আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২৩ ১২:০৩

তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ১৭৬

তুরস্কের মধ্যাঞ্চলে সোমবার ভোরে আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৭৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১০০ জনেরই প্রাণহানি হয়েছে সিরিয়ায়, আর ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে তুরস্কে।।

তুরস্ক সরকারের তথ্যমতে, ভূমিকম্পে দেশটির অন্তত ১০টি শহর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধসে পড়েছে শত শত ভবন। এ পর্যন্ত অন্তত ৭২ জনের প্রাণহানির খবর মিলেছে, আহত হয়েছেন কয়েক শ মানুষ। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমান সোয়লু জানান, ভূমিকম্পে কাহরামানমারাস, হাতায়, গাজিয়ানতেপ, ওসমানীয়ে, আদিয়ামান, মালাত্যা, সানলুরফা, আদানা, দিয়ারবাকির ও কিলিস শহর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী সব সংস্থাকে ভূমিকম্পকবলিত এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

দুর্যোগ ও জরুরি সংস্থা ‘আফাদ’র বরাতে বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, ভূমিকম্পে মোট ৭৬ জনের প্রাণহানির খবর মিলেছে। আহত হয়েছেন ৪৪০ জন।

স্থানীয় সরকারগুলোর বরাতে আনাদোলু এজেন্সি জানায়, মালাত্যা প্রদেশে ২৩ জন, সানলুরফারে ১৭ জন, দিয়ারবাকিরে ৬ জন এবং ওসমানীয়েতে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরও বিভিন্ন এলাকায় প্রাণহানির খবর মিলছে। মালাত্যায় ১০০ জন, দিয়ারবাকিরে ৭৯ জন এবং সানলুরফাতে ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাছাড়া অনেকে এখনো ধ্বংসস্তূপে আটকা পড়েছেন।

মালাত্যার গভর্নর হুলুসি সাহিন জানান, সেখানে ধসে পড়েছে ১৩০টিরও বেশি ভবন। ওসমানীয়ে প্রদেশের গর্ভনর এরদিনচ ইলমাজ জানান, তার প্রদেশে অন্তত ৩৪ ভবন ধসে পড়েছে। আর দিয়ারবাকিরের গভর্নর আলী ইহসান সুয়ের তথ্যমতে, সেখানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে অন্তত ৬টি ভবন।

ভূমিকম্পকবলিত আরও বিভিন্ন এলাকায় অনেক ভবন একেবারে ধসে পড়ার খবর প্রকাশ হচ্ছে তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সি ও টিআরটি ওয়ার্ল্ডে।

অন্যদিকে মৃত্যুর মিছিল দেখা যাচ্ছে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিবেশী সিরিয়ায়। সেখানকার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানায়, ভূমিকম্প দেশটির পশ্চিমাঞ্চলের লাটাকিয়া থেকে রাজধানী দামেস্ক পর্যন্ত কাঁপিয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আলেপ্পো শহর, সেখানে বহু ভবন ধসে পড়েছে। ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০০ জনেরও বেশি।

ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে সিরিয়ার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘হোয়াইট হেলমেটস’।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ (ইউএসজিএস) জানায়, স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্কের মধ্য-দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ গাজিয়ানতেপের শহর নুরদায়ির ২৬ কিলোমিটার পূর্বে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এর কেন্দ্রস্থল ছিল সমতলের ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার গভীরে।

এই কম্পনের তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে, তারপর আরও কয়েকটি পরাঘাত অনুভূত হয়। নুরদায়ি শহরের আশপাশে গাজিয়ানতেপেই রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ ও ৫ দশমিক ৬ মাত্রার দুটি কম্পন অনুভূত হয়।

অবশ্য তুরস্কের ভূতত্ত্ববিদরা বলেছেন, প্রথমে আঘাত হানা ভূমিকম্পটির মাত্রা রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৪ ছিল। কয়েক মিনিট পরেই সেখানে দ্বিতীয় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।

বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, ভূমিকম্পটি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, এটি তুরস্কের নিকটতম প্রতিবেশী সিরিয়ার পাশাপাশি লেবানন এবং প্রায় ৮০০ কিলোমিটার দূরে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়ও অনুভূত হয়েছে। এমনকি তুরস্কের দক্ষিণে ভূমধ্যসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র সাইপ্রাসকেও কাঁপিয়েছে এই ভূমিকম্প।

গাজায় অবস্থানরত বিবিসির প্রযোজক রুশদি আবুয়ালোপ জানান, তিনি যে বাড়িতে ছিলেন সেখানে প্রায় ৪৫ সেকেন্ডের মতো কম্পন অনুভব করেছেন।

ভূমিকম্পের পরপরই জাতীয় দুর্যোগ ও জরুরি সংস্থাকে অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে নির্দেশনা দেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়্যব এরদোয়ান। কিছু এলাকায় সেনাবাহিনীও তৎপর হয়। উদ্ধারকাজে মোতায়েন করা হয়েছে বিমান বাহিনীর দুটি উড়োজাহাজও।

এক বার্তায় এরদোয়ান ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকদের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘যত কম ক্ষতিতে যত দ্রুত সম্ভব আমরা এই দুর্যোগ একসঙ্গে কাটিয়ে উঠবো বলে আমি আশাবাদী।’

তুরস্কের ন্যাটো জোটের মিত্র যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা এই কঠিন সময়ে আঙ্কারার পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত।

মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভান টুইটারে এক বার্তায় বলেন, ‘তুরস্ক ও সিরিয়ায় আজকের বিপর্যয়ের খবরে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যেকোনো প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তুত বলে তুরস্ককে জানাতে আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। আমরা তুরস্কের সঙ্গে সমন্বয় করে এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত