সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ ১৩:৫৪

হবিগঞ্জের তিন রাজাকারের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের চার ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে হবিগঞ্জ জেলার দুই সহোদর ও তাদের এক চাচাতো ভাইয়ের বিচার শুরু করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য শুরুর জন্য ২১ অক্টোবর দিন ঠিক করে দিয়েছে।
 
তিন আসামি হলেন- বানিয়াচং উপজেলার মহিবুর রহমান বড় মিয়া, তার ছোট ভাই মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া এবং তাদের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাক।
 
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চারটি ঘটনায় হত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর মহিবুর-মুজিবুর-রাজ্জাকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে অভিযোগ গঠনের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। আসামিপক্ষে অভিযোগ গঠনের বিপক্ষে শুনানি করেন মহিবুর-মুজিবুর-রাজ্জাকের আইনজীবী মো. মাসুদ রানা।   
 
এ বছরের ৩১ মে তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে ওইদিনই ইমামবাড়ি এলাকা থেকে খাগাউড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান বড় মিয়া (৭০) ও তার ছোট ভাই বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়াকে(৬৫) গ্রেফতার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত এই দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শুরু হয়ে এবছরের ২৮ এপ্রিল তা শেষ হয়। এতে ২১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেয় তদন্তকারী কর্মকর্তা।

১২ ফেব্রুয়ারি তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। ওইদিন ট্রাইব্যুনালে তাদের হাজির করতে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনাল। পরে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।

গত ৩০ এপ্রিল মহিবুর ও মুজিবুরের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন। সে সময় এ মামলার তদন্তকালে আব্দুর রাজ্জাকের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানান প্রসিকিউশন।

১৭ মে রাজ্জাককেও এ মামলার আসামি করে তিন আসামির বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সীমন ও রেজিয়া সুলতানা চমন। এদিন আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।

১৯ মে মৌলভীবাজার জেলা সদরের আতানগিরি পাহাড় থেকে আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেফতার করে বানিয়াচং থানা পুলিশ।

২০০৯ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আকল মিয়ার স্ত্রী ভিংরাজ বিবি হবিগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কগনিজেন্স-৪ এর বিচারক রাজীব কুমার বিশ্বাসের আদালতে মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে মামলাটি (নং- ২৭০/০৯) দায়ের করেন।

বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ২৫ কার্যদিবসের মধ্যে বানিয়াচং থানা পুলিশকে এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। পরে মামলাটি আদালত থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।

গ্রেপ্তারকৃত মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া (৬৫) হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলাধীন খাগাউড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তার ভাই মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার (৬০) ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বানিয়াচং উপজেলার খাগাউড়া গ্রামে নেজামে ইসলামের এমএনএ সৈয়দ কামরুল আহসানের বাড়িতে রাজাকার ক্যাম্প ও টর্চার সেল ছিল।

মহিবুর রহমান বড় মিয়া ও মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়ার বড় ভাই কলমধর ছিলেন খাগাউড়া ইউনিয়নের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এবং ছোট ভাই মোস্তফা রাজাকার কমান্ডার ছিলেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত