হাসান মোরশেদ

২৬ অক্টোবর, ২০১৫ ২০:৩৬

দাসপার্টির খোঁজে খসড়া পর্ব: ১২

জলসুখা
ভাটি অঞ্চলের পরিচিত একটা জনপদ। হিন্দু এবং মুসলমান জমিদারদের বাস ছিলো এখানে। একটা সময় হিন্দুপ্রধান থাকলে ও এখন বোধ হয় আর নেই। শুনেছিলাম এই এক ইউনিয়নেই তালিকাভুক্ত রাজাকার ছিলো ৬৫জন। জলসুখার ঘাটে এসে পৌঁছাতে সময় লাগেনা বেশী। আব্দুর রশীদ নামেন, ইলিয়াস নামেন- আমরা তাঁদের অনুসরন করি। বাজারে একটা বড় চালের আড়ত। এর মালিক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ইলিয়াস এখানে বিশ্রাম নিতে থামেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির সাথে পরিচয় হয়, মধ্যবয়স্ক মানুষ- দাঁড়ি টুপি পাঞ্জাবী পরিহিত। কথা বলে জেনে নেই যুদ্ধের সময় তিনি কিশোর ছিলেন। যুদ্ধে যাননি, তবে অনতিদূরে খৈয়াগোপির বিলের যুদ্ধ তার মনে আছে। বাবার সাথে ক্ষেতের কাজে ছিলেন, যুদ্ধ শুরু হবার পর পালিয়ে এসেছিলেন।

আমরা আব্দুর রশিদের পাশেপাশে হাঁটি। বলি, সেই জায়গাটা দেখতে চাই যেখান দিয়ে জগতজ্যোতি’র লাশ রাজাকারেরা নিয়ে এসেছিলো দেখানোর জন্য, সেই সময় উপস্থিত ছিলেন এমন একজনের সাথে কথা বলতে চাই। আব্দুর রশিদ বলেন, নিয়ে যাবেন সেখানে। তার আগে আরেকটা জায়গায় যেখানে গনহত্যা হয়েছিলো।

আমরা পশ্চিম দিকে হাঁটতে থাকি। একটু সামনে গিয়েই কয়েকটা ঘর। একটা তুলসী তলা। হিন্দু বাড়ি বুঝতে পারি। কয়েকজন মানুষ এগিয়ে আসেন। আব্দুর রশিদকে দেখে তারা কুশল বিনিময় করেন। কয়েকটা চেয়ার ও আসে। আব্দুর রশিদ একজনকে ডাকেন। উনি ও বৃদ্ধ মানুষ মুখ ভর্তি সাদা দাড়ি- খালি গা।
জিজ্ঞেস করি তাকে- বলুন তো কি ঘটেছিলো এখানে?

দিন তারিখ মনে নাই। তবে ‘বাইরা’ মাস। মানে বর্ষাকাল। ফাঁকে আব্দুর রশিদকে জিজ্ঞেস করি- আপনারা তখন যুদ্ধে চলে গেছেন? বলেন- হ্যাঁ, তারা চৈত্র মাসের শেষের দিকেই বর্ডার ক্রস করেছিলেন।

এই গ্রামের ছেলে জগতজ্যোতি, আব্দুর রশিদ মুক্তিযুদ্ধে চলে গেছে। হিন্দুপ্রধান গ্রাম। রাজাকারদের সহজ টার্গেট। শ্রাবন মাসের একদিনে রাজাকার সিরাজ আর আলী রাজা নিয়ে আসে পাকিস্তান আর্মির এক দল। পেছনের আরেক পাড়া প্রথমে আক্রমন করে। হাওরের দিকে কিছু মানুষ পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, বাকী সবাইকে বেঁধে ফেলে ওরা। সেই পাড়া থেকে তারপর আসে এই পাড়ায়। এখানে ও এসে সবাইকে বেঁধে ফেলে। যে বৃদ্ধ আমাদেরকে বর্ণনা দিচ্ছিলেন তিনি বলেন- এর কয়দিন আগে আজমিরীগঞ্জ বাজারে তাকে পাকিস্তান আর্মি আটকে নিয়ে গিয়েছিলো ওদের মেজরের কাছে। মেজর তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি মিথ্যে না বলে জানিয়েছিলেন ‘হিন্দু’। মেজর তাকে ছেড়ে দিয়েছিলো।

এইদিন সেই মেজরই ছিলো দলনেতা। তিনি বহু কসরত করে তার দৃষ্টি আকর্ষন করেন। মেজর তাকে চিনতে পেরে জিজ্ঞেস করে কিছু বলতে চান কিনা?
মৃত্য নিশ্চিত জেনে ও তিনি মরীয়া হয়ে বলেন- হ্যাঁ এখানে সবাই হিন্দু কিন্তু নিরীহ মানুষ, এদের কেউ ‘মুক্তি’ না। ‘মুক্তি’ জগতজ্যোতি আর আব্দুর রশিদের কেউ নয় তারা। তাদেরকে যেনো মেজর প্রাণভিক্ষা দেন।

কিছুক্ষন চিন্তা করে মেজর তার সৈন্যদের নৌকায় ফিরে যেতে বলে নিজেও নৌকায় উঠে পরে। কিন্তু রাজাকার সিরাজ আর আলীরাজা দৌড়ে গিয়ে তাকে অনেকক্ষন ধরে কিছু বুঝায়। পাড়ে তারা তখনো হাত পা বাঁধা। তারা দেখেন মেজর মাথা নেড়ে ‘না’ বলছে কিন্তু দুই রাজাকার হাত জোর করে কাকুতি মিনতি করছে। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষনের সেই ভয়ংকর মুহুর্তে তারা আবারো দেখেন মেজর মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে আছে হাওরের বিশাল জলরাশির দিকে আর দুই রাজাকার ফিরে আসছে রাইফেল হাতে চারজন সৈনিককে নিয়ে। এসেই তারা গুলী শুরু করে নির্বিচার।
মারা যান নয়জন। পরে আরো দুইজন।



আমি জিজ্ঞেস করি- ঠিক কোন জায়গায়?


এর মধ্যে আরো বেশ কিছু মানুষ এসে জমায়েত হয়েছেন। কয়েকজন নারী ও। একজন হাত তুলে দেখান- ঐ যে ওখানে। একেবারে দ্রষ্টব্যহীন একটা গর্তের মতো, একটা ভাগাড়, ময়লা টয়লা ফেলা হয়। একটা গনহত্যার স্মৃতিচিহ্ন নাই হয়ে গেছে কী দারুন অবহেলায়।
বোকার মতো জানতে চাই- তারপর কী হলো? আপনারা লাশগুলো সৎকার করলেন কীভাবে?

জমায়েত কি মুহুর্তের জন্য নির্বাক হয়ে গিয়েছিলো আমার এমন কান্ডজ্ঞানহীন প্রশ্নে। একজন নারী, মধ্যবয়স্ক নারী ভিড় ঠেলে এগিয়ে আসেন আমার কাছে।
‘বাবারে রেজাকারের কোন সৎকার করতে দেয় নাই। গলা খুলে কাঁদতে ও দেয় নাই। চোখের জল নীরবে মুছতে মুছতে হাওরের জলে সব লাশ ভাসায়ে দিছি’
মধ্য দুপুরে তখন গনগনের রোদ। কিন্তু সেই মধ্যবয়স্ক নারীর বর্ণনায় আমার হাড় কাঁপিয়ে শীত আসে। নিহত স্বজনদের লাশ, গুলীতে ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত। কিন্তু কাঁদা যাবেনা, সৎকার করা যাবেনা। হত্যার বিভৎসতার পাশাপাশি স্বজনদের লাশ ভাসিয়ে দিতে হচ্ছে হাওরের ভাসমান জলে। এই লাশ ভেসে ভেসে কোথায় যাবে? কোথায় ডুববে? শকুনে খাবে, মাছে ঠুকরাবে। মুহুর্তের জন্য ৪৩ বছর আগের সেই দৃশ্যে নিজেকে উপস্থিত কল্পনা করে আমি ভয়ে আতংকে শিউরে উঠি।

ঐ পাড়া থেকে উঠে এসে বাজার পেরিয়ে আমরা অন্যদিকে এগোই। আমাদের সাথে আব্দুর রশিদ এবং আরেকজন অশীতিপর বৃদ্ধ, ১৭ নভেম্বর ১৯৭১ সকালে বেলা তিনি উপস্থিত ছিলেন যখন জগতজ্যোতির ক্ষতবিক্ষত লাশ নিয়ে আসা হয় এই গ্রামে। ঢাল পেরিয়ে আমরা একটা পুরনো একটা দালান বাড়ির সামনে আসি। এখানে আমাদের সাথে যোগ দেন আরেক মধ্যবয়স্ক। তিনি জানান এই পুরনো বাড়িটি ছিলো হিন্দু বাড়ি। তারা কিনে নিয়েছেন। যুদ্ধের সময় রাজাকারেরা দখল করে এই বাড়িকে বানিয়ে ছিলো তাদের ঘাঁটি। আমরা বাড়ির সামনের দিকে আসি। এখানে দাঁরিয়ে বুঝি কৌশলগত কারনেই এই বাড়িকে রাজাকার ঘাঁতি বানানো হয়েছিলো। বাড়ির সামনে দাঁড়ালে মোটামুটি একটা প্যানারোমিক ভিউ পাওয়া যায় সবদিকে। সোজা সামনে বিল, তারপর নদী। এই বিল ও নদীর মাঝখানেই যুদ্ধ হয়েছিলো সেদিন।

সন্ধ্যাবেলা জগতজ্যোতি শহীদ হবার পর, সম্ভবতঃ রাতের বেলা আর খোঁজ করার সাহস করেনি ওরা। সকাল বেলা লাশ কাদা ও পানির ভেতর থেকে ভেসে উঠে। রাজাকারেরা তখন এই লাশ টেনে নিয়ে আসে তাদের ঘাঁটিতে।

আমাদের সাথে আসা বৃদ্ধটি হাত তুলে দেখান- ঐ ঐদিক থেকে তারা লাশ টেনে আনছিলো এইখানে। ‘এইখানে’ মানে আমরা ঠিক যেখানে দাঁড়িয়ে আছি ঠিক সেখানে। মধ্যবয়স্ক লোকটি ও স্বাক্ষ্য দেন- তারা ও ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে দেখছিলেন সে দৃশ্য।
তারপর? তারপর কী হলো?

জগতজ্যোতির মা ও বাবাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসলো রাজাকারেরা। জ্যোতির মা এক অসামান্য দৃশ্যের অবতারনা করলেন। পাথরের মতো শক্ত হয়ে বললেন- এ লাশ তার ছেলে জ্যোতির নয়, জ্যোতির বাম হাতে একটা আঙ্গুল বেশী।

একজন অশিক্ষিত গ্রাম্য মহিলা তার সন্তানের লাশ সামনে রেখে কীভাবে এই অস্বীকৃতির সাহস করলেন? কেনো করলেন? তিনি কি তার বেঁচে থাকা অপর সন্তান ও স্বামীর জীবনের কথা ভাবছিলেন? এই প্রশ্নের উত্তর আর কোনদিন খুঁজে পাওয়া যাবেনা। তিনি মারা গেছেন কয়েকবছর আগে। যুদ্ধ কতো ভয়ংকর ও অস্বাভাবিক অভিজ্ঞতা সে উপলব্ধির ক্ষমতা বোধ হয় আমাদের হবেনা কোনদিন।

বাড়ি ফিরে যেতে যেতে জ্যোতি’র মা বাবা দেখলেন তাদের ভিটেতে আগুন। আর তার লাশ তুলে নেয়া হলো নৌকার সামনে। জলসুখা থেকে আজমিরীগঞ্জ ঘাটে ঘাটে রাজাকারেরা প্রদর্শন করলো পাশবিক উল্লাসে। তারপর আজমিরীগঞ্জ পৌঁছে বেঁধে রাখলো বাজারের প্রাণ কেন্দ্রে বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথে।

ঈদের আগের শেষ বাজারে আশে পাশের সব এলাকা থেকে আসা উৎসবমুখর মানুষেরা দেখলো একজন দুস্কৃতিকারী, ভারতীয় দালালের ক্ষতবিক্ষত লাশ। আজমিরীগঞ্জ বাজার থেকে ফটোগ্রাফার ডেকে এনে ছবি ও তুলে নিলো পাকিস্তান আর্মির মেজর। ফটোগ্রাফার নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছবি প্রিন্ট করলেন এক কপি অতিরিক্ত। তারপর সংগোপনে সেই ছবি পাঠিয়ে দিলেন দিরাই- সালেহ চৌধুরী কাছে। সালেহ চৌধুরী’র কাছ থেকে টেকের ঘাট- সাবসেক্টর কমাণ্ডে।

এখান থেকে ফিরে বাজার হয়ে এবার আমরা উপস্থিত হই জগতজ্যোতির জন্ম ভিটেয়। ছোট্ট একট বাড়ী, সামনে উঠোন। বাড়িটা বিক্রী হয়েছে কয়েকবছর আগে। এক হিন্দু ভদ্রলোকই কিনেছেন, জ্যোতির ভাইয়ের ছেলেরা হবিগঞ্জ সদরে থাকেন।

বাড়ির উঠোনে বসি আমরা। এখানেই আব্দুর রশীদের সাথে আমরা কথাবার্তা বলবো, নজরুল ও তানিম ভিডিও করবেন। আমাদেরকে ঘিরে উৎসাহী মানুষজনের বিশাল জটলা। ক্যামেরা দেখে মানুষের ধারনা কোন চ্যানেলের অনুষ্ঠান রেকর্ড হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ভদ্রলোক ও এখানে এসে হাজির হন। আব্দুর রশিদের পাশে তার জন্য ও একটা চেয়ার বরাদ্দ হয় দ্রুত। বুঝি স্থানীয় ক্ষমতা কাঠামোর এ ও এক প্রদর্শন। এলাকায় একটা গুরুত্বপূর্ন ঘটনা ঘটছে, বাইরে থেকে লোকজন এসে আব্দুর রশীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে যাচ্ছে- এর সাথে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রধান সংশ্লিষ্ট না থাকলে হয়না।

আব্দুর রশীদ স্মৃতির গভীরে ডুব দেন। সেই শৈশব থেকে তার বন্ধু। প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়। মেট্রিক পাশ করে জ্যোতি চলে গিয়েছিলেন ভারতে। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে আবার ফিরে আসেন গ্রামে। গ্রামের স্কুলে শিক্ষক হিসেবে ও যোগ দেন কিছুদিনের জন্য। পরে আব্দুর রশিদই তাকে পরামর্শ দেন সুনামগঞ্জ কলেজে গিয়ে ডিগ্রী ক্লাশে ভর্তি হতে। রশীদ নিজে ডিগ্রীতে ভর্তি হতে পারেননি কিন্তু নিজের এই ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। জগতজ্যোতি গরীব ঘরের ছেলে হলে ও পড়ালেখার মাথা ভালো, অনেক বড় হবে একদিন এরকম ধারনা সবারই ছিলো।

জ্যোতি সুনামগঞ্জ কলেজে ভর্তি হন, বামপন্থী রাজনীতির সাথে আরো বেশী জড়িয়ে পরেন। স্কুল থেকেই জ্যোতি, রশীদ বামপন্থী ছাত্রকর্মী ছিলেন। রশীদ পরে চলে যান জগন্নাথপুরের এক গ্রামে জায়গীর মাস্টারহয়ে।

মার্চের ২৭ তারিখে সুনামগঞ্জ প্রতিরোধ ও পতনের পর জগতজ্যোতি জগন্নাথপুরে তার কাছে যান, সঙ্গে তখন তার লুট করা রাইফেল। জানান, তিনি সীমান্ত অতিক্রম ভারত চলে যাবেন প্রশিক্ষনের জন্য- বন্ধুকে ও নিতে এসেছেন তার সাথে। রশীদ বলেন- তিনি যাবেন কিন্তু কয়দিন পর, বাড়ি গিয়ে আসতে হবে আগে। জ্যোতিকে ও অনুরোধ জানান বাড়ি গিয়ে মাকে দেখে আসতে। কিন্তু জ্যোতি বাড়ি না গিয়ে ওখান থেকেই সীমান্তের দিকে চলে যান। রশীদ যান কয়েকদিন পর। একই প্রশিক্ষন শিবিরে জগতজ্যোতির সাথে দেখা হয় তার পরের ব্যাচে। প্রশিক্ষন শেষে জ্যোতির দলেই তাকে সংযুক্ত করা হয় এবং শেষদিনের যুদ্ধ পর্যন্ত ছিলেন আমৃত্যু বন্ধুটির পাশে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি মাঝেমাঝেই দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করেন। বুঝি, তিনি কিছুটা গুরুত্ব আশা করেন ক্যামেরার সামনে। তাই এবার তার সাথে কথা বলি। জিজ্ঞেস করি- এরকম একজন বীর যোদ্ধা যাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব দেয়ার কথা ছিলো, তার জন্য গর্ব বোধ করেন কিনা?
|
চোখে মুখে রাজনৈতিক ছাপ রেখে তিনি বক্তৃতার মতো করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান এসব নিয়ে বলেন। এবার তাকে জিজ্ঞেস করি- গত ৪৩ বছরে জগতজ্যোতির নামে একটা স্মৃতিচিহ্ন গড়ে উঠলোনা কেনো এই গ্রামে? অথবা এই গ্রামেই যে গনহত্যা ঘটেছে তার কোন স্মারক নেই কেনো?

আওয়ামী লীগ সভাপতি তেমন কোন উত্তর খুঁজে পাননা।
আবার বলি- মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দলের একজন নেতা হিসাবে তিনি মনে করেন কিনা এটা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব? মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলেন।
‘তাহলে আগামী এক বছরের মধ্যে এই গ্রামে জগতজ্যোতির নামে একটা কিছু করবেন আপনারা?’
তিনি কথা দিয়ে উঠে চলে যান।

আব্দুর রশীদ জানান, কোন জাতীয় দিবসেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ তাদেরকে ডাকেনা। উপজেলা প্রশাসন সরকারী দায়িত্ব হিসাবে ১৬ ডিসেম্বর বা ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেয়- এই এতোটুকুই।

আরো কয়েকজন বয়স্ক মানুষ এসে অভিযোগ করেন ’৭০ এর নির্বাচনের আগে তারাই খেটেখুটে এই এলাকায় আওয়ামী লীগের সংগঠন করেছেন, অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগে তাদের কোন ঠাঁই নেই।

এখান থেকে উঠে এসে সেই চালের আড়তে আমরা ঢুকি আবার। কথা হয় স্থানীয় তরুন তোফায়েল হোসেন লিটন এর সাথে। লিটন জানান গ্রামের নতুন প্রজন্মের কাছে জগতজ্যোতি এক অনন্য সাহসের নাম। ষোল ডিসেম্বর স্থানীয় সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে তারা নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেন। স্থায়ী ভাবে তার নামে একটা পাঠাগার করার পরিকল্পনা ও আছে তাদের।

দুপুর হয়ে গেছে। ইলিয়াস ফিরেন জোহরের নামাজ পড়ে। এবার আমাদের উঠার পালা। আব্দুর রশীদ সহ স্থানীয়রা বভারবার আফসোস করেন- রোজার দিন, কোন আপ্যায়ন করা গেলোনা।
নৌকায় উঠার আগে আব্দুর রশীদের হাত স্পর্শ করি আবার। হয়তো কোনদিন জলসুখা গ্রামে ফিরে আসা হবে কোনদিন কোন কাজে , কিন্তু এই মানুষটার সাথে কি আর দেখা হবে? মানুষগুলো চলে যাচ্ছে দ্রুত, যাবার বয়স হয়েছে তাদের। হাজার বছরে আর একজন মুক্তিযোদ্ধা কি জন্ম নেবে এই দেশে?

আগের পর্বের লিঙ্ক- দাসপার্টির খোঁজে খসড়া পর্ব: ১১

আপনার মন্তব্য

আলোচিত