
০৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১০:১৩
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন বলে জানানো হয়েছে তার কার্যালয় এলিসি প্যালেস থেকে।
দুই দিনের জরুরি আলোচনা শেষে গতকাল বুধবার (৮ অক্টোবর) এই ঘোষণা আসে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুর।
লেকর্নু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন দেশটির চলমান অচলাবস্থা নিরসনের জন্য। গত রোববার তার ঘোষিত মন্ত্রিসভা কাঠামো দেশটির জোটসঙ্গী ও বিরোধী—উভয় পক্ষই প্রত্যাখ্যান করেছিল।
এলিসি কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, লেকর্নুর আলোচনায় অংশ নেওয়া দলগুলোর অধিকাংশই সংসদ ভেঙে আগাম নির্বাচনের বিপক্ষে মত দিয়েছে। তাদের মতামত অনুযায়ী, বছরের শেষ নাগাদ বাজেট পাস করার মতো একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতি আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দেবেন।’
ম্যাক্রোঁ লেকর্নুর প্রচেষ্টার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বলেও জানানো হয়।
এর আগে অনিশ্চয়তা ছিল- ম্যাক্রোঁ কি লেকর্নুকে আবার নিয়োগ দেবেন, নাকি নতুন কাউকে বেছে নেবেন, কিংবা সংসদ ভেঙে আগাম নির্বাচন ডাকবেন- এমনকি নিজে পদত্যাগ করবেন কি না, সেটিও ছিল আলোচনার বিষয়।
ম্যাক্রোঁ গত সেপ্টেম্বর মাসে লেকর্নুকে- যিনি গত দুই বছরের মধ্যে তার নিয়োগ দেওয়া পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী- নতুন সরকার গঠনের দায়িত্ব দেন। কারণ, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বাইরুকে সংসদ অনাস্থা ভোটে সরিয়ে দিয়েছিল। বাইরুর প্রস্তাবিত কৃচ্ছ্রনীতি বাজেটকে দায়ী করা হয় ক্রমবর্ধমান ঋণ সংকটের জন্য।
লেকর্নু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি বাইরুর নীতির বাইরে গিয়ে কাজ করবেন। কিন্তু গত রোববার সন্ধ্যায় ঘোষিত তার মন্ত্রিসভায় আগের সরকারের বেশ কয়েকজন বিতর্কিত মুখ থাকায় ডান ও বাম- দুই শিবিরই তীব্র সমালোচনা করে।
এর পরদিন লেকর্নু পদত্যাগ করেন। ফলে তার মাত্র ১৪ ঘণ্টার মেয়াদই আধুনিক ফরাসি ইতিহাসে সবচেয়ে স্বল্পস্থায়ী সরকার হিসেবে রেকর্ড গড়ে। তবে পরে তিনি ঘোষণা দেন, ম্যাক্রোঁর অনুরোধে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের বিষয়ে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দলগুলোর সঙ্গে আরও এক দফা আলোচনা করবেন।
এই ঘটনাপ্রবাহ ম্যাক্রোঁকে আরও একবার বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও একসময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এদুয়ার ফিলিপসহ অনেকেই এখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দাবি তুলেছেন।
গতকাল বুধবার ফরাসি টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লেকর্নু বলেন, সংসদ ভাঙার সম্ভাবনা আপাতত ক্ষীণ, কারণ অধিকাংশ সংসদ সদস্য এর বিপক্ষে। তিনি বলেন, ‘আমি সব চেষ্টা করেছি। আজ রাতেই আমার দায়িত্ব শেষ।’
লেকর্নু ইঙ্গিত দেন, নতুন সরকার সম্ভবত বেশি প্রযুক্তিনির্ভর ও কম রাজনৈতিক হবে। তার মতে, নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত নয়।
তিনি আগাম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ডাকার দাবিও প্রত্যাখ্যান করেন। বলেন, ‘এখন প্রেসিডেন্ট বদলের সময় নয়। জনগণের বোঝা উচিত, বাজেট পাস করার দায়িত্ব প্রেসিডেন্টের নয়।’
ফ্রান্সের সংসদ বর্তমানে বিভক্ত অবস্থায় আছে। গত বছর ম্যাক্রোঁ ডানপন্থীদের উত্থান ঠেকাতে আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছিলেন, কিন্তু ফল হয় উল্টো- সংসদ ঝুলন্ত অবস্থায় পড়ে। ফলে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি।
এ অবস্থায় ফ্রান্সের ঋণ সংকট মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় বাজেট পাস করা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে, ব্যয় সংকোচনমূলক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলো আগাম নির্বাচনের দাবি জানিয়ে নতুন সরকার গঠনের যেকোনো প্রচেষ্টা ঠেকানোর অঙ্গীকার করেছে।
ফলে ফ্রান্স এখন রাজনৈতিক অচলাবস্থা, জনঅসন্তোষ ও অর্থনৈতিক চাপে জর্জরিত। এই পরিস্থিতিতেই আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ—যা তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যও বড় পরীক্ষা হয়ে দেখা দিতে পারে।
আপনার মন্তব্য