সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ মে, ২০১৬ ১৬:০১

যুদ্ধাপরাধী নিজামীর রিভিউ খারিজের রায় প্রকাশ

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শির্ষ যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামির আমির  মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট।

সোমবার (৯ মে) এ রায় প্রকাশ করা হয়। এখন এই রায় ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে পাঠানো হবে কারাগারে। ফাঁসির আসামি নিজামীকে রায় পড়ে শুনিয়ে জানতে চাওয়া হবে, তিনি নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনার কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না।

আদালতের সব বিচারিক প্রক্রিয়ার নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় একাত্তরের বদরপ্রধান নিজামীর সামনে এখন কেবল ক্ষমা প্রার্থনার সুযোগই বাকি।  

আপিল বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অরুনাভ চক্রবর্তী জানান, বিচারকদের সইয়ের পর সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার আগে মতিউর রহমান নিজামীর রিভিউ খারিজের রায় প্রকাশ করা হয়।

“নিয়ম অনুযায়ী এই রায় এখন আমরা বিচারিক আদালত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেব।”

এর আগে গত ৫ মে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ নিজামীর আবেদন খারিজ করে দেয়।  বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

আপিল বিভাগের একই বেঞ্চ গত ৬ জানুয়ারি নিজামীর আপিলের রায় ঘোষণা করেন। ২০১৪ সালের ২৯ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া প্রাণদণ্ডের সাজাই তাতে বহাল থাকে।

জামায়াত আমির নিজামী একাত্তরে ছিলেন দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিমে আলা বা সভাপতি এবং সেই সূত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আল বদর বাহিনীর প্রধান।

তার পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও নেতৃত্বেই যে আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছিল- এই মামলার বিচারে তা প্রমাণিত হয়।

সুপ্রিম কোর্ট ১৫ মার্চ আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করলে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে, পর দিন তা পড়ে শোনানো হয় যুদ্ধাপরাধী নিজামীকে।

রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ায় রোববার রাতে তাকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।  

প্রাণভিক্ষার সুযোগ কেবল বাকি
দণ্ড কার্যকরের আগে যুদ্ধাপরাধী নিজামীর শেষ আইনি সুযোগ ছিল রিভিউ আবেদন। তা খারিজের মধ্য দিয়ে আইনি লড়াইয়ের পরিসমাপ্তি হয়েছে। এখন সংবিধানের ৪৯ অনু্চ্ছেদ অনুসারে শেষ সুযোগে দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামি প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন।

আসামি তা না চাইলে বা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা না পেলে সরকার দিনক্ষণ ঠিক করে কারা কর্তৃপক্ষকে ফাঁসি কার্যকরের নির্দেশ দেবে। তার আগে স্বজনেরা কারাগারে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারবেন।

রিভিউ খারিজের পর এরইমধ্যে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েরা কাশিমপুরে গিয়ে নিজামীর সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করেছেন। তবে সে সময় তারা ক্ষমা ভিক্ষার  বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম  এর আগে জানিয়েছেন, রিভিউয়ের রায় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে যাবে। দিন তারিখ ঠিক করবে সরকার এবং দণ্ড কার্যকর করবে কারা কর্তৃপক্ষ।

“তবে এর আগে নিজামী যদি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা করতে চান সে সুযোগ তিনি পাবেন। তাকে সেটি জানানো হবে।”

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝোলানো হয় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে। আর ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ। তাদের দুজনের রিভিউ আবেদন একদিনের মধ্যে শুনানি শেষে খারিজ হয়ে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা চাননি বলে সরকারের পক্ষ থেকে সে সময় জানানো হয়, পরে তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।

এরপর জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় একই দিনে, গতবছর ২১ নভেম্বর। তারা প্রাণভিক্ষার আবেদন করলেও রাষ্ট্রপতি তা নাকচ করে দেন বলে সে সময় সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

এর বাইরে যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামিদের মধ্যে কেবল জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় এসেছে আপিল বিভাগে। ট্রাইব্যুনালে তাকে দেওয়া সর্বোচ্চ সাজার রায় কমিয়ে আপিল বিভাগ আমৃত্যু কারাদণ্ডের যে রায় দিয়েছে, তার রিভিউ চেয়েছে দুই পক্ষই।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত