সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ১১:৫২

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৩তম জন্মদিন আজ

অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক বাংলা সাহিত্যের মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৩তম জন্মদিন আজ।

১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন অমিত্রাক্ষর (সনেট) ছন্দের প্রবর্তক বাংলা সাহিত্যের মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তার পিতার নাম রাজনারায়ণ দত্ত ও মাতা জাহ্নবী দেবী। বাবা জমিদার রাজনারায়ণ দত্ত কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত উকিল ছিলেন। জমিদার ঘরে জন্মগ্রহণ করেও শুধুমাত্র সাহিত্যকে ভালোবেসে মধুসূদন সমাজ সংসার থেকে পেয়েছেন বঞ্চনা আর যন্ত্রণা। সাহিত্যে অমর সৃষ্টির মধ্যদিয়ে মহাকবির স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনি।

কবির শিক্ষা জীবনঃ

মাইকেল মধুসূদন দত্ত সাগরদাঁড়ি পাঠশালায় শিক্ষাজীবন শুরু করেন। পরে সাত বছর বয়সে কলকাতার ক্ষিদিরপুর স্কুলে ভর্তি হন। এরপর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজের অধ্যয়নরত অবস্থায় বাংলা, সংস্কৃত, ফারসি ভাষা শেখেন। ১৮৪৪ সালে তিনি বিশপস কলেজে ভর্তি হন। ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত ওই কলেজে অধ্যয়ন করেন। এখানে তিনি ইংরেজি ছাড়াও গ্রিক, ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষা শেখার সুযোগ পান। এসময় ধর্মান্তরের কারণে মধুসূদন তার আত্মীয় স্বজনদের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তার পিতা এসময় অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দেন। তাই অগত্যা ১৮৪৮ সালে ভাগ্যান্বষে মাদ্রাজ গমন করেন তিনি।

কবির কর্ম জীবনঃ

১৮৪৮-৫২ সাল পর্যন্ত মাদ্রাজ মেইল অরফ্যান অ্যাসাইলাম স্কুলে শিক্ষকতা করেন। এরপর ১৮৫৬ সাল পর্যন্ত মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। এসময় সাংবাদিক ও কবি হিসেবে পরিচিত লাভ করেন। একই সঙ্গে হিব্রু, ফরাসি, জার্মান, ইটালিয়ান, তামিল ও তেলেগু ভাষা শিক্ষাগ্রহণ করেন। মাদ্রাজে অবস্থান কালে প্রথমে রেবেকা ও পরে হেনরিয়েটা’র সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর ১৮৬২ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে বিলেত গমন করেন এবং গ্রেজ ইন এ যোগদান করেন। ১৮৬৩ সালে প্যারিস হয়ে ভার্সাই নগরীতে যান। এরপর ১৮৬৫ সালে আবার ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন। ১৮৬৬ সালে গ্রেজ ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন। ১৮৬৭ সালে দেশে ফিরে কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশায় যোগদান করেন। ১৮৭০ সালে হাইকোর্টে অনুবাদ বিভাগে যোগদান করেন। ১৮৭২ সালে কিছুদিন প কোর্টের রাজা নীলমণি সিংহ দেও এর ম্যানেজার ছিলেন। এখানে কিছুদিন কাজ করার পর পুনরায় আইন পেশায় যোগদান করেন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন তিনি ইহকাল ত্যাগ করেন।

মধু মেলাঃ

কবির ভাইয়ের মেয়ে কবি মানকুমারি বসু ১৮৯০ সালে কবির প্রথম স্মরণসভার আয়োজন করেন সাগরদাঁড়িতে। সেই থেকে শুরু হয় মধু মেলার। এর ধারাবাহিকতায় মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা ও জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ২১ জানুয়ারি থেকে সাগরদাঁড়িতে শুরু হয়েছে সপ্তাহ ব্যাপী মেলা। মেলায় হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। মেলাকে ঘিরে এরই মধ্যে উৎসব আমেজের সৃষ্টি হয়েছে কেশবপুরসহ আশপাশের এলাকায়।

মহা কবির জন্মদিন উপলক্ষে মহাকবির জন্মভূমি সাগরদাঁড়িতে ২১ জানুয়ারি সপ্তাহ ব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা মেলায় আসছেন। উৎসবে হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত সাগরদাঁড়ি।

মেলায় বিনোদনের নানা আয়োজন ছাড়াও প্রতিদিন মে থাকছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে পরিবেশন করবে জেলার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। বিভিন্ন এলাকার মানুষ মধুমেলা উপভোগের জন্য আসছেন। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এবার মধুকবির জন্মজয়ন্তী উৎসবকে ঘিরে কবির জন্মস্থানে মধুসূদন সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। এ দাবিতে গঠিত হয়েছে আন্দোলন কমিটি। যশোরবাসীর প্রাণের দাবি মহাকবি মধুসূদন দত্তের নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। পাশাপাশি মধু কবির জন্মদিন, মৃত্যুদিবস পালন ছাড়াও তাকে ঘিরে গবেষণা আরও বিস্তৃতি করার দাবিও মধু গবেষকদের।

রচিত সাহিত্য কর্মঃ

মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত সাহিত্য কর্মের মধ্যে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত ১২টি গ্রন্থ এবং ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত ৫টি গ্রন্থ রয়েছে। Timothy PenPoem ছন্দনামে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ, The Captive ladie (১৮৪৮), দ্বিতীয় গ্রন্থ vissions of The past। পদ্মাবতী নাটক, তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য, মেঘনাদ বধ মহাকাব্য, বীরাঙ্গনা (১৮৬২), কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১), ব্রজাঞ্জনা (১৮৬১), হেক্টের বধ (১৮৭১), মায়াকানন (১৮৭৩), বঙ্গভাষা’কপোতাক্ষ নদ’ ইত্যাদি সনেট। এই সনেটগুলো ১৮৬৬ সালে চতুর্দশপদী কবিতাবলি নামে প্রকাশিত হয়। দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকটি তিনি ইংরেজি অনুবাদ করেন। Eurasion (পরে eastern Guardian), Madras Circulator and General Chronicle I Hindu Chronicle এর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ১৮৪৮-১৮৫৬ সাল পর্যন্ত। ১৮৬২ সালে তিনি হিন্দু প্যার্টিয়ট পত্রিকার সম্পাদনা করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত