সিলেটটুডে ডেস্ক

১৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২১ ১৭:১৫

স্বাধীন মত প্রকাশ নিরুৎসাহিত করতেই অভিজিৎকে হত্যা

রায়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ

আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণের স্বাধীন মত প্রকাশ নিরুৎসাহিত করতেই বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যা করা হয়েছে বলে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছে আদালত।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসি ও রাজু ভাস্কর্যসংলগ্ন এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী কম্পিউটার প্রকৌশলী অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। তার স্ত্রী বন্যা আহমেদও গুরুতর জখম হন।

এ ঘটনার ছয় বছর পর মঙ্গলবার মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান।

রায়ে ফাঁসির দণ্ড পেয়েছেন জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হক, সংগঠনের সদস্য মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (সাংগঠনিক নাম শাহরিয়ার), আবু সিদ্দিক সোহেল (সাংগঠনিক নাম সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব), আরাফাত রহমান (সাংগঠনিক নাম সিয়াম ওরফে সাজ্জাদ ওরফে শামস) ও আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান ওরফে হাসিবুল ওরফে আব্দুল্লাহ।

আরেক আসামি শফিউর রহমান ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত ছয় জনের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, মতামত প্রকাশ ও স্বাধীন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে অভিযুক্ত আসামিরা অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেন। এ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত আসামিদের কারো ভূমিকা ছোট বা বড় করে দেখার সুযোগ নেই।

বিচারক বলেন, বাংলা একাডেমির বইমেলায় বিজ্ঞানমনস্ক লেখকদের আড্ডায় অংশগ্রহণ শেষে ফেরার পথে আক্রমণের শিকার হন অভিজিৎ। নাস্তিকতার অভিযোগ এনে নিষিদ্ধ সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্যরা সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন।

‘অভিজিৎ রায়কে হত্যার উদ্দেশ্য হলো জননিরাপত্তা বিঘ্ন করে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ এবং নিরুৎসাহিত করা, যাতে ভবিষ্যতে কেউ স্বাধীনভাবে লেখালেখি ও মত প্রকাশ না করতে পারেন।’

পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বিচারক বলেন, ‘অভিজিৎ রায় হত্যায় অংশগ্রহণকারী অভিযুক্ত আসামিরা বেঁচে থাকলে আনসার আল ইসলামের বিচারের বাইরে থাকা সদস্যরা একই অপরাধ করতে উৎসাহী হবে এবং বিজ্ঞানমনস্ক ও মুক্তমনা লেখকেরা স্বাধীনভাবে লিখতে ও মতামত প্রকাশ করতে সাহস পাবেন না। কাজেই এ আসামিরা কোনো সহানুভূতি পেতে পারে না। আসামিদের সাজা দিলে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করতে ভয় পাবে এবং নিরুৎসাহিত হবে।’

অভিজিৎ হত্যার পরপরই তার বাবা অধ্যাপক অজয় রায় শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। এরপর ২০১৯ সালে আদালতে ছয় জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম।

অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট ছয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করে আদালত।

দুই পক্ষের যুক্ততর্ক শুনানি শেষে গত ৪ ফেব্রুয়ারি মামলার রায়ের জন্য ১৬ ফেব্রুয়ারি তারিখ দেন বিচারক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত