দোদুল খাঁন

২৮ মে, ২০১৭ ১৬:২৪

মুসলিমপ্রধান দেশে দেশে ভাস্কর্য (পর্ব ২)

ভাস্কর্য ও মূর্তিসংক্রান্ত বিরোধের মাঝেই সুপ্রীম কোর্টের সামনে থেকে ন্যায়বিচারের প্রতীক লেডি জাস্টিসিয়া এর ভাস্কর্য অপসারণ করা হয়েছে। প্রতিস্থাপন করা হয়েছে অ্যানেক্স ভবনের সামনে। আর একে হেফাজত মৌলবাদী গোষ্ঠীর কাছে সরকার ও দেশের প্রগতিশীল চেতনার অপমৃত্যু হিসেবেই গণ্য করছেন বিদ্বজনেরা।

মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট জনসংখ্যার দেশে ভাস্কর্য থাকতে পারে কী না, এ প্রশ্নে যখন প্রকাশ্যেই আন্দোলন ও অভিযোগ করছে দেশের বৃহত্তম ইসলাম ধর্মভিত্তিক অরাজনৈতিক জোট হেফাজতে ইসলাম; তখন প্রাসঙি্গকভাবেই আলোচনায় আসছে মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর ভাস্কর্য।

ভাস্কর্য চিন্তাশীল সৃষ্টিকর্ম আর এর মাধ্যমে একটি জাতি বা গোষ্ঠীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও বীরগাঁথা যেমন প্রকাশিত হয়, তেমনি ভাস্কর্যের মধ্যে দিয়ে একটি দেশের সৃজনশীল চিন্তার উন্মেষ প্রকাশ পায়। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো মুুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশগুলোর প্রায় সবকয়টিতেই রয়েছে ভাস্কর্য শিল্পের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস।

পাকিস্তানেও রয়েছে ভাস্কর্য

পাকিস্তান ইসলামী প্রজাতন্ত্র আর ইন্দোনেশিয়ার পর সবচেয়ে বেশি মুসলিম অধ্যুষিত এ দেশে ধর্মীয় গোঁড়ামি, উগ্রবাদ, মৌলবাদ এবং দ্বিধাবিভক্তি থাকার পরেও দেশটিতে রয়েছে অসংখ্য ভাস্কর্য।

পাশের ছবিটি পাকিস্তানের ইসলামাবাদ স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে থাকা ভাস্কর্যের। ষাঁড় বা বুল স্টক মার্কেটের একটি প্রতীক আর এটি মার্কেটের চাঙ্গাভাবকে নির্দেশ করে, যে কারণে ওয়াল স্ট্রিটের আদলে বিশ্বের প্রায় সবকটি বড় স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে রয়েছে বুল বা ষাঁড় এর ভাস্কর্য।

পাকিস্তানে প্রতিনিয়তই তালেবান জঙ্গিরাসহ বিভিন্ন ইসলামপন্থী কট্টরবাদীরা ভাস্কর্যকে মূর্তি ও পৌত্তলিকতা আখ্যা দিয়ে ভাংচুর করে, তবুও ভাস্কর্য শিল্পে পাকিস্তান বিশ্বে অন্যতম।

পাকিস্তানের আরেকটি বিখ্যাত ভাস্কর্য হচ্ছে লাহোরের বাদশাহী মসজিদের সামনে খ্রিস্টীয় মাদার মেরির ভাস্কর্য। পাশের ছবিটি সেই ভাস্কর্যের, যা মসজিদ থেকে দেখা যায় এবং এ ভাস্কর্য সহই মসজিদটি পাকিস্তানের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

পাকিস্তানের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্যের মধ্যে রয়েছে পাঞ্জাবের জং শহরের রাস্তায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়াসওয়ারের ভাস্কর্য এবং লাহোরের ন্যাশনাল কলেজ অব আর্টস এর সামনের অজস্র ভাস্কর্য।

আধুনিক মালয়েশিয়ার সৌন্দর্য ভাস্কর্য

মালয়েশিয়া একমাত্র মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র যা দ্রুততম সময়ের মধ্যে উন্নতি লাভ করে বিশ্বের উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর মালয়েশিয়া মানেই মাহাতির মোহাম্মদের কৃতিত্ব যার কারণেই মালয়েশিয়া আজকের আধুনিক মালয়েশিয়া।

তবে মালয়েশিয়ার রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অতীত, আর ধর্ম বা বিতর্কের উর্ধ্বে উঠে মালয়েশিয়া ধারণ করে চলেছে তাদের ঐতিহ্য।

পাশের ছবিটি মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুরে অবস্থিত ন্যাশনাল মনুমেন্ট এর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শহীদ বীর মালয়েশিয়ানদের স্মরণেই এ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয় আর বর্তমানে মালয়েশিয়ার জাতীয় প্রতীকে পরিণত হয়েছে ভাস্কর্যটি।

১৫ মিটার উঁচু এ ভাস্কর্যটি নির্মাণ করা হয় ১৬৬৩ সালে আর এতে সাতজন বীরের প্রতিকৃতি তুলে ধরা হয়েছে।

ন্যাশনাল মনুমেন্ট ছাড়াও মালয়েশিয়ার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ভাস্কর্য হলো বাতু কেভসের বিখ্যাত মুরুগান ভাস্কর্য, কুচিং হলিডে হোটেলের সামনের মার্জার ভাস্কর্য এবং বিখ্যাত দার্শনিক কনফুসিয়াসের ভাস্কর্য।

বিস্মিত করে আরব আমিরাত

সংযুক্ত আরব আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অভিজাত দেশ, যা মূলত একটি কোয়ালিশন রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। শহরটি আরো বিখ্যাত বুর্জ খলিফা টাওয়ারের জন্য যা একসময় বিশ্বের সর্বোচ্চ দালান হিসেবে পরিচিত ছিল।

আর এ বুর্জ খলিফার ঠিক সামনেই রয়েছে আরব আমিরাতের আরেক আকর্ষণ, যুগল ভাস্কর্য। পাশের ছবির এ ভাস্কর্যটিই বিখ্যাত আরব যুগলের ভাস্কর্য যাতে একজন আরব নারী ও আরব পুরুষ প্রথাগত পোশাকে দাড়িয়ে থাকার প্রতিরূপ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

কেবল বুর্জ আল খলিফার সামনের আরব যুগলের ভাস্কর্য নয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে রয়েছে দুবাইয়ের ওয়াফি অঞ্চলে প্রবেশপথে পাহারাদার স্মরূপ কুকুরের ভাস্কর্য, ইবনে বতুতা মার্কেটে স্থাপিত ভাস্কর্যসহ নানা ভাস্কর্য।

চলবে...

আরও পড়ুন: মুসলিমপ্রধান দেশে দেশে ভাস্কর্য (পর্ব ১)

আপনার মন্তব্য

আলোচিত