জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত

২৬ মার্চ, ২০১৬ ১৬:৩৫

আমার পিতা জিসি দেব

[গোবিন্দচন্দ্র দেব পুরকায়স্থ ১৯০৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সিলেট জেলার বিয়ানীবাজারের পঞ্চখণ্ড পরগনার লাউতা গ্রামের ‘দেব পুরকায়স্থ’ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। এ দেশের দর্শন চর্চার প্রাণকেন্দ্র মানবতাবাদী এই ব্যক্তিত্বের জীবনের অবসান ঘটে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে। পাকিস্তান হানাদারদের হত্যাকাণ্ডের প্রথম শিকার হয়েছিলেন যারা, তাদের একজন তিনি।]

যখনই তাঁর কথা আমার মনে পড়ে, ভাবি—যদি তাঁকে সেদিন যেতে না দিতাম। ফিলাডেলফিয়া বিমানবন্দরে আমিই তাঁকে লন্ডনের প্লেনে তুলে দিই। পূরবী সঙ্গে ছিল না। তাঁর চলে যাওয়ার দৃশ্য তার পক্ষে দেখা সম্ভব ছিল না। আমি যখন তাঁকে নিয়ে আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের বাইরের রাস্তায় ট্যাক্সিতে উঠেছিলাম, সে তখন জানলায় এসেও দাঁড়াতে পারেনি। মাত্র ছ’মাস আগে পিতার মৃত্যুতে শোকাতুর অসুস্থ পূরবী তাঁর সান্নিধ্য ছাড়া উঠে দাঁড়াতে পারবে না ভেবেই আমি তাঁকে আসতে লিখেছিলাম, টিকিট পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। ফিলাডেলফিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও সেখান থেকে আড়াইশ মাইল দূরে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ায় তাঁর বক্তৃতার নিমন্ত্রণ ছিল, নিমন্ত্রণ ছিল যুক্তরাজ্যের লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করারও। কিন্তু সেজন্যই তিনি দ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রে যাননি। গেছিলেন মূলত আমাদের দেখে আসার জন্যই।

তিনি আমার পিতা। অথচ আমি তাঁর আপন সন্তান নই। তিনি তো অকৃতদার। তাহলে পালন করেছেন বলেই কি তিনি পিতা? না, তারও বেশি। অপরিমেয় পিতৃস্নেহের ঋণে তিনি আমায় আবদ্ধ করেছেন বলেই আমার পিতা আমার স্ত্রী পূরবীরও। আমাদের বিয়ের পর মাত্র বছর দুয়েক পূরবী তাঁর কাছে ছিল। ওই দুই বছরের প্রথম দিনটি থেকেই তিনি তাকে পুত্রবধূ নয়, কন্যা হিসেবেই জেনেছিলেন।

তিন মাসেই পূরবীকে তিনি শক্ত পায়ে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন। সেই ক্ষমতা তাঁর ছিল। কখনো একসঙ্গে কয়েক ঘণ্টা পূরবীর সঙ্গে কথা বলতেন। বিজ্ঞানের ছাত্রী পূরবীকে দর্শনের অনুরাগী করেছিলেন। সাবসিডিয়ারি পরীক্ষায় পাস করা আমার পক্ষে অসম্ভব হতো যদি-না তিনি প্রতি সন্ধ্যায় ঘণ্টাধিককাল স্নাতক শ্রেণীর পাঠ্য বিষয় ফিলসোফিকে গল্পের চেহারায় আমার সামনে তুলে ধরতেন। বলতেন, ‘বই মুড়ে রেখে দে, আমি যা বলি শুনে যা।’ তিন মাস আমরা তাঁকে ফিলাডেলফিয়ায় ধরে রেখেছিলাম, যদিও তাঁর থাকার কথা ছিল দুই মাস। আমাদের রাগারাগিতে অস্থির হয়ে ভাইস চ্যান্সেলরের কাছে চিঠি লিখে এক মাস ছুটি বাড়িয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু আর বাড়াতে রাজি হননি। বলেছিলেন, ভাইস চ্যান্সেলরের ব্যক্তিগত সচিব জলিল সাহেব (দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল জলিল) পরামর্শ দিয়েছেন আর দেরি না করতে। ভাইস চ্যান্সেলর পছন্দ করবেন না। বলেছিলেন, অবসর নেয়ার ঠিক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনো বিষয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করা উচিত হবে না।

নির্দিষ্ট দিনে আমি তাঁকে প্লেনে তুলে দিতে গেছিলাম। চেক-ইন-এর সময়ে তাঁর সম্পূর্ণ ভ্রমণসূচির খোঁজ নিতে গিয়ে জানলাম করাচি থেকে ঢাকার ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। শুনে দুশ্চিন্তা হয়েছিল। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, লন্ডন থেকে ওটা ঠিক করে নিতে পারবেন। আমার বড় ভাই লন্ডনে ছিলেন, তখন তাই আর ভাবিনি। পরদিন খবরে শুনেছিলাম ভারতীয় বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত নিজ এলাকার ওপর দিয়ে পাকিস্তানি বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। তখনো বুঝিনি কিছু। একাত্তরের ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল দিনগুলোয় মার্চের মহাতমসার কথা কার মনেইবা এসেছিল। কিন্তু আমি তো ভুলতে পারি না। যদি সেদিন তাঁকে প্লেনে তুলে না দিতাম!

কী লেখা যায় তাঁর সম্বন্ধে? যে তিনি, গোবিন্দচন্দ্র দেব, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র, জীবনে কোনো পরীক্ষায় দ্বিতীয় হননি; তিনি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের কাছে প্রত্যক্ষ শিক্ষালাভ করেছেন, ড. দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় সারা জীবন কৃতজ্ঞ চিত্তে তাঁর শিষ্যত্ব স্বীকার করেছেন; নাকি সিলেটে জন্মে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ করে বোম্বাই পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন জীবিকার জন্য, তার পর আবার উল্টো স্রোতে ফিরে এসেছেন ঘর পানে? এসব অথবা তাঁর শিশুর মতন স্বভাব, বিষয়বৈভবে ঔদাসীন্য, ভোজনবিলাস— এসব? মনি (হায়াত্ মামুদ) এসব কথা লিখেছেন হূদয়ের চোখ দিয়ে দেখে। আরো অনেকে লিখবেন হয়তো। কিন্তু অকৃতদার অথচ অপত্যস্নেহে যেকোনো পিতার তুল্য, বৈভব-চিন্তাহীন অথচ প্রখর সাংসারিক জ্ঞানে অতুলনীয়, আত্মভোলা দার্শনিক অথচ প্রভোস্ট হিসেবে ডাইনিং হলে পচা মাছের সমস্যা সমাধানে পটু এমন একজনের কথা কে লিখবে?

আসলে অনেক সময় আমি ভেবেছি স্রোতের বিপরীতে যাওয়াই বোধহয় তাঁর পছন্দ ছিল। নইলে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর রিপন কলেজ দিনাজপুর থেকে পাট তুলে নিলেও তিনি থেকে গেলেন কেন? ওই কলেজের অধ্যাপক হিসেবেই তো তিনি কলকাতা চলে যেতে পারতেন। আবার সহস্র দিন-রাত্রির শ্রম ও নিদ্রার বিনিময়ে দিনাজপুরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজ তিনি গড়ে তুলেছিলেন। সেই কলেজ ছেড়ে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে তিনি ঢাকা চলে এলেন কেন? নাকি জ্ঞানচর্চা নয়, দর্শন প্রচার নয়, মানবকল্যাণই তাঁর আরাধ্য ছিল?

আমি তাঁকে বহুবার জগন্নাথ হলের প্রভোস্টগিরি ছেড়ে দিতে বলেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবার তিনি যখন নয় মাসের জন্য গেছিলেন ফুলব্রাইট অধ্যাপক হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জগন্নাথ হলের দায়িত্ব তখন অন্যের ওপর ন্যস্ত করে। আমি সেই সুযোগে প্রভোস্টের বাসস্থান ছেড়ে দিয়ে ধানমন্ডির বাড়ির ভাড়াটে উঠিয়ে সেখানে গিয়ে বাস শুরু করি। ধানমন্ডি ১৩/২ রোডের পুরনো সেই বাড়িটি স্বাধীন বাংলাদেশে এক ধর্ম-ব্যবসায়ী দখল করে খানকা শরিফ বানিয়ে রেখেছে। আমেরিকা থেকে ফেরার পর তাঁকে আমি ধানমন্ডির বাড়িতেই নিয়ে তুলেছিলাম। ভেবেছিলাম তিনি প্রভোস্টের কাজে ফিরে যাবেন না, পাঁচ নম্বর সেক্রেটারিয়েট রোডের ওই বাড়িতে তাঁকে আর থাকতে হবে না। হায়! আমার আশা।

আমি সেদিন বিকালে বেরুইনি। বেরুলে রাত বারোটা-একটার আগে ঘরে ফিরতাম না বলে তিনি অনুযোগ করতেন এজন্য নয়। না, কখনো তিনি আমাকে কিছু বলেননি। বড়জোর ‘এত রাত অব্দি কোথায় ঘুরে বেড়াস?’ এইটুকুই। যদিও প্রায় রাতেই আমি না ফেরা অব্দি তিনি জেগে থাকতেন। সেদিন আমি বেরুইনি, সন্ধ্যার পর কোথাও আলো থাকবে না বলে। গোলাগুলি বোমার শব্দে জানলার কাচ ভেঙে ছড়িয়ে না যায় সেজন্য যথারীতি জানলায়, দরজায় আঠা দিয়ে কাগজের পটি সাঁটা শেষ করে, পুরো শহরের সঙ্গে আমরাও সেদিন অন্ধকারে শত্রুবিমানের আক্রমণ আশঙ্কায় স্তব্ধ হয়েছিলাম। উনিশশ পঁয়ষট্টির সেপ্টেম্বরের এক বিকাল।

তিনি বাইরে, বাগানে, যথারীতি দ্রুত হেঁটে এ মাথা ও মাথা করছিলেন। আমি চুপ করেই বসেছিলাম আমার বিছানায়। বাইরের ঘরে লোক আসার শব্দও হয়তো শুনেছিলাম, কিন্তু সে তো প্রতি বিকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত অসংখ্যবার শোনা যায়।

তিনি নিঃশব্দে, আমার সামনে এসে দাঁড়ালে আমি প্রায় চমকে উঠে তাঁর দিকে তাকাই। অমন গলার স্বর আমি তাঁর কখনো শুনিনি। তিনি বললেন, ‘ওরা আমাকে নিয়ে যেতে চায়।’ আমি বুঝতে পারি না, বলি, ‘কারা?’ তাঁর মুখে অমন ভাবও কখনো দেখিনি, ‘আইবির লোক।’ আমি দ্রুত বাইরের ঘরে এসে প্যান্ট-শার্ট পরা যে দুই ভদ্রলোককে দেখলাম, তারা আমার একেবারে অপরিচিত নয় বলেই মনে হলো। শহরে, বিশ্ববিদ্যালয় অঞ্চলে এদের আমি আগে দেখে থাকব ভেবেই ক্রুদ্ধকণ্ঠে ওই জাতীয় প্রস্তাবের কারণ জিজ্ঞাসা করতে ইতস্তত করিনি। তারা ধীরকণ্ঠে ‘এটি আমাদের চাকরি এবং আমাদের এই আদেশ’ বলে আমাকে আশ্বস্ত করতে চাইলেন। ‘তাড়াতাড়ির কিছু নেই। পনের-বিশ মিনিটের মধ্যে ওঁকে তৈরি করে দিন’— তারা বলেন। আমার আর কিছু বুঝতে বাকি থাকেনি।

তবুও নির্বোধের মতো জিজ্ঞাসা করি, ‘ওয়ারেন্ট আছে?’ তারা না হেসেই বললেন, ‘ওয়ারেন্টের কোনো প্রয়োজন হয় না, এখন।’ তারপরে কী ভেবে বললেন, ‘আপনিও সঙ্গে চলুন। ওঁর যদি কিছু দরকার হয়, পরে এসে নিয়ে যাবেন।’ ওই পনের মিনিটের মধ্যে কাপড় পরা ছাড়া ভাইস চ্যান্সেলর ও অন্য দু-চারজন সতীর্থকে তিনি ফোন করেছেন আমি শুনতে পেলাম।

দুই রিকশায় আমাদের দুজনের সঙ্গে ওরা দুজনে বসলেন। নাজিমুদ্দিন রোডের মোড়ে সেন্ট্রাল জেলের সামনে নেমে রিকশা ভাড়া মেটাতে মেটাতে তারা আমায় বললেন, ‘আপনি এখানেই অপেক্ষা করুন।’ লোহার গরাদ দেয়া সদ্য খোলা দরজা দিয়ে ঢুকে যাওয়ার মুখে আমার চোখে জল দেখে শুধু তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। তাঁর কাঁদবার বয়স ছিল না, আমারও নয়, কিন্তু সম্ভবত তাঁর চোখেও জল ছিল।

ঘণ্টাখানেক জেলগেটে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তখন যদিও মনে হয়েছিল একযুগ। এক ঘণ্টা পর তিনি আবার দরজার সামনে এলে আমি ভাবলাম বোধহয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনার কথা বলবেন। কিন্তু না, সান্ত্রী দরজা খুলে দিল এবং তিনি ওই দুজনের সঙ্গে বেরিয়ে এলেন। বললেন, ‘আমাকে রাখল না।’ গোয়েন্দা দুজন মহোপকারীর মতো সামনে এসে আমায় বললেন, ‘ওঁকে নিয়ে যান।’

কৃতজ্ঞতায় আমার মন ভরে গেল।

ঘরে এসে পৌঁছানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই যিনি বাগানের দরজা দিয়ে ঢুকলেন, তিনি আমার অপরিচিত। আলাপ থেকে বুঝলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অধ্যাপকের বড় ভাই হবেন আগন্তুক এবং তাঁর গুণমুগ্ধ। পুলিশের বড় কর্মচারী। আমাকে বললেন, ‘শেষ মুহূর্তে অনেক টেলিফোন করে অনেক ধরাধরি করে ওঁকে ঘরেই রেখে দেয়ার ব্যবস্থা করতে পেরেছি।’ তারপর ওঁরা দুজনে বাক্যালাপ শুরু করেন। ওই উপকারীর নাম কী আমি আজো সঠিক জানি না। সম্ভবত তিনি ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তত্কালীন অধ্যাপক রেজাই করিমের ভাই।

সেদিন রাতে ঘনকৃষ্ণ অন্ধকারে বিছানায় শুয়ে তিনি ঘুমুতে পারেননি। রাতে অস্বস্তিকর নড়াচড়ার শব্দে পাশের ঘরে গিয়ে দেখি তাঁর শরীরে জ্বর। পরদিন সকালবেলা থেকেই ঘনঘন বাথরুমে যাওয়া শুরু হয় ও বিকালের দিকে প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় অসাড়েই মলমূত্র ত্যাগ করতে থাকেন। সদ্য মেডিকেল কলেজ থেকে বেরনো ইন্টার্নি বর্তমানে ভারতবাসী ডা. কালিদাস বৈদ্যও তখন বাসাতেই থাকতেন। সবাই মিলে পরামর্শ করে অ্যাম্বুলেন্স ডাকিয়ে তাঁকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় অবশেষে।

মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন তলার কেবিনে প্রায় দশ দিন ছিলেন তিনি। কালিদাস বৈদ্য আমাকে বলেছিলেন, ‘খুবই ঘাবড়ে গেছেন, নার্ভাস হয়ে পড়েছেন, আর কিছু নয়’ হয়তো তাই। কিন্তু উনিশশ চৌষট্টির দাঙ্গার সময়ে বাসায় না থেকে জগন্নাথ হলে সবার সঙ্গে থাকার জন্য শুভাকাঙ্ক্ষীরা বলেছিল তাঁকে। হলে প্রভোস্টের অফিসে তাঁর বিছানাও করা হয়েছিল, কিন্তু তিনি যাননি। নিঃসংশয়ে বাগানে পায়চারি করেছেন। ঘুরে বেড়িয়েছেন। পঁয়ষট্টির সেপ্টেম্বরের সময়ে আমাকেও বার দুয়েক গোয়েন্দা পুলিশের তলবে তাদের দফতরে যেতে হয়েছিল। নানা রকম জিজ্ঞাসাবাদের শেষে চলে আসতে পেরেছিলম ঠিকই, কিন্তু অভিজ্ঞতার সেই তিক্ত স্বাদ কখনো যায়নি। অথচ তিনি পরবর্তীকালে একবারের জন্যও বলেননি, ‘তুই ভারতে চলে যা।’ একজন হিন্দু অভিভাবকের পক্ষে ও রকম বলা ওই সময়ে, ওই অবস্থায় খুবই সম্ভব ছিল। লোকের ভয়ে আমাকে তিনি পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগের পরামর্শ দেননি, এ কথা মানি না। উনিশশ আটান্নয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিলাম আমি বগুড়া থেকে। নানা সূত্রে তাঁর সঙ্গে আমার পরিচয় গাঢ় হয়েছিল। তাঁর তত্কালীন রচনাবলির শ্রুতিলেখক সম্পাদক ছিলাম আমি। প্রথমে লেখার প্রয়োজনে রাত্রিবাস এবং কিছুকালের মধ্যে পাকাপাকিভাবে হল ছেড়ে আমি তাঁর বাসায় চলে আসি। পরে বগুড়া থেকে আমার বাবা ঢাকায় এলে তাঁকে বলেছিলেন, ‘আপনার আরো দুটি ছেলে আছে, এটাকে আমায় দিয়ে দিন।’ সেই থেকে আমি তাঁর সন্তান। আসলে আমি তো তাঁর ছাত্রই। আমি ভারতে চলে গেলে তিনি কেন মন্দভাগী হবেন?

আমাকে তিনি বলতেন, ‘এই আমার দেশ, আমি কোথায় যাব?’ না, তিনি কোথাও যাননি। এ দেশের মাটিতেই রয়ে গেছেন।

লেখক: সাহিত্যিক

(লেখাটি দৈনিক বণিক বার্তা থেকে সংগ্রহিত)

আপনার মন্তব্য

আলোচিত