আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০১ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০৯:৫৫

বহু দূর পথ, তবে যেতে হবে দ্রুত : জলবায়ু সম্মেলনে বান কি মুন

উষ্ণতা বৃদ্ধির রাশ টেনে এই পৃথিবীকে রক্ষা করার লক্ষ্য নিয়ে প্যারিস সম্মেলনে জড়ো হয়েছেন বিশ্বনেতারা, যাদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন।

ছয় বছর আগে কোপেনহেগের সম্মেলনে ব্যর্থ হওয়ার পর সোমবার ফ্রান্সের রাজধানীতে শুরু হওয়া বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে একটি চুক্তির জোরালো আশা সবার কণ্ঠে ঝরেছে বলে বিবিসি ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

তবে কার্বন নিঃসরণ মাত্রা ঠিক করতে উন্নত বিশ্ব এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের মতভেদের কারণে এই লক্ষ্য অর্জন যে কঠিন, তা ফুটে উঠেছে সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ মহাসচিবের বক্তব্যে।

তিনি বলেন,গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন কমাতে ১৮০টি দেশ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা বিশ্ব উষ্ণায়ন কমানোর পথে শুভযাত্রা হলেও বিশ্বের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (৩ দশমিক ৬ ফারেনহাইট) মধ্যে সীমিত রাখার জন্য তা যথেষ্ট নয়।

“প্যারিসের এ সম্মেলনে চূড়ান্ত একটি মোড় পরিবর্তন হতেই হবে। বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনতে আমাদের আরও দ্রুত আরও বহুদূর যাওয়া প্রয়োজন।”

তাপমাত্রা ওই পর্যায়ে সীমিত রাখতে পারলে জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বিশ্বকে বাঁচানো সম্ভব হবে বলে অভিমত বিজ্ঞানীদের। নইলে সমূহ ক্ষতির মুখে পড়বে বাংলাদেশসহ অনেক দেশ।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কাজ করতে হবে একসঙ্গে- এনিয়ে দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ না থাকলেও তাতে কোন দেশ কতটুকু ভূমিকা কীভাবে রাখবে, তা নিয়ে মতৈক্য না হওয়াই আটকে রেখেছে চুক্তি।

এই শতাব্দির শেষ নাগাদ বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়তে দিতে জাতিসংঘে প্রস্তাবে উন্নত দেশগুলোর সায় থাকলেও অনুন্নত রাষ্ট্রগুলো এই লক্ষ্যমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নির্ধারণের দাবিতে সোচ্চার।

এই দেশগুলোর নেতারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা কম হলেও প্রভাবটা মূলত তাদের উপর দিয়েই যায়।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কোপেনহেগেনে কপ-টোয়েন্টিতে ১০০ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল, যা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো সহায়তা পাবে। কিন্তু ওই তহবিলে উন্নত বিশ্বের কারা কী পরিমাণ অর্থ দেবে এবং তা বিতরণের পদ্ধতি কী হবে, ঝুলে থাকা সেই সমস্যা আসবে প্যারিস সম্মেলনেও।

সেই সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কার্বন নিঃসরণ কমাতে কোন দেশ কতটুকু ভূমিকা রাখবে। উন্নত দেশগুলো সবার সমান ভূমিকা চাইলেও উন্নয়নশীল বিশ্বের তাতে আপত্তি। তাদের দাবি, শিল্পোন্নত দেশগুলো একদিন যথেচ্ছ কার্বন নিঃসরণ ঘটিয়েছে, ফলে তাদের এখন ছাড় দিতে হবে বেশি।

এই চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েই প্যারিসে কপ-টোয়েন্টি ওয়ানে এক হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা থেকে শুরু করে ১৪৭ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা। কয়েকটি আগে সন্ত্রাসী হামলার কারণে সেখানে নিরাপত্তাও রয়েছে জোরদার।

সম্মেলন শুরুর দিনই বর্তমানে সবচেয়ে বেশি কার্বন নির্গমনকারী দেশ চীনের প্রেডিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন তাদের দায়িত্বশীল হওয়ার কথা।

কার্বন নির্গমনে বিশ্বের এখন দ্বিতীয় স্থানে থাকা দেশের প্রেসিডেন্ট ওবামা জলবায়ু সঙ্কট সৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রের দায় স্বীকার করে সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নেওয়ার কথাও বলেন।

তবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করতে গিয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করারও প্রয়োজন নেই বলেও মন্তব্য আসে তার।

ওবামা বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কার্বন নির্গমনকারী দেশ। এ দেশের নেতা হিসেবে আমরা শুধু এ সমস্যা সৃষ্টির জন্য আমাদের দায় স্বীকারই করছি না বরং এ সমস্যা সমাধানে নিজেদের দায়িত্ব গ্রহণেও আমরা আগ্রহী।”

এবারের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলন বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বৈশ্বিক চেষ্টায় ‘নতুন মোড়’ পরিবর্তন ঘটাতে পারে বলেও আশা প্রকাশ করেন ওবামা।

আলোচকদের একটি অর্থপূর্ণ চুক্তিতে উপনীত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “পরবর্তী প্রজন্ম কিন্তু আমাদের দেখছে।”

তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, “আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে, তবে পরিবেশের দিকেও রাখতে হবে সমান মনোযোগ।”

জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লড়াই আর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই- দুটোই এক সূত্রে গাঁথা বলে মন্তব্য এসেছে দুই সপ্তাহ আগেই সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া অলন্দের কাছ থেকে।

উদ্বোধনী ভাষণে আয়োজক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান অলন্দ বলেন, “আমি সন্ত্রাসের সঙ্গে লড়াই আর বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মধ্যে কোনো তফাত করতে পারি না।

“এ দুটোই বিশ্বে দু’টি বড় চ্যালেঞ্জ যার মোকাবেলা আমাদেরকে করতে হবে। কারণ, আমাদের সন্তানদেরকে সন্ত্রাসমুক্ত একটি বিশ্ব এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকিমুক্ত একটি ধরিত্রী উপহার দিতে হবে আমাদেরকেই।”

এসব নেতাদের এসব কথা যেন চুক্তিতে রূপান্তর হয়, সে প্রত্যাশা রেখেছেন জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক আলোচক ক্রিস্টিয়ানা ফিগারেস।

“গোটা বিশ্ব কিন্তু আপনাদের দিকেই তাকিয়ে আছে,” বলেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত