সিলেটটুডে ডেস্ক

০৮ নভেম্বর, ২০২২ ২১:৫৬

যেভাবে পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন হয়

ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের এই প্রশ্নপত্রটি নিয়ে অভিযোগ ওঠেছে

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার এইচএসসি পরীক্ষায় বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক প্রশ্নপত্র প্রণয়ন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এই প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেছিলেন যশোর শিক্ষাবোর্ডের একজন শিক্ষক, পরিশোধনকারী (মডারেটর) ছিলেন একই বোর্ডের অধীন চার কলেজের চারজন শিক্ষক।

যশোর শিক্ষাবোর্ডের শিক্ষকেরা কীভাবে ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের প্রশ্ন প্রণয়নে জড়িত হলেন? বিষয়টি খোলাসা করেছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার। জানালেন, পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় যে নিয়ম আছে, সে জন্য এমনটি হয়েছে।

তপন কুমার সরকার মঙ্গলবার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের নিয়মটি বলতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটের করা প্রধান প্রশিক্ষকদের (মাস্টার ট্রেইনার) তালিকা প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডে দেওয়া আছে। এই তালিকা থেকে পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগে প্রতিটি শিক্ষা বোর্ডের জন্য একেকটি বিষয়ের জন্য চারজন প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী শিক্ষক ঠিক করা হয়। তাঁরা পৃথকভাবে চার সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে সিলগালা খামে সংশ্লিষ্ট বোর্ডে জমা দেন। একেকটি বিষয়ের জন্য আবার চারজন পরিশোধনকারী থাকেন। তাঁরা ওই চার সেট প্রশ্নপত্র গোপনীয়তার সঙ্গে যাচাই করেন। তাঁরা ইচ্ছা করলে সেসব প্রশ্ন পুরোটাই রাখতে পারেন বা আংশিক রেখে কিছু সংযোজন করতে পারেন। ভুল-ত্রুটি থাকলে সংশোধন করেন। প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারীর করা প্রশ্নপত্র মানসম্মত না হলে পরিশোধনকারীরা নতুন করে প্রশ্নপত্রও প্রণয়ন করতে পারেন, এই স্বাধীনতাও তাঁদের দেওয়া আছে। এবার বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী যে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেছেন, সেটিই রাখা হয়েছে, কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, এভাবে যাচাই-বাছাই করে চার সেট প্রশ্নপত্র সিলগালা খামে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে দিয়ে যায়। সেগুলো বোর্ডে ট্রাংকে গোপনীয়তার মধ্যে সংরক্ষণ করা হয়। এভাবে প্রতিটি বোর্ড চার সেট করে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে। বর্তমানে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড রয়েছে। এই হিসাবে একটি বিষয়ের জন্য মোট ৩৬ সেট প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়। কাজটি এমনভাবে করা হয়, প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ও পরিশোধনকারী ছাড়া আর কারও পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। এমনকি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকও তা দেখতে পারেন না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান আরও জানান, এরপর নির্ধারিত একটি সময়ে প্রতিটি বোর্ডের প্রশ্নপত্র কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সংশ্লিষ্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকেরা ট্রাংকে করে সেগুলো ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে (আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয়ের দায়িত্বে) আনেন। এরপর সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে প্রতিটি বোর্ড নিজ বোর্ডের করা চার সেট প্রশ্নপত্র বাদে বাকি ৩২ সেট প্রশ্নপত্র থেকে লটারির মাধ্যমে দুই সেট প্রশ্নপত্র বেছে নেয়। এগুলোর একেকটির খামের ওপর ক সেট, খ সেট লিখে রাখা হয়। এই বাছাইয়ের সময় প্রশ্নপত্র দেখার কোনো সুযোগ থাকে না। প্রতিটি বোর্ডের দুই সেট করে প্রশ্নপত্র তখন সিলগালা খামে করে ছাপার জন্য সরাসরি বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। এই কাজের জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী ও পরিশোধনকারীরা নির্ধারিত হারে সম্মানী পান। এবার লটারির মাধ্যমে যশোর বোর্ডের করা প্রশ্নপত্র ঢাকা বোর্ডের ভাগে পড়ে।

জানা গেছে, বিজি প্রেস থেকে ছাপার পর তা স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পাঠানো হয়। জেলা সদরের ক্ষেত্রে সাধারণ ট্রেজারিতে প্রশ্নপত্র রাখা হয়। আর উপজেলার ক্ষেত্রে সাধারণত থানায় রাখা হয়। প্রশ্নপত্রগুলো ঠিকঠাক গেল কি না, সেটি উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে দেখভাল করা হয়। এরপর যেদিন যে বিষয়ের পরীক্ষা থাকে, সেই বিষয়ের দুই সেট প্রশ্নপত্রই পরীক্ষার কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তখন পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্রসচিবকে জানানো হয়, কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে। তারপর সেই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত