
০৮ অক্টোবর, ২০২৫ ১৬:০৫
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, আমার দলের চেয়ারম্যানের কাছে বলে দিয়েছি, নির্বাচন করলে যদি আমাকে সংসদ সদস্য দেন, তাহলে সিলেট-১ দিতে হবে। আর যদি সংসদ সদস্য না দেন, তাহলে আমাকে ডিক্লেয়ার করতে হবে এই এলাকায় আমাকে মেয়রের...। আমি এটা বলছি। না হলে আমাকে বলতে হবে, আপনাকে দিয়ে হবে না; আমি আসসালামু আলাইকুম। মধ্যখানে কোনো কিছু থাকবে না।’
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিলেট নগরের মেজরটিলা এলাকায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা সংবলিত লিফলেট বিতরণ কর্মসূচির পর আয়োজিত এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
দলীয় চেয়ারম্যান বলতে বেগম খালেদা জিয়া না তারেক রহমানকে এমনটি বলেছেন তা পরিষ্কার করেননি আরিফুল হক। যদিও সম্প্রতি তিনি লন্ডন গিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, আমাকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র, অনেক চক্রান্ত বিভিন্নভাবে চলে, চলুক। নিয়ত সাফ করে কাজ করলে আল্লাহ তাআলা সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ। আমি এখনো স্থির করি নাই।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা শুকুর আহমদ, যুগ্ম সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদ সিদ্দিকী, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, কৃষক দলের সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান প্রমুখ।
এ সময় বিএনপিকে নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে দাবি করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আপনাদের একটা কথা বলে রাখি, বিএনপি যাতে সংসদে যেতে না পারে, সরকার গঠন করতে না পারে, তার জন্য একটা বিশেষ দল, বিশেষ মহল, নতুন নতুন ফর্মুলা দিয়ে মাঠে-ময়দানে কাজ করছে। আগে আওয়ামী লীগে ঘুম থেকে উঠে বলত বিএনপি ওতা করে, বিএনপি হতা করে, বিএনপি বিএনপি বিএনপি জপতে জপতে তালু জিহ্বা এক করে ফেলত। আর এখন একদল আছেন নাম নেয় না, শুধু একটি বিশেষ দল, একটি বিশেষ দল বলে।’
সেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ারি করে সিলেট সিটি করপোরেশনের এই মেয়র বলেন, ‘আমরার নাম মুখে আনবা না, নাইলে আমরাও হুঁশিয়ার, শেষে আমরাও সবতা কওয়া শুরু করি দিমু। কেউ এত ফেরেশতা না, ধোয়া তুলসীপাতা না। কে চান্দা নেয়, ইতা জনগণে সবতা জানইন। আমার ডানে-বাঁয়েও যদি দেখউন, এরা জমি দখল করে, চাঁদাবাজি করে। তাহলে আমারে জানাইন, আপনারা জনগণের চোখ কান খোলা রাখবা। কোনো সন্ত্রাসী, কোনো চাঁদাবাজি, কোনো দখলদার—এদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবা। যেইন তাইন এরারে নিয়া চলবা, তারারেও আসসালামু আলাইকুম কই দিবা।’
সমাবেশে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ও রেলযোগাযোগের দুরবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আজকে দেখুক্কা সিলেট থাকি ঢাকা যাইতে কত সময় লাগে। সাইফুর রহমানে (সাবেক অর্থমন্ত্রী) করি দিছলা। তিন ঘণ্টা, চার ঘণ্টায় সিলেট থাকি ঢাকা আইছি। ১৭ বছরে এমন উন্নয়ন হইছে, উন্নয়নের মহাসড়কে এখন ঢাকা থাকি সিলেট আইতে ১২ ঘণ্টা লাগে, ১৫ ঘণ্টাও লাগে। এই অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না।’
দ্রুত এই অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থার সংস্কারকাজ শুরু না হলে সিলেটবাসীকে নিয়ে কঠোর আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সিলেটের সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘চিটাগাং সুন্দর করবা, উত্তরবঙ্গে ব্রিজ অইব আর সিলেটরে যা খুশি করবা, ইটা আর হতে দেওয়া যায় না। সিলেটের কথা আইলেই অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ, সিলেটের কথা আইলেই সরকারের কাছে টেকা নাই। তো হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ কইরা এই সব ব্রিজ, কালভার্ট অন্যান্য অঞ্চলে হয় কীভাবে? চিটাগাং স্বর্গ বানাউক্কা, আমার কোনো আপত্তি নাই; আরও অঞ্চলেও হোক, খুশি হইমু। কিন্তু আমরা সিলেটিরা বাদ যাব কেন?’
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুরবস্থার প্রসঙ্গ টেনে আরিফুল হক বলেন, ‘আজকে একটা অসুস্থ রোগী নিয়া যাওয়া যায় না, রোগী রাস্তায় মারা যাইতাছে। ট্রেনের অবস্থা সেইম (একই)। সারা বাংলাদেশে নতুন নতুন ট্রেন, কম্পার্টমেন্ট (বগি)। সিলেটে টাডা (বজ্রপাত) পড়ছে! রেল কর্তৃপক্ষ এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়রে কই, রাস্তা পুনর্নির্মাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্পেশাল দুইটা ট্রেন বরাদ্দ করা হোক ঢাকা-সিলেটে এবং নতুন কম্পার্টমেন্ট দেওয়া হোক। এখানে (সিলেট রেলস্টেশন) যারা আছে, তারা কম্পিউটারে আগে টিকিট নেয়গি, পরে বেশি দামে বেচত চায়। এনতান (তাদের) পেছনে আমরা জনগণ থাকমু, ইনশা আল্লাহ। তানতানরেও ধরমু। পাবলিক ডিমান্ড না মানলে আন্দোলন হইব এবার।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সড়ক, রেলপথের দুরবস্থার সুযোগ পাইয়া এখন বিমানে ৩ হাজার টাকার টিকিট ১২ হাজার টাকা করতাছে। এমন মোরগা পাইছে আমরার সিলেটি হকলরে, যা খুশি তা-ই করতাছে। বিমান কর্তৃপক্ষ যদি এইটার সমাধানে ব্যবস্থা না করে, তানতান বিরুদ্ধেও আমরা জনগণ ব্যবস্থা নিমু। আমরার রাস্তা দিতে হইব ঠিক করি, বিমানের ভাড়া কমাইতে হইব।’
আপনার মন্তব্য