সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ অক্টোবর, ২০১৬ ০১:০১

রামপাল প্রকল্পের বিরোধিতা ভারতেও

বাংলাদেশের মত ভারতেরও বেশ কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন রামপালে কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের বিরোধিতা করে এ প্রকল্প থেকে ভারতকে সরে যাওয়ার দাবি জানিয়েছে। পরিবেশ এবং প্রান্তিক মানুষদের জন্য কাজ করা অন্তত বিশটি ভারতীয় সংগঠন বলছে বাংলাদেশের রামপাল প্রকল্পের ফলে শুধু বাংলাদেশের ভেতরে নয়, ভারতীয় সুন্দরবন এবং পূর্বভারতের উপকূল অঞ্চলেও পরিবেশ ও মানুষের জীবিকার ওপর এর প্রভাব পড়বে।

এ বিষয়ে তারা ভারত সরকারের ওপরে চাপ বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের বেশ কিছু পরিবেশবাদী সংগঠন ও তেল-গ্যাস ও বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি রামপালের বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে। এ নিয়ে বাংলাদেশে বেশ কিছু কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এদিকে, সুন্দরবনের ক্ষতি হবে এমন অভিযোগ করে রামপাল প্রকল্পের স্থান পরিবর্তনের দাবিও জানিয়েছে জাতিসংঘের ইউনেস্কো।

পরিবেশবাদী এবং বনাঞ্চলের মানুষদের জীবন-জীবিকা নিয়ে কাজ করা ভারতীয় সংগঠনগুলো বলছে, বাংলাদেশে যেভাবে রামপাল বিরোধী আন্দোলন চলছে, তারপরেও ভারতের ওই প্রকল্পে জড়িত থাকা কখনই উচিত হবে না। প্রকল্পটি সুন্দরবনের কিছুটা বাইরে তৈরি হলেও তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব গোটা সুন্দরবন এবং তার বাইরের এলাকাতেও পড়তে বাধ্য বলেই মনে করছে তারা।

বনাঞ্চল বা পরিবেশ যেহেতু কোনও ভৌগলিক সীমারেখা মানে না, তাই ভারতের সুন্দরবন এবং পূর্বভারতের উপকূলীয় এলাকাগুলিতেও রামপাল প্রকল্পের প্রভাব পড়তে বাধ্য বলে মনে করছে এ সংগঠনগুলো।

অল ইন্ডিয়া ইউনিয়ন অফ ফরেস্ট ওয়ার্কিং পিপল বনাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা নিয়ে আন্দোলন করে থাকে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অশোক চৌধুরীর বলেন, "সুন্দরবনের ওপরে প্রভাব পড়লে যে বিপর্যয় নেমে আসবে, তা থেকে আমাদের সুন্দরবনও বাদ থাকবে না। আর পূর্ব উপকূলের বিস্তীর্ণ অঞ্চলেও এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। ম্যানগ্রোভ অরণ্যই তো সমুদ্র থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই অঞ্চলকে, তাই ম্যানগ্রোভ যদি চলে যায়, তার প্রভাব কতটা সুদূরপ্রসারী হতে পারে, আমরা সেটা কল্পনাও করতে পারব না।"

রামপাল-বিরোধিতায় যে ভারতীয় সংগঠনগুলো নেমেছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল এলায়েন্স ফর পিপলস মুভমেন্ট বা এন এ পি এম। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন সহ বিভিন্ন সংগঠনের জাতীয় মঞ্চ এটি।

সংগঠনের আহবায়ক মধুরেশ কুমার বলেন, "ভারতের করদাতাদের অর্থ কখনই প্রতিবেশী কোনও দেশে উন্নয়নমূলক সাহায্যের নামে পাঠানো উচিত নয়, যখন সেদেশের মানুষরাই এই প্রকল্পের বিরোধিতা করছেন। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের অবদানের কারণে সেদেশের মানুষদের কাছে ভারত সমাদৃত - কেন সেটা নষ্ট করা হচ্ছে একটি মাত্র বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য?"

কুমার আরও বলেন, এ প্রকল্পে যদিও এখন ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিই সামনে রয়েছে কিন্তু সবাই জানে আসলে কোন ব্যবসায়িক গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িয়ে আছে রামপালে!

প্রশ্ন আরও উঠছে, যেখানে ভারতের আদালত নানা সময়ে পরিবেশগত কারণে বিদ্যুৎ প্রকল্প আটকিয়ে দিয়েছে, সেখানে প্রতিবেশী দেশের পরিবেশ নষ্ট করতে পারে, এমন একটি প্রকল্পে কেন ভারত সরকার সাহায্য করছে।

অশোক চৌধুরী বলেন, "বাংলাদেশে যদি পরিবেশগত ছাড়পত্র সহ কঠোর নিয়মকানুন না-ও থাকে, তবুও ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলির তো নৈতিক দায়িত্ব যে ভারতের পরিবেশ আইন মেনেই কাজ করা! সেগুলো তো তারা করছে না রামপালের ক্ষেত্রে!"

"পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুরে নয়াচর-নন্দীগ্রামে পেট্রো রসায়ন হাব তৈরির কাজ থেকে কেন্দ্রীয় সরকার পিছিয়ে এসেছে যে সেটি সুন্দরবন আর সমুদ্র উপকূলের খুব কাছে এবং ওই প্রকল্প হলে পরিবেশ নষ্ট হতো, এই যুক্তিতে। এখন তাহলে পার্শ্ববর্তী দেশের পরিবেশের ব্যাপারে কেন সরকার অন্য সুরে কথা বলছে?" প্রশ্ন মধুরেশ কুমারের।

অশোক চৌধুরী নিজে রামপাল বিরোধী লংমার্চে অংশ নিতে গিয়েছিলেন সংগঠনের আরও কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে। তিনি বলেন, ওই লংমার্চে যেভাবে ভারত বিরোধী স্লোগান উঠতে শুনেছেন তাঁরা, সেই মনোভাব কাজে লাগাতে পারে কট্টরপন্থী সংগঠনগুলো। ভারতের কখনই ওইসব কট্টরপন্থীদের সুযোগ করে দেওয়া উচিত হবে না।

আপাতত যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত, তাদের কাছে এবং সরকারের কাছে আবেদনই জানানো হবে বলেই এই সংগঠনগুলি ঠিক করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষকেও রামপালের ক্ষতিকর দিকগুলি নিয়ে সচেতন করে একটা দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে এই সংগঠনগুলির।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত