পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়

২৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১১:০৮

একজন বিশ্বনাগরিক কাজী আসমা আজমেরী

রূপকথার গল্পে আমরা শিখেছি, রাজকন্যা ঘুমিয়ে থাকে আর সাত সমুদ্দুর তেরো নদী পার করে রাজপুত্র এসে সোনা কাঠি রুপো কাঠি ছুঁইয়ে তার ঘুম ভাঙায়। এইসব গল্প খুলনার কাজী আসমা আজমেরীও পড়েছিলেন ছোটবেলায়। এও শুনেছিলেন, একা একা দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ানো মেয়েদের কম্ম নয়। তাই খানিকটা নিজেকে পরখ করতেই ঢাকা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশনের পর ২০০৯ সালে বেরিয়ে পড়েছিলেন আসমা। সেই শুরু। একাই একশোরও বেশি দেশ ঘুরে খুলনার আসমা এখন বিশ্ব-নাগরিক।

প্রথম প্রথম ঘোরাটা আর পাঁচটা উপমহাদেশীয় টুরিস্টের মতোই চলছিল। কিন্তু সেটা খরচসাপেক্ষ। নেপালে বিদেশি ব্যাকপ্যাকারদের কাছ থেকে প্রথম হস্টেলে থেকে কম খরচে ঘোরার হদিশ পেয়ে গেলেন আসমা। তার কথায়, ‘আমরা তৃতীয় বিশ্বের পর্যটকরা প্রথম বিশ্বের দেশে গিয়ে অনেক টাকা খরচ করে ঘুরি কিন্তু ওদের দেশের টুরিস্ট আমাদের এখানে ভারত নেপাল বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা ঘুরতে এসে কত কম খরচে ব্যাকপ্যাকিং করে চলে যায়।‘

সিঙ্গাপুরে প্রথম হস্টেলে থাকার অভিজ্ঞতা হবার পর থেকে এখন হস্টেলেই থাকা অভ্যাস হয়ে গেছে। হস্টেলে থাকা মানে একটা ঘর কয়েকজনের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া আর নিজে বাজার করে রান্না করে খাওয়া। কোথাকার খাবার খেয়ে সবচেয়ে ভালো লেগেছে জানতে চাওয়ায় বললেন “যেখানে যাই সেখানকার খাবার খাওয়ার চেষ্টা করি। মঙ্গোলিয়ার ঘোড়ার মাংস খেয়েছি। ওখানে আবার খাসির মাংস মাত্র পঞ্চাশ টাকা কিলো। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার স্টেক, নিউজিল্যান্ডের ল্যাম্ব খুব ভালো লাগছে। তবে আমি তো কম খরচে ঘুরে বেড়াই, বেশি রেস্তোরাঁর খাবার খেতে পারি না।“ কম খরচে ঘোরার টিপস জানার জন্য লোনলি প্ল্যানেট বইয়ের অন্ধ ভক্ত। এতে নাকি বছরে পাঁচশো ডলার বেঁচে যায় আসমার। লোনলি প্ল্যানেট বই থেকেই শিখেছেন, কোনও নতুন জায়গায় যাওয়ার আগে সেখানকার ভাষায় ‘ধন্যবাদ’ আর ‘কত দাম’ বলতে শিখে নেওয়ার নিয়ম।

গুয়াতেমালায় গিয়ে রাজপুত্রের দেখাও পেয়েছিলেন কিন্তু বছর চারেক একসঙ্গে থাকার পর ঠিক করেছেন প্রেম নয়, আপাতত বন্ধুত্বেই বেশি স্বচ্ছন্দ। আসমার এখনকার ঠিকানা নিউ জিল্যান্ড। ঘোরার খরচ জোগাড় করতে দেড় বছর চাকরি করেন। সপ্তাহান্তে বারটেন্ডার হিসেবেও কাজ করতে হয়। কিছু টাকা জমিয়ে আবার বেরিয়ে পড়া ছমাসের জন্য।

২০১৮ সালে মধ্য এশিয়ার আজারবাইজান, বৈকাল হ্রদ, রাশিয়া ঘুরতে ঘুরতে ট্রেনে পাড়ি দিয়েছেন তেইশ হাজার কিলোমিটার। রাশিয়ায় খুঁজে পেয়েছেন এমন অতিথিবৎসল কিছু মানুষকে যারা পথনির্দেশ জানতে চাইলে একেবারে অকুস্থলে পৌঁছে দিয়ে এসেছেন। এভাবে ঘুরতে ঘুরতেই বছরে একবার কিছুদিনের জন্য বাড়ি গিয়ে মায়ের হাতের ভুনা গোশ্ত আর প্রতিবেশীর বাড়ির পুজোর ভোগের লুচি ছোলার ডাল খাওয়া চাইই চাই।

দেশে ফিরে আর যে গুরুত্বপূর্ণ কাজটা করতেই হয় তা হলো একটা ভালো গামছা কেনা। গ্লোবট্রটার আসমার সবসময়ের সঙ্গী গামছা, ছাতা, তিন জোড়া জুতো, মোবাইলের চার্জার, ক্যামেরা, জলের বোতল আর ইয়ার প্লাগ।

কলকাতায় কবে আসবেন জানতে চাওয়ায় বললেন “আরে কলকাতা যাওয়া কোনও একটা ব্যাপার হলো কলকাতা যেতে তো আমার মাত্র দুশো টাকা খরচ। দেশে ফিরে আমি তোমার জন্য ইলিশ নিয়ে যাব, তুনি আমার জন্য লুচি ছোলার ডাল রান্না করে রেখো”। বলেই হেসে গড়িয়ে পড়লেন।

ভালো কথা, ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন কাজী আসমার জন্মদিন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত