সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫ ১২:৩০

হবিগঞ্জের লিয়াকত রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত

যুদ্ধাপরাধের মামলায় হবিগঞ্জের মো. লিয়াকত আলী (৬১) ও কিশোরগঞ্জের আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলীর (৬২) বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। শিগগিরই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রস্তুত করে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবে প্রসিকিউশন।

এই দুইজনের বিরুদ্ধে একাত্তরে হবিগঞ্জের লাখাই থানা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানা ও কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানা এলাকায় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটের সাতটি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয় রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি তুলে করেন তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এম সানাউল হক। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. নূর হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

লিয়াকত ও রজব দুই আসামিই পলাতক বলে জানান সানাউল।

সাত অভিযোগ
প্রথম অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর লিয়াকত ও রজব রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে লাখাই থানার কৃষ্ণপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে গণহত্যা, লুটপাটের ঘটনা ঘটান।

ওইদিন কৃষ্ণপুর গ্রামে নৃপেন রায়ের বাড়িতে রাধিকা মোহন রায় ও সুনীল শর্মাসহ ১৫ জন জ্ঞাত ও ২৮ জন অজ্ঞাত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের গুলি করে হত্যা করে।

দ্বিতীয় অভিযোগে হবিগঞ্জের লাখাই থানার চণ্ডিপুর গ্রামে গণহত্যা ও লুটপাট, তৃতীয় অভিযোগে লাখাই থানার গদাইনগর গ্রামে গণহত্যা ও লুটপাট, চতুর্থ অভিযোগে অষ্টগ্রাম থানার সদানগর গ্রামে শ্মশানঘাটে হত্যার বিষয়ে বলা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক গ্রামের বাচ্চু মিয়াকে অপহরণ এবং রঙ্গু মিয়াকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ রয়েছে পঞ্চম অভিযোগে।

ষষ্ঠ অভিযোগে অষ্টগ্রাম থানার সাবিয়ানগর গ্রামে চৌধুরী বাড়িতে হত্যা ও সপ্তম অভিযোগে সাবিয়ানগর গ্রামে খাঁ বাড়িতে হত্যার বিষয়ে বলা হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত পরিচয়
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, একাত্তরে লিয়াকত ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন। মুসলিম লীগের সদস্য হিসেবে ফান্দাউক ইউনিয়নে রাজাকারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।

স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলটির লাখাই থানা কমিটির সভাপতিও লিয়াকত হয়েছিলেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

বর্তমানে তিনি ওই পদে নেই। মামলার তদন্তকালেই লিয়াকত পালিয়ে যান বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানান।

অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার আলীনগর গ্রামের রজব আলী ১৯৭০ সালে ভৈরব হাজী হাসমত আলী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ইসলামী ছাত্র সংঘের কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে রজব আলী এলাকায় ফিরে আল বদর বাহিনী গঠন করেন।

তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, স্বাধীনতার লগ্নে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটক হয়েছিলেন রজব। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে দালাল আইনে তিনটি মামলা হয়, ওই মামলার বিচারে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়।

১৯৮১ সালে বিএনপি আমলে রজব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন। এরপর তিনি ‘আমি আল বদর বলছি’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন।

বইটিতে রজবের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগের আত্মস্বীকৃতি প্রকাশ পেয়েছে বলে তদন্ত সংস্থা উল্লেখ করেছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত