সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ জুন, ২০১৮ ১৩:৫৩

বিশ্বে বাস্তুচ্যুতি বাড়ছেই

শরণার্থী দিবস

সারা বিশ্বে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ২০১৭ সালে টানা পাঁচ বছরের মতো বেড়েছে। গণপ্রজাতান্ত্রিক কঙ্গোর সংকট, দক্ষিণ সুদানের যুদ্ধ এবং মিয়ানমার থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর বাংলাদেশে পালিয়ে আসার মতো ঘটনা এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ অন্তত ৬ কোটি ৮৫ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এরমধ্যে শুধু ২০১৭ সালে বাস্তুচ্যুত হওয়া মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৬২ লাখ। অর্থাৎ দৈনিক ৪৪ হাজার ৫০০ জন, অথবা প্রতি দুই সেকেন্ডে একজনের বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে।

ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, বাস্তুচ্যুত ৬ কোটি ৮০ লাখের মধ্যে শরণার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ৫৪ লাখ। এটা ২০১৬ সালের চেয়ে ২৯ লাখ বেশি, এবং ইউএনএইচসিআরের দেখা একটি নির্দিষ্ট বছরে সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি।

গত বছরের প্রায় আড়াই কোটি শরণার্থীর পাঁচ ভাগের এক ভাগের কিছুটা বেশি হচ্ছে ফিলিস্তিনি। অন্যরা সিরিয়া, মিয়ানমার, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান ও সোমালিয়া থেকে এসেছে।

পৃথিবীতে এখন শরণার্থীর সংখ্যা অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা প্রায় থাইল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার সমান।

২০ জুন আন্তর্জাতিক শরণার্থী দিবস সামনে রেখে প্রতিবছর ইউএনএইচসিআরের গ্লোবাল ট্রেন্ডস প্রতিবেদনটি বিশ্বজুড়ে প্রকাশ করা হয়। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির ওপর ইউএনএইচসিআর, সরকার ও অন্যান্য সহযোগী সংস্থার সংগৃহীত তথ্য এতে তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টটির আরও দুটি বড় দিক হচ্ছে, বেশির ভাগ শরণার্থী বাস করছে শহর এলাকায় (শতকরা ৫৮ ভাগ), যারা কোনো শিবির কিংবা গ্রাম এলাকায় থাকে না; এবং বিশ্বব্যাপী বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠী মূলত কম বয়সী-শতকরা ৫৩ ভাগ হচ্ছে শিশু, যাদের মধ্যে রয়েছে নিজ পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার মতো শিশুও।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্র্যান্ডি বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি ব্যবস্থাপনা সফলতার জন্য একটি নতুন এবং অধিক সর্বাঙ্গীণ পন্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশে ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে রোহিঙ্গাদের যে ঢল নেমেছিল, তা গত এক দশকের সবচেয়ে বড় শরণার্থীর ঢল হিসেবে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ। রুয়ান্ডার গণহত্যার পর গত ১০ বছরে আতঙ্কিত লোকজনের পূর্বপুরুষের ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার এত বড় ঢল বিশ্ব দেখেনি। সর্বশেষ ধাপে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে এসেছে।

গত বছরের ২৫ আগস্টসহ ১৯৭৮ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত চার দফায় রোহিঙ্গারা বড় পরিসরে বাংলাদেশে এসেছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে, সুনির্দিষ্টভাবে বললে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় অবস্থান করছে প্রায় ১১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা। প্রায় ১৩ বছর আগে, অর্থাৎ ২০০৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সর্বশেষ প্রত্যাবাসন হয়েছে।

১৯৯০ সালে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে সর্বশেষ ২০০৫ সালের ৫ মে এক পরিবারের দুজনসহ ৯২ জন শরণার্থী রাখাইনে ফিরে গেছে। ওই সময় ২ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ রোহিঙ্গা টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ও উখিয়ার কুতুপালং শিবিরে আশ্রয় নেয়। ১৯৯২ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে ২ লাখের বেশি শরণার্থী মিয়ানমারে ফিরে যায়। সে সময় তালিকাভুক্ত আরও ৯ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী আটকা পড়ে। এরপর থেকে প্রত্যাবাসন বন্ধ হয়ে যায়।

২০১২ সালের ৩ জুন জাতিগত সংঘাত শুরু হলে মংডু থেকে আকিয়াব পর্যন্ত তা ছড়িয়ে পড়ে। প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গারা বিচ্ছিন্নভাবে পালিয়ে আসতে শুরু করে।

২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর রাখাইন রাজ্যের সীমান্তে পুলিশের ছাউনিতে হামলা হয়। এতে কয়েকজন পুলিশ মারা যাওয়ার এবং অস্ত্র লুটের খবর রটে। পরদিন রাতে হঠাৎ মিয়ানমারের সেনাসদস্যরা রোহিঙ্গাদের গ্রাম ঘিরে ফেলে রোহিঙ্গাদের ধরপাকড়, হত্যা, ধর্ষণ, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করলে আবারও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পাড়ি দেয়। ওই সময় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট রাতে মিয়ানমারের মুসলিম-অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যের বিশাল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছোট-বড় কমপক্ষে ২৪টি সীমান্ত চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। স্বাধীনতাকামী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সে দেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর প্রচণ্ড সংঘর্ষ হয়। এরপর ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে বাংলাদেশে। সর্বশেষ ঢলে সাড়ে সাত লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়।।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত