মাসুদ পারভেজ রূপাই

১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১০:১৫

তোমাকে পাওয়ার জন্য হে বিশ্বকাপ!

স্বপ্ন ও সম্ভাবনার পালে হাওয়া লাগিয়ে আর্জেন্টিনা কাতার বিশ্বকাপ খেলতে যায়। ম্যাচের পর ম্যাচ জয় আর শিরোপাখরা কাটানোর পরে আর্জেন্টিনা অনুমিতভাবেই বিশ্বকাপের দাবিদার হিসেবে নিজেদেরকে সামনের কাতারে রেখেছিল। স্কোয়াডের ভার এবং নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলে আর্জেন্টিনা কাতার জয় করতে পারবে, কিন্তু এই সহজ সমীকরণ আগেও বারবার ব্যর্থ হয়েছিল।২০০২ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপের স্কোয়াড কিংবা ২০০৬ জার্মান বিশ্বকাপের স্কোয়াডও দুর্দান্ত ছিল। কিন্তু অসাধারণ সব খেলোয়াড় নিয়ে গেলেও ব্যর্থতায় গেছে সেইসব দিনগুলো। এরপর ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে ফাইনালে গেলেও শেষ মুহূর্তে জার্মান-যন্ত্রের নার্ভের কাছে শিরোপা-স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে আসতে হয়। এরপর ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ গেছে কোনোরকমে হাজিরা দেওয়ার বাহানায়!

৩৬ বছর পর তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের মিশনে গিয়ে আর্জেন্টিনা হেরে বসে পুঁচকে সৌদি আরবের কাছে! এ যেন তারাপদ রায়ের আমাদের (ভুল) সর্বনাশ হয়ে গেছে কবিতার মতো। যাকে আমরা বিশ্বকাপের দাবিদার ভাবছি সে কিনা হেরে বসেছে সৌদি আরবের কাছে...এ কী চাট্টিখানি কথা! সৌদি আরবের কাছে হারার পরে স্বাভাবিকভাবেই চারিদিকে তুমুল সমালোচনা ও হতাশার রাশিরাশি সোনালি স্বপ্ন কিলবিল করে হেসেছে। অবশ্য সেটাই স্বাভাবিক। ক্যালকুলেটর বের করে কোন দল কয় গোলে জিতলে আর্জেন্টিনার বিদায় নিশ্চিত হবে, কোন কোন দল নিজেদের মধ্যে ড্র করলে মেসিকে আরও একবার বাংলা সিনেমার জসিম বানানো যাবে এই সমীকরণ মেলানো হয়েছে। এরমধ্যে কাঁটা গায়ে নুনের প্রলেপ হিসেবে সৌদি আরবের কোচ বললেন- আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবে এবং শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিতবে।

এমন এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা যে, মেসি যখন বললো তাদের উপর বিশ্বাস রাখতে তখনও সেটা ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার সবচেয়ে যথাযথ উদাহরণ মনে হয়েছে অনেকেরই। আর্জেন্টিনার ফেভারিট স্তুতি সৌদি আরবের সাথে ইতি ঘটেছিল। এরপর শুরু হয় তাদের ফাইনাল-ফাইনাল খেলা। কারণ তারপর শুরু হয় প্রতিটা ম্যাচ জেতার সমীকরণ। বিশ্বকাপ জেতার জন্য তখন তাদের হেক্সামিশন পূরণ করতে হবে! অর্থাৎ গ্রুপের বাকি দুই ম্যাচ, নক আউটের ম্যাচ, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল! মেক্সিকোর সাথে বাঁচা-মরার ম্যাচে আর্জেন্টিনা ফার্স্ট হাফে গোল পায়নি। তখন চোখ রাঙাচ্ছিল গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়ার সহজ সমীকরণ। ৯০০ টন গোরুর মাংসের ভাগ পেলেই অনেকেই খুশি হয়, ঐ অবস্থায় লিওনেল মেসির চিরাচরিত ম্যাজিকে আর্জেন্টিনা গোল পায়। আরও কিছু সময় পরে তরুণ তুর্কি এনজো ফার্নান্দেজ ট্রেডমার্ক গোলে আর্জেন্টিনাকে পূর্ণমাত্রার লাইফলাইন এনে দেয়। মেক্সিকোকে হারানোর পরেও আর্জেন্টিনা নিরাপদ ছিল না। শেষ ম্যাচে মেক্সিকোকে হারানোর ব্যবধানে পোল্যান্ডকেও হারালে আর্জেন্টিনা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দ্বিতীয় রাউন্ডে যায়। কিন্তু পোল্যান্ড ম্যাচেও শুরু হয় পা হড়কানোর সম্ভাবনা জাগিয়ে। মেসি পেনাল্টি মিস করলে পুরানো সময় ফিরে আসার উঁকি দিচ্ছিলো। কিন্তু দুই তরুণ তুর্কিতে ভর করে আর্জেন্টিনা পৌঁছে যায় নকআউট পর্বে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুবাদে তারা নক আউট পর্বে পায় অস্ট্রেলিয়াকে।সেখানে মূলত আর্জেন্টিনার অনভিজ্ঞতা আর মেসির বিশ্বকাপ জিততে চাওয়ার অদম্য বাসনার কাছে খেই হারিয়েছে ক্যাঙ্গারুবাহিনী। ম্যাচের আগে অজি কোচ যতই মেসিকে নিয়ে সমালোচনা করেছে আমি ততই খুশিতে টগবগ করছিলাম। কারণ, প্রথমত নক আউটের ম্যাচ, দ্বিতীয়ত নক আউটে মেসির কোন বিশ্বকাপ গোল নেই। অজিদের কোচ মেসিকে উইদাউট বলে ভালো নয় কিংবা মারাত্মক নয় বলায় হয়তোবা মেসির কাছে ম্যাচটা ছিল ঠিকঠাক করতে চাওয়ার ম্যাচ। যেভাবে মেসি চেয়েছিল, যেভাবে সমর্থকরা ম্যাচে মেসির ছবি এঁকেছিল ঠিক সেভাবে আর্জেন্টিনা ম্যাচ বের করে নেয়। যেভাবে ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে থমকে দিয়েছিল সেরকম গোল তার ক্যারিয়ারে বহু আছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গোলটা তার আজীবন মনে থাকবে। ইতিহাসের পাতায়ও সেই গোলটা থাকবে। কারণ পঞ্চম বিশ্বকাপে এসে মেসি তার প্রথম নকআউট গোল পায়।

বিশ্বকাপ সূচি পাওয়ার পরে আমি হিসাব মিলিয়েছি কোয়ার্টার ফাইনালের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস নিয়ে। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ডস পুরানো প্রতিপক্ষ, চেনা দল। আমার কাছে কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জন্য প্রধান এবং একমাত্র বাঁধা মনে হয়েছে নেদারল্যান্ডসের সাথে ম্যাচটাকে। এমনকি সেমিফাইনালে যদি ব্রাজিলের বিপক্ষেও খেলতে হতো তবুও। সেই ম্যাচে দুই গোলে এগিয়ে থাকার পরেও আমার ধুকপুকানি কমেনি। কারণ নেদারল্যান্ডসের স্কোয়াড ভারসাম্যে ভরপুর। তাদের কোচের সাথে আর্জেন্টিনার চেনাজানা অনেকদিনের। সবমিলিয়ে নেদারল্যান্ডসকে হারাতে পারলে আর্জেন্টিনার কাতার বিশ্বকাপ জয় নিয়ে আমার কোন সন্দেহ থাকবে না। একতরফায় ম্যাচ এগিয়ে যেতে থাকলেও মিনিট দশ-বারো আগে তারা ব্যবধান কমায় এবং একেবারে শেষ মুহূর্তে তাদের ব্রিলিয়ান্ট টিম ওয়ার্কের কাছে পরাভূত হতে হয় আর্জেন্টিনাকে। দুই গোলের লিড মুহূর্তেই সমতায় চলে আসে। সেই সাথে মনোবলও স্বাভাবিকভাব তলানিতে...তারপর নানা ঘটনা, ডাগআউটে উত্তেজনা, কার্ডের পর কার্ড দেখাদেখি শেষে এমিলিয়ানো মার্টিনেজের সুপারম্যানীয় পারফর্মে আর্জেন্টিনা পৌঁছে যায় সেমিফাইনালে। যেখানে ঐ দিন রাতেই ব্রাজিলকে বিদায় করে সেমিফাইনালে পৌঁছে লুকা মদ্রিচের রাশিয়া।ব্রাজিল আগেভাগে হেরে যাওয়ায় একটা সুপার ক্লাসিকোর অপমৃত্যু হয়!

একটা একটা ধাপ শেষে মেসিরা পৌঁছে যায় স্বপ্ন পূরনের দ্বারপ্রান্তে। শেষ যখন ফাইনালে পৌঁছে তখন নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে গিয়েছিল। হ্যাভিয়ার মাশ্চেরানোর সেই ট্যাকল কিংবা সার্জিও রোমেরোর বীরত্ব কোন ফুটবলপ্রেমীর ভুলার কথা নয়। ক্রোয়েশিয়ার সাথে সেমিফাইনাল আক্ষরিক অর্থেই মেসির ওয়ার্ল্ডক্লাস পারফর্ম্যান্সের জন্য খ্যাত হয়ে থাকবে। সৌদি আরবের সাথে গোল পেলেও দল হেরে জন্ম দিয়েছিল বিশ্বকাপের সেরা অঘটনের। তারপর থেকে মেসি কোং একের পর এক বাধা পেরিয়ে শেষের আগের দ্বারে পৌঁছে গেলে সেখানে অপেক্ষা আরও এক কিংবদন্তির। লুকা মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেই আর্জেন্টিনা তাদের ক্লিনিক্যাল পারফর্ম উপহার দেয়। একেবারে শতভাগ নিখুঁত প্লে-স্টেশনের গেম খেলে ক্রোয়েশিয়াকে বুঝিয়ে দেয় আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয়ের জন্য এক নাম্বার দাবিদার। তার আগ পর্যন্ত উড়তে থাকা তরুণ গাভারদিওল সেই ম্যাচে বুঝতে পারে মেসির ক্লাস! বলের পেছনে, মেসির পেছনে ক্রমাগত লড়াইয়ে থাকা গাভারদিওলকে একের পর এক নাটমেগ করতে থাকা মেসি শেষ পর্যন্ত ডি-বক্সের ভেতরে পাস দেয় হুলিয়ান আলভারেজকে। আলভারেজ জাস্ট একটা আলতো টোকায় বলটা ক্রোয়েশিয়ার জালে পাঠায়। তার আগে রচিত হয়ে যায় ফুটবলের এপিক একটা মোমেন্ট! ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত তিন গোলের ব্যবধানে জিতে ফাইনালে পৌঁছে যায় আর্জেন্টিনা।

ম্যাচ বাই ম্যাচ পারফর্ম্যান্স-গ্রাফ বাড়াতে থাকা মেসিরা ফাইনালে মোকাবেলা করে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। সেখানে রচিত হয় আরও এক ফুটকাব্য। ডি-মারিয়ার দুরন্ত রান আটকাতে গিয়ে পেনাল্টি উপহার দেয় দেম্বেলে। সেটা ঠাণ্ডামাথায় ফাঁকি দেয় লরিসকে, যার কারিগর লিওনেল মেসি। তারপর ফাইনালে গোল পেতে থাকা ডি মারিয়ার দুরন্ত ফিনিশিং থেকে মেসি পৌঁছে যায় ফুটস্বর্গের দুয়ারে! একতরফা ম্যাচ যখন ক্রোয়েশিয়ার সাথে সেমিফাইনালের রেজাল্ট মনে করিয়ে দিচ্ছে তখনই দিদিয়ের দেশমের মাস্টারক্লাস শুরু। গ্রীজম্যান-এমবাপ্পে যোগসূত্র খুঁজে না পাওয়ায় বদলি নামান কোলামুয়ানি এবং কিংসলে কোমানকে। অন্যদিকে স্কালোনির ভিন্ন প্ল্যানে মাঠ থেকে উঠে যায় ডি মারিয়া। ব্যাস... খেলা উল্টো দিকে ঘুরতে থাকে। ডি মারিয়ার জন্য এমবাপ্পে সুবিধা করতে না পারার ঘাটতি উবে যায়। অন্যদিকে মাঝমাঠ থেকে সমানে বল যেতে থাকে এমবাপ্পের দিকে। তারপর ওতামেন্দি পেনাল্টি উপহার দেয় ফ্রান্সকে। দ্রুতই এমবাপ্পের দারুণ ভলি দিবুকে ফাঁকি দিলে ম্যাচ হয়ে যায় ২-০ থেকে ২-২! এ যেন ফাইনালের মতো ফাইনালের মহড়া।

অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় ভাগে লাউতারোর শট লরিসে আটকে গেলে সেখান থেকে মেসি দলকে এগিয়ে দেয়। কিন্তু এমবাপ্পের দিনে আরও একটা পেনাল্টি পায় ফ্রান্স, সেখান থেকে বিশ্বকাপের ফাইনালের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে কিলিয়ান এমবাপ্পে হ্যাটট্রিক করে ইতিহাস গড়ে। পেন্ডুলামের মতো ঘুরতে থাকা ম্যাচ শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে পৌঁছে। সেখানে আরও একবার দিবুর বীরত্বে দীর্ঘ ছত্রিশ বসন্ত পরে আর্জেন্টিনা নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ জিতে নেয়। টানা পঞ্চম বিশ্বকাপ অভিযানে এসে লিওনেল মেসি নিজের অমরত্বের সিলমোহর দিতে সক্ষম হয় সোনালি ট্রফির উপরে। ব্রাজিল বিশ্বকাপের ফাইনালে নার্ভের খেলায় হারার পরে কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে আর্জেন্টিনা স্কিল ও নার্ভের অপরূপ প্রদর্শনী দেখাতে সক্ষম হয়। দুই গোলের লিড হারানোর পরেও দলের সবাই শান্ত ছিলো এবং সুযোগ তৈরি করাতেই সবাই ব্যস্ত ছিলো। ঐ ধরণের একটা সুযোগ লাউতারো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলেও মেসির সুযোগসন্ধানী শটে আর্জেন্টিনা আরও একবার এগিয়ে গিয়েছিল। সেই গোলটা আর্জেন্টিনাকে শুধু খেলাতেই ফেরায়নি বরং পরে একটা গোল খেয়ে ফ্রান্স সমতা ফেরালেও আর্জেন্টিনা খেলা থেকে পিছিয়ে পড়তো না। মনস্তাত্বিক নানা মুহূর্তে মেসি এন্ড আদার্স ভেঙ্গে পড়েনি বরং পিছিয়ে পড়লে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সেটা উতরে গেছে। নেদারল্যান্ডসের সাথে ম্যাচ কিংবা ফ্রান্সের সাথে ফাইনালে মেসি দেখিয়েছে বিশ্বকাপ জেতার জন্য সে কতটা উন্মুখ। শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ জিততে পেরেছে। যেখানে মেসি-দিবু-মারিয়া সবাই একইসাথে পারফর্ম করেছে।

বিশ্বকাপ জেতার জন্য মেসির যারপরনাই চেষ্টা এবং নিরন্তর লড়াইয়ের কথা সর্বজনবিদিত। নিজের সব অর্জন আর শিরোপা দিয়ে হলেও একটা বিশ্বকাপ জেতাকে পাখির চোখ করেছে মেসি। যেটা মরুর বুকে ফুটকাব্যের অমলিন পদচিনহ এঁকে লিওনেল মেসি তার শ্রেষ্ঠত্বের যাবতীয় সন্দেহ ও অবিশ্বাসের ইতি ঘটিয়েছে। একটা বিশ্বকাপ জেতার জন্য মেসিকে টানা পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলতে হয়েছে, সতীর্থ কোচ হয়েছে আর একটা জেনারেশন পরিবর্তন হয়েছে।। যে জেনারেশন মেসিকে আইডল মেনে ফুটপ্রেমে পড়েছে সেই জেনারেশনের বেশ কয়েকজনকে মেসি কাতার বিশ্বকাপে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছে।যারা আবার মেসির চারপাশে নিজেদের ইস্পাত-কঠিন শপথে আবদ্ধ করে মেসির জন্য খেলেছে। এমন সৌভাগ্য আর কোন ফুটবলারের হয়েছে !

বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতায় যেভাবে স্বাধীনতার জন্য জানপ্রাণ বাজি রাখার আকুতি উল্লেখ আছে ঠিক সে আদলে ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে বিশ্বকাপ’ স্তুতিনামা লিখে এই স্মৃতি রোমন্থনের ইতি টানছি:

তোমাকে পাওয়ার জন্য হে বিশ্বকাপ

তোমাকে পাওয়ার জন্য হে বিশ্বকাপ:
আমি কতই না সময় পার করে এসেছি
কতই না প্রাণান্তকর চেষ্টা আর দীর্ঘ হতাশায়
আমি পেরিয়ে এসেছি বুয়েন্স আয়ার্সের চিরচেনা পথ
লা-মাসিয়ার অচেনা মাঠে এসে আমি প্যাকেট করে রেখেছি আমার আস্ত শৈশব

তোমাকে পাওয়ার জন্য হে বিশ্বকাপ:
আমি দিনের পর দিন রাতের পর রাত
মাঠে দৌঁড়েছি সবকিছু পেছনে ফেলে সামনে ছুটেছি
আমি জিতেছি অনেকবার আমি হেরেছি বারবার
তবুও আমি ভুলিনি, ভুলতে পারিনি তোমায়

তোমাকে পাওয়ার জন্য হে বিশ্বকাপ:
নিজেকে অভয় দিয়েছি, প্রবোধ শুনিয়েছি বারবার
এলোমেলো সময় মুঠোয় নিয়ে তোমাকেই পাখির চোখ করেছি
চাতক পাখির মতো একফোঁটা বৃষ্টির মতো
আমি তোমাকে চেয়েছি
তোমাকে পাওয়ার জন্য হে বিশ্বকাপ:
আমি হোঁচট খেয়েছি বারবার উঠে দাঁড়িয়েছি
বিশ্বব্যাপী অযুত-নিযুত সমর্থকদের আশ্বাস দিয়েছি
ঘুরতে-ফিরতে চেনাজানা মাঠের আনাচে-কানাচে
আমি তোমাকে চেয়েছি

তোমাকে পাওয়ার জন্য হে বিশ্বকাপ:
আমি অর্জনের খেরোখাতা বিসর্জন দিতে চেয়েছি
অগণিত পুরষ্কার আর আর মুহুর্মুহু শিরোপার ভিড়ে
আমি...আমি শুধু তোমাকে বগলদাবা করতে চেয়েছি

তোমাকে পাওয়ার জন্য হে বিশ্বকাপ:
আমি স্বপ্নকে বিস্তৃত করেছি
নিজেকে প্রতিটা মুহূর্তে প্রস্তুত রেখেছি
স্বপ্নভঙ্গ শেষে নূতন স্বপ্ন দেখেছি
আর তোমার কাছে নিজেকে সঁপেছি

তোমাকে পাওয়ার জন্য হে বিশ্বকাপ:
আমি ফুটবল খেলে গেছি
আনন্দ-বেদনার সম্মিলনে বারবার চোখ মুছেছি
তারপর শয়নেস্বপনে তোমাকে ভালোবেসেছি

আপনার মন্তব্য

আলোচিত