নিজস্ব প্রতিবেদক

১৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ১৬:৪৮

বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙায় নির্মূল কমিটির নিন্দা

বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য

কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কয়ায় ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক শহীদ বিপ্লবী বাঘা যতীনের ভাস্কর্য ভাঙার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।

শুক্রবার সংগঠনের সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুলের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গতকাল ১৭ ডিসেম্বর (২০২০) রাতে মৌলবাদী দুর্বৃত্তরা কুমারখালীর কয়া গ্রামে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক শহীদ বিপ্লবী বাঘা যতীনের জন্মস্থানে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার কর্তৃক স্থাপিত আবক্ষ ভাস্কর্যটির মুখমণ্ডলের একটি অংশ ভেঙে ফেলেছে। বিএনপি-জামায়াতের মদদে হেফাজত-খেলাফতের জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসী নেতারা সারা দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার হুমকি দিয়ে যেভাবে ওয়াজের নামে সন্ত্রাস ও উন্মাদনা ছড়াচ্ছে তারই ধারাবাহিকতায় কুমারখালীতে অগ্নিযুগের এই বিপ্লবীর ভাস্কর্য ভাঙা হয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা অবিলম্বে ভাস্কর্য ভাঙার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের এবং এদের প্ররোচক ও নির্দেশদাতাদের গ্রেফতার এবং বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৭৯-১৯১৫), যিনি বাঘা যতীন নামে খ্যাত, জন্মগ্রহণ করেছেন কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর কয়া গ্রামে তাঁর মাতুলালয়ে। ছাত্রজীবনেই তিনি অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন এবং দেশমাতৃকার মুক্তির শপথ গ্রহণ করেন। ১৯১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর তিনি ইংরেজ বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে উড়িষ্যার বালাশোরে শহীদ হন।

বিপ্লবী বাঘা যতীনের জীবনের মূলমন্ত্র ছিল “আমরা মরব, দেশ জাগবে”। মাতৃভূমির মুক্তির জন্য তাঁর মহান আত্মত্যাগ যুগে যুগে স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করেছে বাংলাদেশ ভারতবর্ষের তরুণ সমাজকে। ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে তরুণদের এই আত্মদান অনিবার্য করেছে নৃশংস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অবিস্মরণীয় বিজয়ে।

‘সংবিধানের ২৪ ধারায় ভাস্কর্য সহ বাঙালির ইতিহাস ও সংস্কৃতির ‘ঐতিহাসিক গুরুত্বসম্পন্ন বা তাৎপর্যমণ্ডিত স্মৃতিনিদর্শন, বস্তু ও স্থানসমূহ বিকৃতি, বিনাশ বা অপসারণ’ থেকে রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে দেয়া হলেও সরকার এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা সংবিধানের ২৪ ধারা লঙ্ঘনকারী ব্যক্তি ও সংগঠনসমূহকে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার জন্য নতুন আইন প্রবর্তনেরও দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় সারা দেশে ভাস্কর্য ভাঙার পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তরা আমাদের কয়েক হাজার বছরের গৌরবের ইতিহাস ও সম্প্রীতির যাবতীয় নিদর্শন ‘ইসলামবিরোধী’ ফতোয়া দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে বাংলাদেশকে মোল্লা উমরের আফগানিস্তান বা জিয়াউল হকের পাকিস্তান বানাবে। এভাবেই তারা ’৭১-এর শোচনীয় পরাজয়ের প্রতিশোধ নেবে। মৌলবাদী সন্ত্রাসীদের কঠোর শাস্তির আওতায় না এনে সরকার যদি এদের সঙ্গে কোনও ধরনের সমঝোতার পথ গ্রহণ করে- তা দেশ ও জাতির জন্য সমূহ বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত