নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫ নভেম্বর, ২০১৫ ২৩:২৭

মঙ্গলবার সাকা-মুজাহিদের শুনানি, পাকিস্তানিদের সুযোগ নেই

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আপিল বিভাগের রায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা চৌধুরী) ও আলী আহসান মো. মুজাহিদের রিভিউ আবেদনের শুনানি মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর)।

সাকা চৌধুরীর পক্ষে তার আইনজীবির ৫ পাকিস্তানি সহ ৮ জনকে সাফাই স্বাক্ষী চেয়ে করা আবেদনও খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে সাকা চৌধুরীর পাকিস্তানি বন্ধুগণ তার পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিতে পারবেন না। 

গত ২ নভেম্বর (সোমবার) প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চে এ তারিখ নির্ধারণ করে দেন।

বেঞ্চের অন্য সদস্যরা ছিলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে সেদিন জানিয়েছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বুদ্ধিজীবী গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, সম্পত্তি ধ্বংস, দেশত্যাগে বাধ্য করা, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনের দায়ে গত বছরের ২৯ অক্টোবর নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

ট্রাইব্যুনালে তার আগেই সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছিল। তারা আপিল করলে চলতি বছরের ২৯ জুলাই সালাউদ্দিন কাদেরের এবং ১৬ জুন মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগ রায় দেয।

দুটি দিনে দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় ঘোষণা হলেও পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এরপর নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল দুজনের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুজাহিদকে এবং গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে থাকা সালাউদ্দিন কাদেরকে সেই মৃত্যু পরোয়ানা ১ অক্টোবর পড়ে শোনানো হয়।

দণ্ড কার্যকরের আগে দুই যুদ্ধাপরাধীর আইনি শেষ সুযোগ রিভিউ আবেদন। এই আবেদনে রায়ে কোনো পরিবর্তন না হলে তাদের শেষ সুযোগ থাকবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া।

এর আগে যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন একদিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাননি, পরে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

নিয়ম অনুযায়ী, রিভিউ নিষ্পত্তির আগে দণ্ড কার্যকর করা যাবে না। রিভিউ খারিজ হয়ে গেলে সেই রায়ের অনুলিপি কারাগারে যাবে এবং কারা কর্তৃপক্ষ সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করবে।

সালাউদ্দিন কাদের ও মুজাহিদ রিভিউ আবেদন দায়েরের পর রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য গত ১৫ অক্টোবর আবেদন করে।

এরপর সালাউদ্দিন কাদের রিভিউ শুনানিতে পাঁচ পাকিস্তানিসহ আটজনের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য ১৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে, যাতে আদালতে এসে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ওই আটজনের নামে সমন জারির আরজিও রয়েছে।

২০ অক্টোবর এসব আবেদন অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতির আদালতে ওঠে, আদালত রিভিউসহ এ আবেদন শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেয়।

দুটি মামলায়ই প্রধান আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন। তাকে সহায়তা করতে যে আইনজীবী দল রয়েছে, তাতে শিশির মনির ও আসাদ উদ্দিন সদস্য রয়েছেন।

সাফাই সাক্ষ্য দিতে পারছেন না সাকা’র পাকিস্তানি বন্ধুরা
সাকা চৌধুরীর পক্ষে ৫ পাকিস্তানি নাগরিকসহ সাতজন রিভিউ শুনানিতে সাফাই সাক্ষ্য প্রদানের অনুমতি চেয়ে ১৯ অক্টোবর সোমবার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করেন তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট হুজ্জাতুল ইসলাম খান আল ফেসানী।

সাকার পক্ষে করা আবেদনে ওই সাত সাক্ষির মধ্যে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মিয়া সুমরো, পাকিস্তানের সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রিপরিষদ মন্ত্রী ইসহাক খান খাকওয়ানি, ফিজিতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ওসমান সিদ্দিকের নাম রয়েছে। দু'জন ব্যবসায়ীও রয়েছেন। এছাড়াও বাংলাদেশের হাইকোর্টের বিচারপতি শামীম হাসনাইন ও তার মা সাকার পক্ষে সাক্ষ্য নিতে আবেদন জানানো হয়েছিল সাকা চৌধুরী পক্ষে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

তার বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ২৩টি অভিযোগের মধ্যে চারটিতে (অভিযোগ নং- ৩, ৫, ৬ ও ৮) তাকে ওই শাস্তি দেয়া হয়। এছাড়া তিনটি (অভিযোগ নং- ২, ৪ ও ৭) অভিযোগে তাকে ২০ বছরের ও দুটি (অভিযোগ নং- ১৭ ও ১৮) অভিযোগে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত