১০ নভেম্বর, ২০১৯ ১৫:০৬
লাভলী দেব
‘‘তুমি চিনিয়া মানুষের সঙ্গ লইও/ পাষাণ মন রে বুঝাইও/ যদি হয় রে কুজন, তার কাছে না যাইও মনরে/ তুমি নিদাগেতে দাগ লাগাইবার চাইও/ ভাইবে রাধারমণ কয়, শুন মন মহাশয়রে/ তুমি রসিক পাইলে রসের কতা কইও’’- সাধক কবি রাধারমণ দত্তের এই গানটি আমাকে প্রভাবিত করে। এখনও মোহিত করে।
রাধামরণ দত্তের এই গানটি প্রথম যেদিন শুনলাম সেদিনই মুগ্ধ হয়েছিলাম। প্রবলভাবে প্রভাবিত করেছিল সে গান। তারপর থেকে যতবার রাধারমণের গান শুনি, যতবার গাই; ততবারই মনে হয় নতুন করে কিছু শিখছি, জানছি। তার গানগুলো এমনই, প্রতিদিন নতুন করে শেখায়-জানায়, মোহিত করে, প্রভাবিত করেও।
লোকসংগীতের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব, বৈষ্ণব কবি রাধারমণ দত্তের প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯১৫ সালের ১০ নভেম্বর ইহধাম ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার আতুয়জান পরগনার কেশবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মৃত্যুর পর তাকে কেশবপুর গ্রামে সমাহিত করা হয়।
কিশোর বয়স থেকে রাধারমণ সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সৃষ্টিকর্তার স্বরূপ অনুসন্ধানে মনোনিবেশে করেন। এজন্য তিনি বিভিন্ন সাধুসন্তের আদেশ উপদেশ অরে অরে পালন করতেন। এই ধারাবাহিকতায় তিনি মৌলভীবাজারের ঢেউপাশা গ্রামের সাধক রঘুনাথ গোস্বামীর সাধন ভজনের কথা জ্ঞাত হয়ে তার শিষ্যত্ব গ্রহণ গ্রহণ করেন। শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব মতবাদের ওপর ব্যাপক দখল ছিল তার। সবশেষে তিনি সহজিয়া মতে সাধন ভজন করেন। এজন্য তিনি বাড়ির পাশে নলুয়ার হাওরের একটি উন্মুক্ত স্থানে পর্ণকুটির তৈরি করে সেখানে সাধন ভজন করতে থাকেন। তিনি কৃষ্ণভাবে বিভোর হয়ে রাধাকৃষ্ণ প্রেমলীলা নিয়ে লোকগান রচনা করেন। তিনি ভজন সংগীতে বিভোর হয়ে গান রচনা করে নিজেই তা গাইতেন। তার মুখের বাণীতে শিষ্যগণ তা কাগজে লিখে রাখতেন।
রাধারমণ দত্তকে ধামাইল গানের জনক বলা হয়। সিলেট অঞ্চলের বিয়েশাদিতে ধামাইল গানের প্রচলন রয়েছে। এই ধামাইল গানের বিভিন্ন অংশ রয়েছে। যার মধ্যে আছে- বন্দনা, আসর, উদয়, গৌরছন্দ, নাম, বাঁশি, সুবল সংবাদ, শ্যাম রূপ, খেদ, স্বপ্ন, দূতি সংবাদ, বিচ্ছেদ, রাধার মান, মান ভঞ্জন, মিলন, সাক্ষাৎ মিলন, বিদায়।
ধামাইল গানের এই ধারাগুলো অনেকের কাছে এখনও অজানা। যদিও গ্রামেগঞ্জে এই গানগুলো এখনও জনপ্রিয়।
গুণী এই শিল্পীর প্রয়াণ দিবসে তার স্মৃতি সংরক্ষণ, গানগুলো সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং সঠিক কথা ও সুরে প্রচার ও প্রসারের দাবি জানাই।
আপনার মন্তব্য