সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ নভেম্বর, ২০১৫ ১০:২৩

সাকা-মুজাহিদকে রায় পড়ে শোনানো হলো

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদকে আদালতের রায় পড়ে শোনানো হয়েছে।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

তবে দণ্ডপ্রাপ্তরা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন কি না, সে বিষয়ে কিছু জানাতে রাজি হয়নি কারা কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) রাত নয়টার দিকে রায়ের অনুলিপি কারা কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা।

কারা প্রশাসনের ডিআইজি গোলাম হায়দার সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘রায় হাতে পেয়ে তা দণ্ডিতদের পড়ে শোনানো হয়েছে। এ সময় নিয়মানুযায়ী দুই আসামি প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।’

এর আগে গতকাল সকালে এ দুই যুদ্ধাপরাধীর পরিবারের সদস্যরা কারাগারে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করেন। তারা প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না—এ বিষয়ে পরিবারের সদস্যরাও সুনির্দিষ্ট করে কিছু গণমাধ্যমকে জানাননি। প্রসঙ্গত, জামায়াতের দুই নেতা আবদুল কাদের মোল্লা ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করেননি।

মানবতাবিরোধী অপরাধী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ আবেদন যেদিন (২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর) খারিজ হয়েছিল, সেদিনই তাঁর ফাঁসি কার্যকর হয়। দলটির আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয় রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পাঁচ দিনের মাথায়, চলতি বছরের ১১ এপ্রিল।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের রায়ের কপি নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা l

কারাগার সূত্র জানিয়েছে, সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদ—দুজনকেই পাশাপাশি দুটি কনডেমড (রজনীগন্ধা) সেলে রাখা হয়েছে। ওই সেলের অন্য সব বন্দীকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে দিনের কার্যক্রম শুরু হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের সংক্ষিপ্ত আদেশের বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন।

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, সংক্ষিপ্ত আদেশ নয়, শিগগির পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হবে। বেঞ্চের অপর বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এই বেঞ্চই গত বুধবার সাকা চৌধুরী ও মুজাহিদের দুটি রিভিউ আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন।

বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটের দিকে সাকা চৌধুরীর পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেওয়া হয়। সন্ধ্যা ৬টা ৩৫ মিনিটে মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি ওই একই দপ্তরে জমা পড়ে।

এরপর দুটি রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের দপ্তর হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে পৌঁছায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে। এক ঘণ্টা পর রায়ের অনুলিপি নিয়ে নাজিম উদ্দিন রোডে কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশ্য রওনা হন ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা। রাত নয়টায় তা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সাকা চৌধুরীর রিভিউ খারিজের রায় লিখেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। ১৩ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে একমত হয়েছেন বেঞ্চের অপর তিন বিচারপতি। আর মুজাহিদের রিভিউ খারিজের রায় লিখেছেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ২৯ পৃষ্ঠার এই পূর্ণাঙ্গ রায়ে একমত হয়েছেন বেঞ্চের অন্য সদস্যরা।

সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘রায়ের অনুলিপি রাতেই কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এরপর দণ্ড কীভাবে কার্যকর হবে, তা সরকারের সিদ্ধান্ত।’ প্রাণভিক্ষার আবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ আবেদন আসামিকে নিজ হাতে লিখতে হয়। এখানে আইনজীবীদের কোনো কাজ নেই।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কীভাবে দণ্ড কার্যকর হবে, তা বিস্তারিত বলা আছে যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতের নেতা আবদুল কাদের মোল্লার রিভিউ খারিজের রায়ে।

আপিল বিভাগের ওই রায় অনুসারে, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর আসামির পরিবারের সদস্যরা তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন। কারা কর্তৃপক্ষ আসামির কাছে জানতে চাইবে, তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমার আবেদন করবেন কি না। যদি আসামি ক্ষমার আবেদন করতে না চান, তবে কারা কর্তৃপক্ষের দেরি না করে দণ্ড কার্যকর করবে।

এ ক্ষেত্রে জেল কোডের ৯৯১ বিধি অনুসারে রায়ের কপি পাওয়ার সাত দিন পরে ও ২১ দিনের মধ্যে দণ্ড কার্যকরের নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত