ডা. জোবায়ের আহমেদ

২৭ জানুয়ারি, ২০২০ ১২:৩৮

ভাবীদের আড্ডায়...

ফেসবুকে একজন বান্ধবী আমাকে ট্যাগ করে একটা পোস্ট দেয়। তার বাচ্চাটা স্কুলে যাওয়ার সময় সকালবেলা বমি করে। সেজন্য দুইদিন স্কুলে যেতে পারেনি।

বাংলাদেশের সব সমস্যার সমাধান পাওয়া যায় কোথায় জানেন? ভাবীদের আড্ডায়। স্কুলের সামনে ভাবীদের যে আড্ডা বসে সেখানে। ১০ জন ভাবী আমার বান্ধবীকে ২০ টা পরামর্শ দিয়েছেন। বাচ্চার বমি করা নিয়ে বিভিন্ন মেডিকেলীয় বিশ্লেষণ করেছেন। কিন্তু বান্ধবীর আফসোস একজন ভাবীও একজন ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেননি।।

এটা আমাদের মজ্জাগত দোষ। আমরা যেই বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান রাখিনা, যেই বিষয়ের বেসিক জানিনা, সেই বিষয়েও বাঙালি তার পাণ্ডিত্য জাহির থেকে বিরত থাকেনা। অনেকে এসব পণ্ডিতদের পাণ্ডিত্য শুনে নিজের বারটা বাজায়। যখন বুঝে তখন ক্ষতি যা হবার তা হয়ে যায়।

স্কুলের সামনে ভাবীদের আড্ডা গলো কিউটনেসে ভরপুর। সেই আড্ডায় বাচ্চাদের লেখাপড়া, প্রাইভেট টিউটর, কোচিং,স্কুলের স্যারদের বিভিন্ন রূপ ব্যবচ্ছেদ করা হয়। এটা আমি পজেটিভলি দেখি। তবে সেই আড্ডা গুলো থেকে ভাবীরা একধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ নিয়ে বাসায় ফিরেন যা তারা নিজ বাচ্চার উপর প্রয়োগ করেন।। তার পরিণতিতেই আমরা দেখি জেএসসি, এসএ সি পরীক্ষায় এ-প্লাস না পাওয়ার কারণে বাচ্চাদের আত্মহত্যা।

বাচ্চাদের লেখাপড়া ছাপিয়ে ভাবীদের আড্ডা মুখরিত হয় অন্য ভাবীর হাজবেন্ড ও সংসারের মুখরোচক গল্প দিয়ে। কোন ভাবীর হাজবেন্ড ফেসবুকে কী পোস্ট দিয়েছেন, কোন ভাবীর হাজবেন্ডের পোস্টে কোন মহিলা কী কমেন্ট করেছেন তাও আলোচনার বিষয়।

এইসব আড্ডায় খুব সূক্ষ্মভাবে অনেক ভাবী অন্যের সাজানো সংসারে বিষ ঢুকিয়ে দেন। স্বামী, দেবর, ননদ ও শাশুড়ি- শ্বশুর নিয়ে তীব্র বিষোদগার করা হয় এইসব আড্ডায়। এতে একজন সরলপ্রাণ নারীও পরশ্রীকাতরতায় আক্রান্ত হন। কীভাবে জামাইকে টাইট দিতে হয়, শাশুড়িকে টাইট দিতে হয়, দেবর-ননদকে ভাই থেকে আলাদা করা যায় তার ট্রেনিং পাওয়া যায় এখানে। কীভাবে হাজবেন্ডকে বাবা-মা-ভাই-বোন থেকে দূরে সরানো যায় তার নানা কৌশল নিয়েও বিশদ আলোচনা হয় ভাবীদের আড্ডায়।

সবচেয়ে মজাদার ব্যাপার, এক ভাবী আরেক ভাবীকে দেখলে হাসি মুখে কথা বলেন, জড়িয়ে ধরেন কিন্তু যাকে জড়িয়ে ধরলেন, তিনি উঠে গেলেই তাকে ব্যবচ্ছেদ করেন নোংরা ভাবে। সামনে বলেন, ভাবী আপনাকে কী সুন্দর লাগছে। ভাবী চলে যাওয়ার পর অন্যদের বলেন- দেখেন ভাবীরা কী খ্যাত এই ভাবী। কী লিপস্টিক দিছে দেখেন। দুই বাচ্চার মায়ের এমন লিপস্টিক কী বিশ্রী দেখায়! দেশের রাজনীতি, ওয়াজ মাহফিল, বাজার ও অর্থনীতি, শপিং ও সাজগোজ, বিউটি পার্লার, অনলাইন শপিং সব কিছু নিয়েই আলাপ হয় সেসব আড্ডায়। স্টার জলসার বিভিন্ন কাহিনী নিয়ে আড্ডাগুলো জমে উঠে।

আমি আমার বোনের বাচ্চাগুলো নিয়ে অনেকবার স্কুলে গিয়েছে। কখনো দেখলাম না একজন ভাবী নীরবে বসে একটা বই পড়ছেন। অথচ বই পড়ার একটা চমৎকার জায়গা ও সময় হিসেবে উনারা এটাকে কাজে লাগাতে পারতেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত