সিলেটটুডে ডেস্ক

১৪ মার্চ, ২০২৩ ১১:৪৩

নোবেলজয়ী সাহিত্যিক কেনজাবুরো ওয়ে মারা গেছেন

নোবেলজয়ী জাপানিজ সাহিত্যিক কেনজাবুরো ওয়ে মারা গেছেন। গত ৩ মার্চ বার্ধক্যজনিত কারণে তিনি মারা যান বলে জানিয়েছে তার বইয়ের প্রকাশনী সংস্থা কোডানশা। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।

ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে। ১৯৯৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান তিনি। বিচারকরা তার উপন্যাসগুলোকে ‘রহস্যময়ভাবে কাব্যিক’ হিসেবে প্রশংসা করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তার লেখায় ছিল ফরাসি ও মার্কিন সাহিত্যের শক্তিশালী প্রভাব। সামরিকবাদ ও পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ থেকে শুরু করে নিষ্কলুষতা ও ট্রমা ইত্যাদি বিস্তৃত বিষয় নিয়ে লিখেছেন কেনজাবুরো ওয়ে। ফিকশন আর প্রবন্ধ দুই ঘরানায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত।

কেনজাবুরো ওয়ের জন্ম ১৯৩৫ সালে পশ্চিম জাপানের এহিমে জেলায়। তার পরিবারের জমিজমার অভাব ছিল না, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানে ভূমি পুনর্গঠন হলে বেশিরভাগ সম্পত্তি হারায় পরিবারটি। যুদ্ধ যখন শেষ হলো, তার বয়স কেবল ১০। জীবনের প্রথম দশক যুদ্ধের আবহেই কাটাতে হয়েছিল কেনজাবুরোকে। লেখক হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ–পরবর্তী এক সময়ে। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরাসি সাহিত্য নিয়ে লেখাপড়া করার সময় থেকেই বিভিন্ন সাময়িকীতে প্রকাশিত তার লেখা সকলের নজর আকর্ষণ করে।

তার অনেক গল্প ও প্রবন্ধেই জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে দেখা ঘটনার কথা উঠে এসেছে। ‘দ্য সাইলেন্ট ক্রাই’ এ জাপানি সমাজের ওপর যুদ্ধের প্রভাবকে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। নোবেল কমিটি কেনজাবুরোর এ বইকে তার মাস্টারপিস হিসেবে অভিহিত করেছে।

হেনরি মিলার একবার কেনজাবুরোকে দস্তয়েভস্কির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। তার বইয়ের অনুবাদক জন নাথানের ভাষ্যে সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রে কেনজাবুরো তার নিজের মতো একটি ভাষা তৈরি করে নিয়েছিলেন। ১৯৫৮ সালে কেনজাবুরোর প্রথম উপন্যাসিকা ‘শিকু’ প্রকাশিত হয়। ২৩ বছর বয়সে লেখা ওই বই তাকে ‘আকুতাগাওয়া’ পুরস্কার এনে দিয়েছিল। একই বছরেই নিজের প্রথম উপন্যাস ‘মেমুশিরি কোউচি’ প্রকাশ করেন তিনি।

১৯৬০-এর দশকে ‘হিরোশিমা নোটস’ নামক এক প্রবন্ধ সংকলনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি পান কেনজাবুরো। পারমাণবিক বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও তাদের যত্ন নেওয়া মানুষেরা ছিলেন হিরোশিমা নোটস-এর মূল প্রতিপাদ্য।

২০১১ সালে জাপানের ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর মার্কিন সাময়িকী নিউইয়র্কারে প্রকাশিত এক নিবন্ধে ওয়ে লিখেছিলেন, পারমাণবিক চুল্লি তৈরি এবং তা প্রদর্শন করার মধ্য দিয়ে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করে মানবজীবনের প্রতি অসম্মান দেখানো হবে হিরোশিমার আণবিক বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের প্রতি সম্ভাব্য নিকৃষ্টতম বিশ্বাসঘাতকতা। এই বিশ্বাসে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অটল থেকে জাপানকে পরমাণুমুক্ত করার নাগরিক আন্দোলনে নিজেকে তিনি সব সময় সম্পৃক্ত রেখেছিলেন।

পারিবারিক জীবনে নিজের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ছেলের প্রতি মমতা আর স্নেহ প্রদর্শনের অনন্য এক দৃষ্টান্ত ওয়ে দেখিয়ে গেছেন। সেই ছেলে একসময় সংগীত রচয়িতা হয়ে ওঠে এবং ছেলের সেই সাফল্য বাবাকে কতটা আপ্লুত করেছিল, তার প্রমাণ পাঠকেরা পেয়েছেন ওয়ের রচিত বই ‘পারিবারিক বিষয়ে’।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত