
৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪ ০৯:৩১
শত বছর বয়সে মারা গেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার বিকেলে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের প্লেইনসে নিজ বাড়িতে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
জিমি কার্টারকে ‘অসাধারণ নেতা’ আখ্যায়িত করে শোক প্রকাশ করেছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে জিমি কার্টারের দায়িত্ব পালন সুখকর ছিল না। অর্থনৈতিক দুরবস্থা ও কূটনৈতিক সংকট সামলাতে না পেরে এক মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেননি তিনি। পরে মানবিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নিজের সুনাম পুনরুদ্ধার করেন জিমি কার্টার, যার স্বীকৃতি পান শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়ে।
১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর জর্জিয়ার প্লেইনসে জন্মগ্রহণ করেন জেমস আর্ল কার্টার জুনিয়র। পরে তিনি জিমি কার্টার হিসেবেই পরিচিতি পান। একজন কৃষক ও দোকানির চার সন্তানের একজন ছিলেন তিনি।
জিমি কার্টার যুক্তরাষ্ট্রের নেভাল একাডেমি থেকে ১৯৪৬ সালে স্নাতক পাস করেন। এরপর পারমাণবিক সাবমেরিন কর্মসূচিতে কাজ করেন। পরবর্তী সময় এই চাকরি ছেড়ে পরিবারের বাদাম চাষাবাদের ব্যবসা দেখভালের দায়িত্ব নেন।
কিশোর বয়স থেকেই সাউদার্ন ব্যাপ্টিস্ট সানডে স্কুলের শিক্ষক ছিলেন জিমি কার্টার। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনেও শক্তিশালী নৈতিকতার চেতনা নিয়ে আসেন তিনি। কোনো রাখঢাক ছাড়াই নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয়টি প্রকাশ করতেন জিমি কার্টার।
জর্জিয়া থেকে কংগ্রেস সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জর্জিয়ার গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান। ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো প্রেসিডেন্টের চেয়ে সবচেয়ে দীর্ঘায়ুর অধিকারী প্রেসিডেন্ট কার্টার ১৯৭৭-এর জানুয়ারি থেকে ১৯৮১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী রোনাল্ড রিগ্যানের কাছে পরাজিত হয়ে হোয়াইট হাউস ছাড়েন তিনি।
জিমি কার্টার প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক দুর্দশা চলছিল। তার শাসনকালেই ইরানে মার্কিন দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের ৫২ জন কূটনীতিক ও নাগরিককে জিম্মি করা হয়েছিল। তিনি ক্ষমতা ছাড়ার পর এই জিম্মিদশার অবসান হয়। অবশ্য ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে কার্টারের ভূমিকা ছিল। এর মধ্য দিয়ে মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে শান্তিচুক্তি সম্ভব হয়।
হোয়াইট হাউস ছাড়ার পর দশকের পর দশক ধরে বিভিন্ন মানবিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত রাখেন জিমি কার্টার। এর মধ্যে রয়েছে মানবাধিকার রক্ষা, দেশে দেশে দারিদ্র্য হ্রাসে কর্মসূচিও। আন্তর্জাতিক সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পেতে নিরলস প্রচেষ্টা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতি সাধন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে ২০০২ সালে তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।
জিমি কার্টারের মৃত্যুর পর তার ছেলে চিপ কার্টার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমার বাবা একজন নায়ক ছিলেন। শুধু আমার কাছেই নন, যারা শান্তি, মানবাধিকার ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় বিশ্বাস করেন, এমন সবার কাছেই।’
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের স্মৃতিকথা থেকে শুরু করে শিশুসাহিত্য— দুই ডজনেরও বেশি বই লিখেছেন জিমি কার্টার। ধর্মীয় বিশ্বাস ও কূটনীতি নিয়েও তিনি লেখালেখি করেছেন। ২০১৮ সালে তার ‘ফেইথ: আ জার্নি ফর অল’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।
আপনার মন্তব্য