ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক

০৯ আগস্ট, ২০১৫ ২২:২২

হারিয়ে যাওয়া এক বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী যেভাবে মেলালো ভারত-পাকিস্তানকে

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে শিশু বয়সে হারিয়ে যাওয়া বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী এক নারী দুই দেশের মধ্যে এক বিরল উষ্ণ মূহুর্তের জন্ম দিয়েছেন। নিজ পরিবারকে ফিরে পেতে তাকে সহায়তা করছেন কূটনীতিকরা।

গীতা নামের ২০ বছর বয়সী তন্বী এই তরুণী হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ১১ বছর বয়সে পরিবারে সদস্যদের সঙ্গে ভারত থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশের পর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন গীতা। তারপর থেকে নিজ পরিবারকে খুঁজে পাওয়ার গীতার দুঃসাহসিক যাত্রা শুরু হলেও এবার তাতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে প্রায় একই ধরনের কাহিনী সম্বলিত একটি ব্যবসাসফল ছবি।

জঙ্গি হানা নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ির মধ্যেই গীতার কাহিনী সামনে চলে এসেছে। গীতার কাহিনী অনেককেই নাড়া দিয়েছে। যারা শুনেছেন সকলেই চাইছেন তার কাহিনীর আনন্দঘন সমাপ্তি।

গীতাকে সহায়তাকারী দাতব্য সংস্থা ইদহি ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তা জানান, হারিয়ে যাওয়া পরিত্যক্ত শিশু গীতাকে পাকিস্তানি সেনারা একটি এতিমাখানায় পাঠিয়ে দেয়। নিরক্ষর গীতা মূকাভিনয় করে দেখান কীভাবে হ্যান্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়ায় মাথা নিচু করে নিজেকে রক্ষা করে দৌঁড়ে পালান, পরে সশস্ত্র ব্যক্তিরা তাকে ধরে ফেলে। তারপর তাকে লাহোরের ওই এতিমখানায় দেওয়া হয়। এতিমখানায় শিশুটির ফাতেমা নামকরণ করা হয়।

“সে সব সময় অন্যান্য শিশুদের সঙ্গে লড়াই করতো, আর তাদের তত্ত্বাবধায়ক তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না,” বলেন ওই কর্মকর্তা। তাই তত্ত্বাবধায়করা তাকে এতিমখানার সদরদপ্তর করাচিতে পাঠিয়ে দেন।

ওই কর্মকর্তা বলেন, “সে যখন হাতজোড় করে আমার মা’কে নমস্কারের ভঙ্গি করে ও পা ছুঁয়ে সালাম করে, তখন আমার মা বুঝতে পারেন শিশুটি হিন্দু পরিবারের। তাই মা ওর নাম রাখেন গীতা।”

এরপর থেকে এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল সাত্তার ইদহি গিতাকে নিয়মিত একটি হিন্দু মন্দিরে নিয়ে যাওয়া শুরু করেন। এতিমখানার কর্মকর্তারা হিন্দু উৎসবগুলোতে গীতাকে নিয়ে পালন করেন এবং মুসলিম উৎসবগুলোতেও তাকে সমানভাবে অংশ নিতে দেন।

ভারতের মানচিত্রের সামনে দাঁড়িয়ে সবসময় ঝাড়খন্ডের দিকে ইঙ্গিত করেন গীতা। ছোটকালের যে স্মৃতি তিনি মূকাভিনয় করে দেখান তাতে, মাঠের পাশে তাদের বাড়ি, গরু, একটি রাস্তা ও একটি হাসাপাতাল ছিল বলে প্রকাশ পায়।

তবে সে কীভাবে পাকিস্তানের সীমান্তে কাছে চলে এসে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত থেকে পাকিস্তানে ঢুকে পড়ে তা পরিষ্কার হওয়া যায়নি বলে ইদহি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

“২০১১ সালে আমরা দুইবার ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। হাইকমিশনের প্রতিনিধি করাচি এসে তাকে দেখে গেছেন, তার বিস্তারিত তথ্য নিয়ে গেছেন, কিন্তু কোনো ফল হয়নি।”

“এখন বলিউডের ব্লকবাস্টার ছবিটিকে ধন্যবাদ জানাতে হয়, এতে নতুন আশা জেগেছে,” বলেন ওই কর্মকর্তারা।

‘বজরঙ্গি ভাইজান’ নামের বলিউডের ওই ছবিটি গত মাসে মুক্তি পেয়েছে। এতে সুপারস্টার সালমান খান এক ভারতীয় তরুণের চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যিনি শ্রবণ ও বাক প্রতিবন্ধি এক পাকিস্তানি বালিকাকে পেয়ে খুঁজে পান এবং তাকে তার পরিবারে ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত