সিলেটটুডে ডেস্ক

১৯ এপ্রিল, ২০২১ ২৩:০৪

ডা. জেনীকে ‘অপদস্থ ও অপমানের’ ঘটনায় ক্ষোভ চিকিৎসকদের তিন সংগঠনের

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনীকে ‘অপদস্থ ও অপমানের’ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চিকিৎসকদের অন্যতম তিন প্রধান সংগঠন। সোমবার (১৯ এপ্রিল) সংগঠন তিনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিচয় দেওয়ার পরও রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় চিকিৎসককে এভাবে হয়রানি কোনোভাবেই কাম্য নয়। জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার পরও চিকিৎসকের সঙ্গে পুলিশের এমন আচরণ সংস্থাটির ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

সংগঠন তিনটি হলো বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং বাংলাদেশ ডক্টর্স ফাউন্ডেশন (বিডিএফ)।

বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, কোভিড পরিস্থিতিতে সম্মুখসারির যোদ্ধা চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা কর্মস্থলে যাতায়াতের সময় বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হয়রানি ও নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন। এতে তারা আতঙ্কগ্রস্ত ও হতাশ হয়ে পড়েছেন।

রোববার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলোজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনীর গাড়ি আটকে পরিচয় জানতে চাওয়ার নামে হেনস্তা করা হয়েছে জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, নিজ গাড়িতে কর্মরত প্রতিষ্ঠানের স্টিকার লাগানো, নিজের নাম লেখা, চিকিৎসক গাউন পরা এবং নিজেকে চিকিৎসক পরিচয় দেওয়ার পরও তাকে আক্রমণাত্মকভাবে জেরা করে হেনস্তা ও উত্ত্যক্ত করা হয়েছে। এতগুলো পরিচয় দেওয়ার পরও কেবল মুভমেন্ট পাস ও প্রাতিষ্ঠানিক আইডিকার্ডের নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সচিবালয়, পুলিশ কিংবা সাংবাদিক লেখা স্টিকারযুক্ত কোনও গাড়ি কোথাও আটকানো হয়েছে বা থামানো হয়েছে বলে এখন পর্যন্ত নজির নেই জানিয়ে বিএমএ চিঠিতে উল্লেখ করেছে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করলে এবং রাস্তায় ক্রমাগত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হয়রানি ও নাজেহাল করতে থাকলে তারা মানসিক চাপে পড়বেন। কাজে উৎসাহ হারাবেন, যার প্রভাব বর্তমান নাজুক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পড়তে বাধ্য।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে তারা বলেন, রোববারের ঘটনায় দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত করে বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানায় বিএমএ।

এদিকে, মুভমেন্ট পাসের নামে চিকিৎসকদের হেনস্তা করা হচ্ছে জানিয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) জানিয়েছে, তারা মনে করছে এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে চিকিৎসক সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপকৌশল। একইসঙ্গে পরিকল্পিতভাবে চিকিৎসক সমাজ ও পুলিশ বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর হীন প্রচেষ্টা বলেও মনে করছে তারা।

সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা জানিয়েছেন।

স্বাচিপের বিবৃতিতে বলা হয়, চলমান সংকটজনক পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে ও নেতৃত্বে দেশের চিকিৎসকরা যখন সম্মুখ সারিতে জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে কোভিড মোকাবিলায় নিবেদিত, তখন নিজ কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে পুলিশ বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের মাধ্যমে একজন সিনিয়র নারী চিকিৎসককে অযাচিতভাবে অপমানজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি করে হেনস্তা করার ন্যক্কারজনক ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিএসএমএমইউ এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাঈদা শওকত জেনী কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে রাজধানীর এলিফেন্ট রোডে একদল পুলিশ সদস্য গাড়ি থামিয়ে তার কাছে মুভমেন্ট পাস দাবি করেন। এ সময় গাড়ির সামনে লাগানো বিএসএমএমইউয়ের লোগো সম্বলিত স্টিকার এবং বিএসএমএমইউ পরিচালক কর্তৃক সম্মুখ সারির স্বাস্থ্যকর্মী চলাচল সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র এবং বিএসএমএমইউয়ের লোগোসহ চিকিৎসকের নামাঙ্কিত অ্যাপ্রোন প্রদর্শন করে নিজের পরিচয় প্রদান করেন। কিন্তু সব কিছুকেই ভুয়া উল্লেখ করে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা অন্যায়ভাবে তার কাছে মুভমেন্ট পাস দাবি করেন ও অশোভন আচরণ করেন। পুরো ঘটনাটি উদ্দেশ্যমূলক, চিকিৎসক সমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপকৌশল এবং দেশের চিকিৎসক সমাজ ও পুলিশ বাহিনীকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়ার একটি হীন প্রচেষ্টা বলে আমরা মনে করি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, করোনার চলমান দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় দেশব্যাপী কঠোর লকডাউন কর্মসূচির প্রথম দিনেও দেশের বেশ কিছু জায়গায় কর্মস্থলে আসা-যাওয়ার পথে চিকিৎসকদের বাধা ও নিগৃহীত হওয়ার অভিযোগ ওঠেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা চিকিৎসকদের কর্মস্থলে যাতায়াত নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করার দাবি জানালে পুলিশ প্রশাসন গণমাধ্যমে ‘চিকিৎসকদের যাতায়াতে কোনও মুভমেন্ট পাস প্রয়োজন হবে না’ মর্মে বিবৃতি প্রদান করে।

এরপরও গতকাল এলিফেন্ট রোডে দেশের একজন সিনিয়র চিকিৎসকের সঙ্গে যে ভাষায় মুভমেন্ট পাস দাবি করা হয়েছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, লকডাউন চলাকালে রাস্তায় কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে, যারা রাষ্ট্রের জরুরি সেবা দানে নিয়োজিত ও আত্মনিবেদিত তাদের মুভমেন্টে সাহায্য করা। তাদের কাজ সহজতর ও নিরাপদ করা। কিন্তু গুটিকয়েক পুলিশ সদস্য তা না করে এর বিপরীতে অবস্থান নিয়ে হীন মানসিকতা প্রদর্শন করছেন। যা পুরো বাহিনীর ভূমিকা ও আচরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে জোর দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা।

চিকিৎসকদের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ ডক্টর্স ফাউন্ডেশন (বিডিএফ) এর চেয়ারম্যান ডা. শাহেদ রফি পাভেল ও মহাসচিব ডা. শাহ মো. জাকির হোসেন সুমন স্বাক্ষরিত সংগঠনের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছে, গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত ২০০ চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত মারা গেছেন। এবারের লকডাউনে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে যাতায়াতের জন্য কোনও মুভমেন্ট পাসের প্রয়োজন নেই এবং চিকিৎসকরা লকডাউনের আওতামুক্ত হিসেবে প্রজ্ঞাপন থাকার পরও প্রথমদিন থেকেই বিভিন্ন চেকপোস্টে চিকিৎসকদের কর্মস্থলে যেতে অন্যায়ভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এমনকি তাদের জরিমানা পর্যন্ত করা হয়েছে।

বিডিএফ জানায়, গত ১৮ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডা. সাঈদা শওকত জেনীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনায় চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু ফ্রন্টলাইনারদের মধ্যে মনোবল ধরে রাখা আবশ্যক।

লকডাউন চলাকালীন চিকিৎসকরা যেন নির্বিঘ্নে কর্মস্থলে যাতায়াত করতে পারেন সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন। বিডিএফ এ জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত