সিলেটটুডে ডেস্ক

১৯ আগস্ট, ২০১৫ ০১:২৭

যুদ্ধাপরাধী নিজামীর আপীল শুনানি আজ, দুই মাস সময় চেয়েছে আসামিপক্ষ

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াতে ইসলামির আমীর মতিউর রহমান নিজামীর আপিল শুনানি শুরু হচ্ছে বুধবার। আপিল শুনানি শুরুর আগেই সুপ্রীম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটির পর আরও দুই সপ্তাহের সময় চেয়েছেন নিজামী’র আইনজীবিরা।

সুপ্রিম কোর্টের বর্ষপঞ্জিতে দেখা যায়, ১৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার থেকে ৩১ অক্টোবর শনিবার পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি থাকবে। অবকাশের পর আরও দুই সপ্তাহ সময় দিলে সেক্ষেত্রে সময় চাওয়া হয় দুই মাসের।

মঙ্গলবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে তার পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সময়ের আবেদন জানান অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন। সময়ের আবেদনে কারণ হিসেবে প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনের ব্যক্তিগত অসুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এ আবেদনসহ বুধবারের (১৯ আগস্ট) আপিল বিভাগের ১ নম্বর বেঞ্চের কার্যতালিকায় ৫ নম্বরে রয়েছে নিজামীর আপিল মামলাটি।

চার সদস্যের এ বেঞ্চের নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। সদস্য হিসেবে রয়েছেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

এ বিষয়ে মতিউর রহমান নিজামীর অপর আইনজীবী শিশির মনির সংবাদমাধ্যমকে জানান, আগামী ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য বার কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন খন্দকার মাহবুব। নির্বাচনের প্রচারণায় তিনি ঢাকার বাইরে আছেন। এছাড়া আমাদের প্রস্তুতিরও বিষয় রয়েছে। তাই সুপ্রিম কোর্টের অবকাশের পর দুই সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গত বছরের ২৯ অক্টোবর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আনোয়ারুল হক ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ নিজামীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন নিজামীকে।

এ রায়ের বিরুদ্ধে ২৩ নভেম্বর তিনি আপিল করেন আপিল বিভাগে। ৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার আপিলে মোট ১৬৮টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চেয়েছেন তিনি। আপিল মামলাটির অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হচ্ছেন জয়নুল আবেদিন তুহিন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নিজামীর আপিলের সার-সংক্ষেপ দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিলের জন্য রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।

নিজামীর বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড এবং হত্যা-গণহত্যাসহ সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) মোট ১৬টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের মধ্যে ৮টি অর্থাৎ ১, ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৮ ও ১৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয় ট্রাইব্যুনালের রায়ে। এর মধ্যে চারটি অর্থাৎ ২, ৪, ৬ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে বুদ্ধিজীবী গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, সম্পত্তি ধ্বংস, দেশত্যাগে বাধ্য করার অপরাধে রায়ে নিজামীর ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়।

বাকি চারটি অর্থাৎ ১, ৩, ৭ ও ৮ নম্বর অভিযোগে আটক, নির্যাতন, হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার দায়ে তাকে দেওয়া হয়েছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।

প্রমাণিত চারটি অর্থাৎ সাঁথিয়া উপজেলার বাউশগাড়িসহ দু’টি গ্রামে প্রায় সাড়ে ৪০০ মানুষকে গণহত্যা ও প্রায় ৩০-৪০ জন নারীকে ধর্ষণ (২ নম্বর অভিযোগ), করমজা গ্রামে ১০ জনকে গণহত্যা, একজনকে ধর্ষণসহ বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ (৪ নম্বর অভিযোগ), ধুলাউড়ি গ্রামে ৫২ জনকে গণহত্যা (৬ নম্বর অভিযোগ) এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও সুপিরিয়র রেসপন্সিবিলিটির (১৬ নম্বর অভিযোগ) দায়ে ফাঁসির আদেশ পেয়েছেন নিজামী।

অন্য চারটি অর্থাৎ পাবনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাওলানা কছিমুদ্দিন হত্যা (১ নম্বর অভিযোগ), মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে পাকিস্তানি সেনা, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র (৩ নম্বর অভিযোগ), বৃশালিখা গ্রামের সোহরাব আলী হত্যা (৭ নম্বর অভিযোগ) এবং রুমী, বদি, জালালসহ সাত গেরিলা যোদ্ধা হত্যার প্ররোচনার (৮ নম্বর অভিযোগ) দায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।

৫ এবং ৯ থেকে ১৫ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। এগুলোও ছিল হত্যা-গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন, বাড়ি-ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ এবং বক্তৃতা-বিবৃতির মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের উসকানি ও প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত