সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ মার্চ, ২০১৭ ১০:২৫

বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আনান কমিশনের আহবান

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাকে অবিলম্বে ফেরত নেয়ার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলো থেকেও নিপীড়িত এ জনগোষ্ঠীকে তাদের ভিটেমাটিতে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলেছে এ কমিশন। বৃহস্পতিবার আনান কমিশনের অন্তর্বর্তী রিপোর্টে এ সুপারিশ করা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানায় রয়টার্স।

কমিটির সুপারিশকে স্বাগত জানিয়েছে মিয়ানমার সরকার।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের জন্য আগস্টে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী কফি আনানের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি কমিশন গঠন করেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি। রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশন নামের এ কমিটিকে এক বছরের মধ্যে সুপারিশ দিতে বলা হয়।

সুপারিশে বলা হয়েছে, নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার পাশাপাশি তাদের জন্য একটি নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে মিয়ানমারকে। এছাড়া রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, অবাধ চলাচল এবং মিয়ানমারের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব বিষয়েও সুপারিশ করেছে এ কমিশন। আগস্টে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেবে কমিশন।

কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রাজনৈতিক অঙ্গনের উচ্চপদস্থ নেতা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি যৌথ কমিশন গঠন করা উচিত। তাদের কাজ হবে সুষ্ঠু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফিরে যেতে সহায়তা করা।

সুপারিশে আরও বলা হয়, রোহিঙ্গারা ফিরে যাওয়ার পর তাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া ঘরবাড়ি তৈরি করে দিতে হবে মিয়ানমার সরকারকে। সেখানকার রাজনৈতিক পন্থায় মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বেও চরম ঘাটতি আছে বলে মনে করে এ কমিশন। এ কারণে অবিলম্বে মিয়ানমার সরকারের উচিত সবার সঙ্গে আলোচনা করে এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা- যার মাধ্যমে দেশটির মুসলিমরা নিজেদের কথা বলতে পারেন।

মিয়ানমারের প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গার বাস। তবে সে দেশের সরকার তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ‘বাঙালি’ বলে দাবি করে থাকে। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের নিপীড়নের ফলে ২০১২ সাল থেকে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে অস্থায়ী আশ্রয়শিবিরে বাস করছেন। এছাড়া দেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক লাখ রোহিঙ্গা।

রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের বিষয়ে কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, নাগরিকত্ব না থাকার কারণে তারা বৈষম্য ও অবিচারের শিকার হওয়া ছাড়াও তাদের সুষ্ঠু জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মিয়ানমার সরকারের উচিত অবিলম্বে নাগরিকত্ব সত্যায়ন প্রক্রিয়ার একটি কৌশল এবং সময়সীমা বেঁধে দেয়া। তবে এ প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছ ও দক্ষ। কৌশলটি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সবার মাঝে তা প্রচার করতে হবে।

এছাড়া রাখাইনে রোহিঙ্গা জন্ম নিবন্ধন পুনরায় শুরুর সুপারিশ করেছে কমিশন। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইনে ২০১২ সাল থেকে এ প্রক্রিয়া কার্যত বন্ধ রয়েছে।

প্যানেল সদস্য ঘাসান সালাম ইয়াঙ্গুনে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা বিশ্বের কোনো দেশেই স্বাভাবিক নয় যে, একটা নবজাতক জন্মগ্রহণের পর জন্মসনদ পাবে না।

এদিকে, সুচির কার্যালয় আনান কমিশনের সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, সরকার এ সুপারিশের সঙ্গে একমত এবং বিশ্বাস করে জাতীয় সংহতি প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়ায় ও উন্নয়নে এটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। শিগগিরই এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হবে বলে সুচির দফতর জানিয়েছে।

তথ্যানুসন্ধান মিশন পাঠানোর প্রস্তাব ইইউর : এদিকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগের তদন্ত করতে জাতিসংঘকে জরুরিভিত্তিতে একটি আন্তর্জাতিক তথ্যানুসন্ধান মিশন পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

বৃহস্পতিবার ইইউর একটি খসড়া প্রস্তাব জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে পেশ করা হয়। এর আগে আন্তর্জাতিক তদন্তের বিষয়ে কার্যত বিরোধিতা করে আসছিল ইইউ। এ নিয়ে তাদের সমালোচনাও হয়েছে।

৪৭ সদস্যবিশিষ্ট জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের চার সপ্তাহব্যাপী অধিবেশন চলছে। ২৩ ও ২৪ মার্চ বিভিন্ন প্রস্তাবের ওপর ভোট হবে। প্রস্তাবটি পাস হলে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিষয়ে তদন্তে জরুরিভিত্তিতে তথ্যানুসন্ধান মিশন পাঠানো হবে। তারা দায়ীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে চেষ্টা করবে। ইইউর প্রস্তাবে তথ্যানুসন্ধান মিশনকে সর্বাত্মক সহায়তার জন্য অং সান সুচি সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমার সরকার গঠিত কমিটিগুলোর তদন্তের ফল দিয়েও সহায়তার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত