে ২০১৯ সালে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৪ লাখ। অর্থাৎ ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে এক লাখ বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত