সিলেটটুডে ডেস্ক

১৫ জুন, ২০১৭ ১৩:৩৫

পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের স্বর্গরাজ্য: চীনা মুখপত্র

পাকিস্তানের মিত্র দেশ হিসেবে পরিচিত চীনের একটি রাজনৈতিক দলের মুখপত্র পাকিস্তানকে এখন সন্ত্রাসবাদীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে অভিহিত করেছে।

শাসক কমিউনিস্ট পার্টির যে মুখপত্রে আন্তর্জাতিক এবং কূটনৈতিক বিষয় নিয়ে বেইজিং-এর মনোভাব বিশদে প্রকাশ করা হয়, সেই গ্লোবাল টাইমসেই পাকিস্তানে বাড়তে থাকা সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সম্পর্কে এমন কথা লেখা হয়েছে। সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে এমন খবর প্রকাশ করেছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা।

গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে— পাকিস্তানে যে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে চীন, তা যে কোনও সময় নাশকতার কবলে পড়তে পারে। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে চীনা মুখপত্রটিতে।

বেলুচিস্তানে এক সপ্তাহ আগেই ঘটেছে অপ্রীতিকর ঘটনাটা। দুই চীনা নাগরিককে সন্ত্রাসবাদীরা অপহরণ করে খুন করেছে। অভিযোগের তির ইসলামিক স্টেটের (আইএস) দিকে। এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে চীন। কর্মসূত্রে পাকিস্তানে গিয়েছেন যে চীনা নাগরিকরা, তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই হবে ইসলামাবাদকে— বেশ কড়াভাবেই এই বার্তা দেওয়া হয় বেইজিং-এর তরফ থেকে।

এবার গ্লোবাল টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের মাধ্যমে ফের পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিতে চাইল চীন।

ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড বা ওবিওআর নীতির রূপায়ণে চীন এখন অত্যন্ত উৎসাহী। চীনের এই বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় এ যাবত যে সব প্রকল্প গৃহীত হয়েছে, তার মধ্যে চীন-পাক অর্থনৈতিক করিডরই (সিপিইসি) সবচেয়ে বড় প্রকল্প। এই প্রকল্পের জন্য চীন ইতিমধ্যেই পাকিস্তানে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। আবার এই করিডরকে কেন্দ্র করেও গড়ে উঠছে নানা প্রকল্প। সে সব প্রকল্পের রূপায়ণের জন্য চীনা ইঞ্জিনিয়ার, শ্রমিক এবং অন্যান্য পেশার নাগরিকদের ভিড়ও প্রায় রোজই বাড়ছে পাকিস্তানে। এই চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তার প্রশ্নে বেইজিং কোনও রকম আপোষের পক্ষপাতী নয়। স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে গ্লোবাল টাইমসে।

চীনা কাগজে লেখা হয়েছে, ‘‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ যত এগোবে, চীনের ইঞ্জিনিয়ার, শ্রমিক ও নাগরিকরা ততই বেশি সংখ্যায় সেই সব দেশে কাজ করতে যাবেন, যে সব দেশ এই প্রকল্পের পথে পড়বে। এতে চীনা নাগরিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে।’’

পাকিস্তানে কাজ করতে গিয়ে চীনা নাগরিকরা যে ধরনের বিপদের মুখে পড়ছেন, তার প্রেক্ষিতেই যে চীনা সংবাদপত্রে এ কথা লেখা হয়েছে, তা নিয়ে কোনও মহলেরই সংশয় নেই।

চীন অবশ্য নিজেকে সন্ত্রাসবাদীদের অন্যতম বড় নিশানা হিসেবে এখনও মনে করছে না। গ্লোবাল টাইমসে লেখা হয়েছে, ‘‘এমন নয় যে সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলি এখন চীনকেই তাদের নিশানা বানিয়েছে।’’ চীনের অনেকগুলি সংস্থা এখন বহুজাতিক হয়ে গিয়েছে, সেই সূত্রে আগের চেয়ে অনেক বেশি চীনা নাগরিক এখন কর্মসূত্রে বিদেশে থাকছেন। এই প্রসারের কারণেই চীনারা এখন আগের চেয়ে বেশি সংখ্যায় সন্ত্রাসের কবলে পড়ছেন, মত বেইজিংয়ের।

পাকিস্তানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের বিপদ অদূর ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছে বেইজিং। পৃথিবীর যে দেশগুলিতে সন্ত্রাসের বিপদ সবচেয়ে বেশি, সেই দেশগুলির মধ্যে পাকিস্তান অন্যতম। পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও অত্যন্ত দুর্বল। মত গ্লোবাল টাইমসের।

পাকিস্তানে কর্মরত চীনা নাগরিকদের ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে বলেও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্রে লেখা হয়েছে। পাকিস্তানকে ‘চিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘‘বেইজিং যে ইসলামাবাদে বিপুল বিনিয়োগ করবে, সেটাই কাঙ্ক্ষিত। ফলে সহজেই সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে।’’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত