অনলাইন ডেস্ক

২১ অক্টোবর, ২০১৬ ০২:০৮

বিতর্কে হিলারির তিনে তিন

তৃতীয় ও শেষ বিতর্কেও সুস্পষ্ট জয় পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। প্রথম ও দ্বিতীয় বিতর্কের মত এবারও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি, সিএনএন, এএফপি ও রয়টার্স।

মার্কিন ভোটারদের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকা প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে হিলারির এই তিনে তিন জয় তার হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পথ আরও সুগম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, বিতর্কে জয় তো দূরের কথা, হিলারির কাছাকাছিও যেতে না পারায় প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা সামনের দিনগুলোতে হ্রাস পাবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ৮ নভেম্বরের নির্বাচনের আগে দুই প্রার্থীর হাতে আছে আর মাত্র ১৮ দিন।

স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা) লাস ভেগাসের নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় ও শেষ দফার বিতর্কে মুখোমুখি হন দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ফক্স নিউজের সাংবাদিক ক্রিস ওয়ালেসের সঞ্চালনায় বিতর্কটির স্থায়িত্ব ছিল ৯০ মিনিট।

বিতর্ক শেষে সিএনএন/ওআরসির দর্শক জরিপ বলছে, ৫২ শতাংশ মার্কিনি মনে করেন, বিতর্কে হিলারিই জয়ী হয়েছেন। আর ৩৯ শতাংশের বিশ্বাস, ট্রাম্পই আসল বিজয়ী।

তাৎক্ষণিক এ জরিপে ৫৪৭ জন নিবন্ধিত ভোটার তাদের মতামত প্রকাশ করেন। প্রতিযোগীদের আচরণ, বলার ভঙ্গিমা, ভাষার ব্যবহার, বিষয়বস্তু নির্ধারণ, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও নিজেকে সুরক্ষার কৌশল, কে বেশি সময় নিচ্ছেন- এসব খুঁটিনাটি বিষয় বিশ্লেষণ করেই ভোটাররা তাদের রায় দিয়েছেন।

প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই-বাছাই ও তাদের দেশনীতি-বিশ্বনীতি ভোটারদের মধ্যে মেলে ধরার এ 'প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেট' যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সাধারণত, এ বিতর্কে হারজিতের ওপরই প্রার্থীদের 'নির্বাচনী ভাগ্য' অনেকাংশে নির্ধারিত হয়ে যায়। সে হিসেবে মার্কিন মসনদে হিলারির ভাগ্যই সুপ্রসন্ন।

তৃতীয় দফা বিতর্কে বিচার ব্যবস্থা, অস্ত্র আইন, গর্ভপাত, সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও করছাড়, অভিবাসনের পাশাপাশি পররাষ্ট্রনীতি এবং সিরিয়া ইস্যু নিয়ে তুমুল বাগযুদ্ধ হয় দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে। প্রতিটি ইস্যুতে হিলারির চেয়ে ম্লান ছিলেন ট্রাম্প। এবারের বিতর্কের যে দুটি বিষয় সবচেয়ে সমালোচিত হয়েছে তাহলো, এবারও প্রার্থীরা করমর্দন করেননি- না শুরুতে, না শেষে। প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, যেন মুখোমুখি হয়েছেন দুই চিরশত্রু। তবে এবার দু'জনের কেউই আগের মতো অতি আক্রমণাত্মক ছিলেন না।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়েও দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল বিতর্ক হয়। এ সময় ট্রাম্পকে পুতিনের 'হাতের পুতুল' আখ্যা দিয়ে হিলারি বলেন, সাম্প্রতিক সাইবার হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করতে চান না ট্রাম্প। মার্কিন সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার চেয়ে ট্রাম্প পুতিনকে বেশি বিশ্বাস করেন। জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি নন, বরং হিলারিই পুতিনের হাতের পুতুল। লিবিয়া ও ইরাক ইস্যুতে ভ্লাদিমির পুতিন এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে হিলারি-ওবামার তুলনায় বেশি শক্তিশালী ও স্মার্ট বলে মন্তব্য করেন ট্রাম্প।

বিতর্কে সুপ্রিম কোর্টকে জনগণের পাশে থাকার কথা বলেন হিলারি ক্লিনটন। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট একটি কেন্দ্রীয় বিষয় এবং আদালতকে সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে হবে, ক্ষমতাধর কর্পোরেটদের স্বার্থ রক্ষা করতে আদালত নয়। অস্ত্র আইনের পক্ষে নিজের মত তুলে ধরে হিলারি বলেন, তিনি নাগরিকদের হাত থেকে আগ্নেয়াস্ত্র কেড়ে নিতে চান না। তবে এর যুক্তিযুক্ত নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই চান। বিপরীতে ট্রাম্প বরাবরের মতো আগ্নেয়াস্ত্র আইনের বিপক্ষেই অবস্থান নেন।

গর্ভপাত নারীর একান্ত ব্যক্তিগত অধিকার মন্তব্য করে হিলারি বলেন, 'আমি মনে করি, প্রত্যেক নারীর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও আবেগপূর্ণ সিদ্ধান্ত এটি। আর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল নারীদেরই।' পাল্টা জবাবে ট্রাম্প বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হলে গর্ভপাতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন। উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া ই-মেইল প্রসঙ্গে হিলারি বলেন, এটা রাশিয়ার সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এসেছে। এটা মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের শামিল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত