আন্তর্জাতিক ডেস্ক

০৮ অক্টোবর, ২০১৫ ০৮:৫৩

ক্লিনটনকে দরজা আটকে পেটাতেন হিলারি!

রেগে গেলে নাকি তার মাথা ঠিক থাকে না! হোয়াইট হাউসের কর্মী থেকে দুঁদে গোয়েন্দা, এমনকি সাবেক প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন-হিলারির মেজাজকে ভয় পান সবাই! পারিবারিক ঝামেলায় বহুবার তার হিংস্রতার শিকার হতে হয় স্বামী তথা সাবেক প্রেসিডেন্টকেও!
 
'দ্য ক্লিনটন'স ওয়ার অন উইম্যান' নামের বইতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও ফার্স্ট লেডি হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটনের দাম্পত্য জীবন নিয়ে চাঞ্চল্যকর এমন সব তথ্য উঠে এসেছে। এটি লিখেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পরামর্শক রজার স্টোন।
 
স্টোন তার বইতে দাবি করেছেন, হিলারির হাতে বিলের মার খাওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ক্লিনটনকে ঘরের দরজা বন্ধ করে মারধর করতেন তার স্ত্রী হিলারি।
 
নানা সময়ে হিলারি শক্ত জিনিস ছুড়ে বিলকে আহত করেছেন, আঁচড়ে-কামড়ে রক্তাক্ত করার মতো ঘটনাও প্রচুর ঘটেছে; বলেও দাবি করেছেন ক্লিনটনদের ঘনিষ্ঠ এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
 
যুক্তরাষ্ট্রর রাজনীতিতেও বেশ চর্চিত নাম রজার স্টোন; তাকে ঘিরেও রয়েছে বহু বিতর্ক। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোলান্ড ট্র্যাম্পের শিবির ছেড়ে চলে যাওয়ায় তাকে নানা টিকা-টিপ্পনি শুনতে হচ্ছে। এহেন ঝানু রাজনৈতিক বিশ্লেষকের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। বিশেষ করে ক্লিনটনদের সঙ্গে তার যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা ছিল বলেও শোনা যায়।
 
তারই সুবাদে নিজের বইয়ে হিলারি-বিলের দাম্পত্য জীবনের অশান্তি সম্পর্কে বেশ কিছু ঘটনার উল্লেখ করেছেন স্টোন; যা হিলারির শান্তশ্রী ভাবমূর্তি থেকে একেবারেই আলাদা।
 
ক্লিনটনকে দরজা আটকে পেটাতেন হিলারি!
ক্লিনটন-হিলারির দাম্পত্য জীবন নিয়ে রজার স্টোনের লেখা বইয়ের প্রচ্ছদ
বইটি বাজারে আসছে আগামী ১৩ অক্টোবর; এমন একটা সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন হিলারি। দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে খানিকটা এগিয়েও রয়েছেন সাবেক এ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
 
তবে স্টোনের বইয়ে লেখা তথ্যের ব্যাপারে জানতে চাইলেমেইল অনলাইনকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি হিলারি।
 
শুধু তাই নয়, রজার স্টোন আরও লিখেছেন, কঠিন বস্তু দিয়ে আঘাত করা ছাড়াও আঁচড়-খামচি কেটেও হিলারি বহুবার বিলকে রক্তাক্ত করেছেন।
 
বইটিতে স্টোন বলেছেন, অনেক সময় স্ত্রী হিলারির পিটুনি খেয়ে রক্তাক্ত হতেন সাবেক এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট; সেই মারের দাগ থাকত ক্লিনটনের শরীরজুড়ে। রক্তাক্ত অবস্থায় দেখার পর ক্লিনটনের কাছে কেউ কারণ জানতে চাইলে; তিনি বলতেন, শেভ করতে গিয়ে কেটে গেছে।
 
তবে এটিই অবশ্য প্রথম নয়; এর আগে ১৯৯৯ সালে হোয়াইট হাউসের সাবেক প্রেস সেক্রেটারিও এক বইতে হিলারির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করেন।
 
স্টোন জানিয়েছেন, ১৯৯০ সালের মার্চে বাবার মৃত্যুশয্যায় পাশে উপস্থিত থাকতে লিটল রক, আর্কে উড়ে যেতে হয় হিলারিকে। ঠিক সেই সময় হোয়াইট হাউসের অতিথি হয়ে আসেন বিখ্যাত মার্কিন গায়িকা-নায়িকা বারবারা স্ট্রেইল্যান্ড; যিনি আবার বিলের একনিষ্ঠ ভক্ত। রাতে প্রেসিডেন্টের আতিথ্যগ্রহণ করে হোয়াইট হাউসে থেকে যান বারবারা। খবর কানে যেতেই রাগে কাঁপতে কাঁপতে ফিরে আসেন হিলারি। পরে বিলের গলায় দীর্ঘ আঁচড়ের দাগ নিরাপত্তাকর্মী ও মিডিয়ার ক্যামেরার নজর এড়ায়নি।
 
এ ব্যাপারটি ধামাচাপা দিতে সে সময় বিলের প্রেস সচিব ডি ডি মায়ার্স বিবৃতি দিয়েছিলেন, 'দাড়ি কামাতে গিয়ে গলায় আঁচড় লেগেছে প্রেসিডেন্টের।' '৯৯ সালে অবশ্য আসল কথা লেখক গেইল শিহির কাছে স্বীকার করেন মায়ার্স।
 
ক্লিনটনকে দরজা আটকে পেটাতেন হিলারি!
লং আইল্যান্ডে কুকুর নিয়ে হাঁটছেন ক্লিনটন ও হিলারি- মেইল অনলাইন
এছাড়া আরাকানসাসের গভর্নর থাকাকালে ক্লিনটনদের ঘরোয়া মারপিট চরম আকার নিয়েছিল বলে জানিয়েছেন আরেক লেখক ক্রিস অ্যান্ডারসন। তার ভাষ্যে, একবার মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে স্বামীকে বিছানায় দেখতে না পেয়ে নিরাপত্তাকর্মীদের তাকে খুঁজতে পাঠান হিলারি। বিল ফিরে এলে রান্নাঘর থেকে ভেসে আসে, কাচ ভাঙার আওয়াজ ও হিলারির চিৎকার ও গালাগালির শব্দ। সকালে ঘর সাফ করতে গিয়ে এন্তার কাপ-ডিশের ভাঙা টুকরোর সঙ্গে মেলে উপড়ে নেওয়া কাবার্ডের পাল্লাও।
 
এমনকি, নানা সরকারি অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে প্রেসিডেন্টের লিম্যুজিনের ভেতরেও চলত ক্লিনটন দম্পতির ঝগড়া। গাড়িতে হাতের কাছে যা পেতেন তা-ই ছুড়ে মারতেন হিলারি। হোয়াইট হাউসের সেই সময়ের এক গাড়িচালক জানিয়েছেন, পরস্পরের উদ্দেশে জঘন্যতম ভাষায় অভিযোগ ছুড়ে দিতেন দুজনেই।
 
তবে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছানোর ঠিক আগ মুহূর্তে চকিতে স্বাভাবিক হতে পারার বিরল ক্ষমতাও তাদের অনায়াসলব্ধ ছিল। কেউ টেরই পেতেন না, এতক্ষণ কি খণ্ডযুদ্ধই না ঘটে গিয়েছে!; জানিয়েছেন সেই চালক।
 
হিলারির দাপটের সামনে প্রেসিডেন্টের সর্বক্ষণ কুঁকড়ে থাকার সাক্ষী ছিলেন ওই গাড়িচালক।
 
স্টোন তার বইতে আরও দাবি করেছেন, মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে গোপন সম্পর্ক প্রকাশ্যে আসার পর সবার সামনেই ক্লিনটনকে থাপ্পড় কষিয়েছিলেন হিলারি।
 
অবশ্য প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই নানা বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছেন হিলারি। সর্বশেষ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীান রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিনিময়ে ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহার করা নিয়ে হিলারি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। সেইসব মেইলের কিছু কিছু সম্প্রতি প্রকাশিতও হয়েছে। এবার সেইমাত্রায় নতুন করে ঘি ঢেলেছে হিলারির স্বামী পেটানোর এ চাঞ্চল্যকর তথ্য!
 
সূত্র: মেইল অনলাইন, সমকাল অনলাইন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত