দেবকল্যাণ ধর বাপন, কলকাতা থেকে

১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০১:২০

কলকাতায় শেষ হল ‘বাংলাদেশ বইমেলা’

‘বইয়ের বন্ধুত্ব সীমানা ছাড়িয়ে’ এই স্লোগান নিয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর '১৬ (বৃহস্পতিবার) থেকে কলকাতায় শুরু হয়ে  ১০ সেপ্টেম্বর (শনিবার) শেষ হয়েছে ষষ্ঠ ‘বাংলাদেশ বইমেলা’।

বরাবরের মত এবারেও কলকাতার রবীন্দ্রসদনের নন্দন চত্বরে  দুপুর ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে বাংলাদেশের ৫০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ১৮০ ধরণের বই নিয়ে তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছিল।

প্রতিদিন বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকলেও। শনি ও রোববার বিকাল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলার সময়সীমা নির্ধারণ করা ছিলো।

বই মেলার সমাপনি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উপ হাই কমিশনার জকি আহাদের সভাপতিত্বে  প্রধান অতিথি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহা পরিচালক  ফয়জুল লতিফ চৌধুরী ও মেলা পরিচালনা কমিটির পরিচালক মোঃ শিহাব উদ্দিন ভূঁইয়া, মোঃ সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহযোগিতায় এবং কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের ব্যবস্থাপনায় জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি ছয় বছর ধরে কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলার আয়োজন করে আসছে। প্রদীপ প্রোজ্জ্বলনের মধ্যে দিয়ে সমাপ্তি ঘটে এবারে বাংলাদেশ বইমেলা কলকাতা ২০১৬ 'র।

এর আগে ১ সেপ্টেম্বর এবারের বাংলাদেশ বইমেলার উদ্বোধন করেছিলেন এমিরেটাস অধ্যাপক ও বাংলা একডেমির সভাপতি আনিসুজ্জামান। কলকাতায় বাংলাদেশের উপ হাই কমিশনার জকি আহাদের সভাপতিত্বে এতে  অতিথি ছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলা সরকারের স্কুল ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, তথ্য ও সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি উপস্থিত ছিলেন।

সংস্কৃতি সচিব আকতারী মমতাজ জানান, প্রথম তিন বছর মেলাটি গণকেন্দ্র শিল্প সংগ্রহশালায় হলেও গত দু'বছর ধরে রবীন্দ্র সদনের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে হয় আসছে। তাই গত দুই বছরের মতো রবীন্দ্রসদনের নন্দন চত্বরে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণেই বাংলাদেশ বইমেলা কলকাতা ২০১৬ অনুষ্ঠিত হলো।

মেয়াদ মাত্র ১০ দিন। তা সত্ত্বেও কলকাতার মন কেড়ে নিয়ে গেল বাংলাদেশের বইমেলা৷ নন্দন-রবীন্দ্রসদন চত্বরে নিয়মিত আড্ডা দিতে আসা যুবক-যুবতীরা তো বটেই, বইমেলায় ঘুরে গেলেন মহানগরীর অসংখ্য বইপ্রেমী।

মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে মেলা কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ কালে জানা যায়, বাংলাদেশের বই এবং বাংলাদেশী লেখকদের ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পরিচিত করানোর উদ্দেশ্য নিয়েই এই বই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।


শেষ দিনে সমাপনী অনুষ্ঠানের আগের সন্ধ্যায় এবারের বইমেলা নিয়ে কথা হয়েছিল কলকাতায় বাংলাদেশের উপ হাই কমিশনার জকি আহাদের সাথে। তিনি বলেন "এই ধরনের আয়োজন খুব আশাব্যাঞ্জ। আজ ৬ষ্ট বাংলাদেশে বইমেলার শেষ দিন।বাংলাদেশের লেখকদের পরিচিত করাই এর মূল লক্ষ্য। আজ  এবং গত ৯ দিন আমি যে হারে লোক সমাগম দেখেছি আর বই বিক্রি হতে দেখেছি,  পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সাড়া দেখে সত্যিই আমি মুগ্ধ। আমাদের তথা বাংলাদেশের আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে যে একটা মৈত্রি সম্পর্ক রয়েছে এভাবে চললে এটাকে আরো উত্তর উত্তর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে"।



কলকাতার বই প্রেমিদের ভালোবাসায় প্রথমত বই, দ্বিতীয়ত বাংলা বই৷ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিদের মধ্যে যে আত্মীয়তার যোগসূত্রগুলো রয়েছে, তাদের অন্যতম মাধ্যম এই বাংলা বই৷ কাজেই কলকাতা শহরে যদি বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত বইয়ের প্রদর্শনী হয়, তা হলে একটা দিনও যে বৃথা যেতে দেবেন না বাঙালি পাঠক, তা সম্ভবত প্রত্যাশিতই ছিল৷ কার্যত সেটাই ঘটল৷ দলে দলে বইপ্রেমীরা ভিড় জমালেন রবীন্দ্রসদনের নন্দন চত্বরে। মেলার শেষের দিনেও ঘটেনি তার ব্যতিক্রম।

এবারের বই মেলায় অন্যান্য বারের মতাই কলকাতার সাহিত্যপ্রেমী মানুষের সমাগম মুগ্ধ করে । সেই সঙ্গে প্রতিদিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাংলাদেশের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে উপস্থাপন করছে। আমাদের সংস্কৃতিকে পরিচিত করে তুলছে ভিনদেশে।



এবারের বইমেলায় দেখা হয়েছে বাংলাদেশের তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনের সঙ্গে। প্রথম বারের মতো দেশের বাইরে বইমেলায় আসার সুযোগ হয়েছে তার।

তিনি বলেন, “ছোটবেলা থেকেই বইপত্রে কলকাতার কথা অনেক পড়েছি, শুনেছি ও জেনেছি। কলকাতা আমার কাছে একটা স্বপ্নের শহর। আর এই শহরে আমি প্রথম এলাম, তাও আমার বই নিয়ে। আমার ধারনা ছিল না এখানে কেউ আমার বই কিনবেন কিনা! কিন্তু মজার ব্যাপার হলো জানুয়ারির কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা ২০১৬'তে প্রথম দুই দিনেই বইগুলো বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। আর এবার সশরীরে এসে দেখি এখানে অনেকেই আমাকে চেনেন ও জানেন। ডেকে ছবি তুলছেন, বই কিনছেন, অটোগ্রাফ নিচ্ছেন। স্বপ্নের এই শহরে স্বপ্নিল অনুভূতি।”

২০১১ সাল থেকে প্রতি বছর কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশন, কলকাতা ও বাংলাদেশের জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির প্রচেষ্টায় এই বইমেলা আয়োজন করা হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত