নিজস্ব প্রতিবেদক

০৩ মে, ২০১৫ ২১:২০

ফটোশপ-স্ক্রিনশট আতঙ্ক: ফেসবুকে নোংরামির মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে

সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইন বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেসবুকে নোংরামির মাত্রা বেড়ে গেছে। ফলে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে সাধারণ ফেসবুকারসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কখন কার নামে সত্য-মিথ্যার মিশেলে স্ক্রিনশট বের হয় এ নিয়ে উদ্বিগ্ন অনেকেই।

ফেসবুক ব্যবহারকারী অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উদ্ভুত পরিস্থিতিতে যে কেউই এর শিকার হতে পারে। ফলে পেশাগত, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হেয় হতে পারে অনেকেই। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে হতাশাও কাজ করছে। অনেকেই আবার ফেসবুক ব্যবহার বাদ দিয়ে দেবেন এমনও জানান।

শাহাব উদ্দিন, পেশায় একজন শিক্ষক জানালেন- তিনি ফেসবুক ব্যবহার করেন তাঁর বন্ধু-বান্ধবসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে। ফেসবুকের মাধ্যমে তিনি তাঁর অনেক পুরনো বন্ধুকেও ফিরে পেয়েছেন এমন উদাহরণ আছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি যে সব কাহিনীর জন্ম নিচ্ছে তাতে করে তিনি নিজে বিব্রত।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা বিপ্লব চক্রবর্তি জানান- ফেসবুকে কোন ধরণের রাজনৈতিক ব্যাপারে কোন কথা না বললেও তাঁর বন্ধুদের অনেকেই বলে থাকে। ফলে সে বিষয়গুলো তাঁর নিউজফীডে আসে কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ছেলেমেয়ের নিজস্ব ব্যক্তিগত আলাপকে অনেকে বিভিন্নভাবে বিশ্লেষণ করছে এবং তা নোংরা ভাষায়। এ পরিস্থিতিতে নিউজফীডে সে সব স্ট্যাটাস আর কমেন্টগুলো ওঠে আসায় ফেসবুকের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে পড়ছেন।

এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে অচিরেই তাঁকে ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে জানান তিনি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকে বেশ কয়েকটি দল-গ্রুপ-পেজ সক্রিয় রয়েছে যেগুলোর উদ্দেশ্য কেবল বিরোধি মতকে দমন করা। এ পরিস্থিতিতে তারা বিভিন্ন রকম নোংরা ভাষা প্রয়োগ করে দলবদ্ধভাবে অন্যেকে আক্রমণ করে থাকে। আক্রমণের প্রমাণ হিসেবে ফটোশপ ব্যবহার করে আপত্তিকরভাবে বিভিন্ন ছবি বানিয়ে থাকে এবং সেগুলোকে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করে।
এসব আক্রমণকারীদের অধিকাংশই কোন না কোন রাজনৈতিক আদর্শের বিশ্বাসি বলে তারা দাবি করে। এবং অনেকেই আবার একই আদর্শের লোককেও প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে আক্রমণ করে থাকে। এর বাইরে কেউ কেউ আবার ধর্মভিত্তিক উদ্দেশ্য নিয়ে ধর্মের পক্ষে-বিপক্ষে তাদের এক্টিভিটিজ চালিয়ে থাকে।

ফেসবুকের সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আতঙ্কিত ইস্যু স্ক্রিনশট। অনেক চেনা-অচেনা ফেসবুকার এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় ভুগছেন। নারীঘটিত ব্যাপার নিয়ে এসব স্ক্রিনশট ছাড়া হচ্ছে এবং অনেকেই এসব আলোচনায় অংশ নিচ্ছে প্রবল উৎসাহে।

লাইক-কমেন্ট প্রাপ্তির দিক থেকে ফেসবুকে অনেককেই ‘সেলিব্রেটি’ আখ্যা দিয়ে থাকে অনেকেই। এসব সেলিব্রেটিদের টার্গেট করে থাকে এক শ্রেণির ফেসবুকার। এবং তাদের নামে প্রকাশিত যে কোন ঘটনা-রটনাকে অনেকে প্রবল উৎসাহে শেয়ার করছে, ফলে সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছে অনেকেই।

আদনান আহমেদ নামের এক ফেসবুকার জানান- দুঃখের বিষয় হচ্ছে দেখে-দেখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের অনলাইন এক্টিভিস্টদের টার্গেট করা হচ্ছে যাতে করে পরবর্তিতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর যে কোন লেখা প্রকাশ হলে ব্যক্তির কারণে লেখাটা গ্রহণযোগ্যতা না পায়। দুঃখজনক হলেও সত্য যারা এসব করছে তাদেরকে আবার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পক্ষের লোকও বলা যাবে না।

ফেসবুকে স্ক্রিনশট ইস্যু নিয়ে আইটি স্পেশালিষ্ট দেবজ্যোতি চৌধুরী জানান- বর্তমানে এমনও সফটওয়্যার পাওয়া যায় যা দিয়ে খুব কম সময়ের মধ্যে যে কোন স্ক্রিনশট বানানো সম্ভব এবং ইচ্ছামত টেক্সট সেখানে বসানোও সম্ভব। তাছাড়া ফেক আইডি দিয়ে চ্যাট হিস্ট্রি তৈরি করে পরে উদ্দিষ্ট ব্যক্তির নাম সেখানে সেঁটে দিয়েও স্ক্রিনশট বানানো যায়। সুতরাং ফেসবুকে স্ক্রিনশট মানেই সত্য কোন ঘটনা নয় এবং এর মাধ্যমে কেউ বাতিল হয়ে যাবে তাও নয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত