সিলেটটুডে ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

০৩ জুন, ২০১৬ ২২:৩৮

ভারতে ধর্ষনের দায়ে বাংলাদেশি গবেষকের যাবজ্জীবন

পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া এক বাংলাদেশি ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে অপর এক বাংলাদেশি গবেষককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয় সিউড়ির বিশেষ আদালত। ওই ছাত্রীর স্থানীয় অভিভাবকও ছিলেন তিনি।

ভারতের বীরভূম জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটির রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের অনুপস্থিতিতে এ দিন বিশেষ আদালতে উপস্থিত ছিলেন আর এক সরকারি আইনজীবী সমিদুল আলম।

তিনি জানান, সিউড়ির বিশেষ আদালতের বিচারক মহানন্দ দাস সফিকুল ইসলামকে বুধবার দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। এ দিন তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। পাশাপাশি নির্যাতিতার পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশে দিয়েছেন।

ঢাকা থেকে বিশ্বভারতীর পাঠভবনে পড়তে এসেছিল দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী। সিরাজগঞ্জের দাদপুরের বাসিন্দা সফিকুল তখন বিশ্বভারতীর পল্লী সংগঠন বিভাগে গবেষণা করছেন। পাঠভবনের ছাত্রীটির পরিবারের পূর্ব পরিচিতও ছিলেন সফিকুল।

ছাত্রীটির পরিবারের সদস্যেরা তাই বিশ্বাস করে সফিকুলকেই তাদের বাড়ির মেয়ের স্থানীয় অভিভাবকের স্থান দেন। কিন্তু সফিকুলই যে এভাবে তাদের বিশ্বাসে আঘাত করবেন, তা তারা ভাবতে পারেননি!

নির্যাতিতার অভিযোগ, শান্তিনিকেতনের গুরুপল্লী এলাকায় যে ভাড়া বাড়িতে সফিকুল থাকতেন, সেখানে ডেকে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের ছবি তুলে রেখে তাকে ব্ল্যাকমেইল করেছেন সফিকুল। শেষে ২০১৪ সালের ৫ ডিসেম্বর শান্তিনিকেতন ফাঁড়িতে লিখিত অভিযোগ করে নির্যাতিতা।

আইনজীবী সমিদুল আলম জানান, পরের দিন গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্তকে। ওই গবেষকের বাড়ি থেকে ল্যাপটপ, পেনড্রাইভ, সিমকার্ডসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র পুলিশ উদ্ধার করেছে। ঘটনার খবর জানাজানি হতে নড়েচড়ে বসেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষও। সফিকুলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে বিশ্বভারতী। নির্যাতিতা নাবালিকা হওয়ায় মামলা যায় সিউড়ির বিশেষ আদালতে। শিশুদের যৌন নির্যাতন রোধে আইনের আওতায় মামলার বিচার শুরু হয়।

তিনি আরো বলেন, নির্যাতিতার বন্ধু-শিক্ষিকাসহ মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য নিয়েছে আদালত। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে দোষ প্রমাণিত হয়েছে। সেজন্যই তার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী সোমনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, অভিযোগকারী নাবালিকা ও বিদেশি হওয়ায় এতো কঠোর সাজা হয়েছে।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপন দ্ত্ত জানান, ‘আদালত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছে। স্থানীয় অভিভাবক হওয়ার সুযোগ নিয়ে আর কেউ যাতে এমন না করতে পারে, এই শাস্তি সেই বার্তাই দেবে বলে আমাদের আশা।

এদিন আদালতে নির্যাতিতার পরিবারের কেউ ছিলেন না। তবে বিশ্বভারতীতে ছাত্রীদের উপরে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ আগেও উঠেছে। এক্ষেত্রে অভিযুক্তের শাস্তি স্বস্তির বার্তা এনেছে অন্য নির্যাতিতার পরিবারেও।

তেমনই একজন সিকিম থেকে অনেক আশা নিয়ে কলাভবনে পড়তে এসেছিলেন দুই বছর আগে। ২০১৪ সালে অাগস্টে প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল ‘সিনিয়র’ তিন ছাত্রের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তেরা এখন জামিনে মুক্ত। আর নির্যাতিতা মাঝপথে পড়া ছেড়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সিকিমে তার পরিবারের সঙ্গে রয়েছেন। তার পরিবার জানিয়েছে, মেয়েদের সর্বনাশ যারা করে, তাদের এমনই শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তারা বিচার কবে পাবেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত