সিলেটটুডে ডেস্ক

১৮ জুন, ২০২২ ২০:৩২

প্রয়োজনে সড়ক কেটে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করার নির্দেশ

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলে বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। দেশের উত্তরের নদ-নদীতেও পানি বেড়ে চলেছে। ইতোমধ্যে ১০ জেলার ৬৪ উপজেলা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্যার পানিপ্রবাহ বাধাহীন করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। প্রয়োজনে সড়ক কেটে পানি নামার ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।

রাজধানীর মিণ্টো রোডের সরকারি বাসভবনে শনিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন নির্দেশনার কথা জানান তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘সড়কের বাধার কারণে কোথাও বন্যার পানি নামতে সমস্যা হলে তা নির্দ্বিধায় কেটে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক করতে বলা হয়েছে।’

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বন্যার পানি অপসারণের জন্য কোথাও কোনো রাস্তা বাধা হয়ে দাঁড়ালে তা কেটে দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে সে অনুযায়ী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

‘তারা পর্যবেক্ষণ করছে, কোথাও সড়ক কাটার প্রয়োজন হলে তারা কেটে দেবে। সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বলেছি, বিভাগীয় কমিশনারকেও বলা হয়েছে। তবে বন্যাদুর্গত এলাকায় ইতোমধ্যে বেশিরভাগ রাস্তাই ডুবে গেছে। রাস্তার ওপর দিয়ে পানি যাচ্ছে।’

কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলে সড়কের কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘কোথাও কোনো রাস্তার কারণে পানিপ্রবাহ বন্ধ হলে সেটা কেটে দিয়ে বেইলি ব্রিজ বসাতে বলা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সেই নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এখন পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য আসেনি যে এই রাস্তা কেটে না দিলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে।

‘কিছুক্ষণ আগে সিলেটের মেয়র আমাকে জানিয়েছেন যে শহরের ভেতরে কিছু রাস্তা কেটে দেয়া লাগতে পারে। কাটার জন্য আমি অভয় দিয়েছি, পরবর্তীতে মেরামতের জন্য আমরা বরাদ্দ দেব।’

বাঁধ নির্মাণ বা কারো অবহেলার কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে কী না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন সব বাঁধ ও রাস্তার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নেমে যাওয়ার সময় কোনো রাস্তা বা অবকাঠামো সরানোর প্রয়োজন হলে সেটা আমরা সরিয়ে দেব।’

সুনামগঞ্জে বন্যার্তদের জন্য সরকারের নেয়া ব্যবস্থা প্রসঙ্গে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘সুনামগঞ্জে সড়কের ওপর কোমর সমান পানি। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। যেসব টিউবওয়েল রাইজ করার সুযোগ আছে সেগুলো রাইজ করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে বেশকিছু মেকানিক ও যন্ত্রপাতি পাঠানো হয়েছে। জেলাতে আমাদের যে ধরনের স্টক আছে সেখান থেকে সরবরাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের কাজে সমন্বয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি কন্ট্রোল রুম করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যুগ্ম সচিব জসীম উদ্দীনকে আহ্বায়ক করে আমরা কন্ট্রোল রুম করেছি। সেখান থেকে জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

সিলেট অঞ্চল ছাড়াও বেশ কিছু এলাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। সেই এলাকাগুলো হল- নেত্রকোনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা। এসব এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানি আরেকটু বাড়লে মৌলভীবাজারও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানান মন্ত্রী।

সিলেটে সাম্প্রতিক সময়েই বন্যা হয়েছে। এবারের বন্যা মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি ছিল কিনা প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রস্তুতি ছিল বলেই আমরা তাৎক্ষণিকভাবে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠিয়েছি, তাৎক্ষণিকভাবে টিউবওয়েল রাইজ করার জন্য লোক পাঠিয়েছি।

‘পূর্বাভাস সম্পর্কে আমরা সতর্ক ছিলাম। প্রতিটি জেলাতে পরিস্থিতি মোকাবিলার ব্যবস্থা না থাকলে তাৎক্ষণিক এই কার্যক্রম চালাতে পারতাম না। প্রতিটি জেলাতে আমাদের ৮-১০ লাখ করে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট আছে, যন্ত্রপাতি আছে, জনবল আছে।’

সিলেট শহরের বন্যা পরিস্থিতি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, গতকাল পর্যন্ত সিলেটের ৪০ ভাগ এলাকা জলমগ্ন মুক্ত ছিল। আজকে এই সময়ে সিলেটের পুরো এলাকা জলমগ্ন হয়ে গেছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পানি ঢুকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন হয়েছে। সিটি করপোরেশনের মেয়রকে অনুরোধ করেছি বিকল্প জেনারেটরের ব্যবস্থা করে আইসিইউতে থাকা রোগীদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য।’

পরিস্থিতি মোকাবেলায় থোক বরাদ্দ দেয়ার কোনো বিষয় নেই বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, যেখানে যা লাগবে দেয়া হবে। প্রত্যেক জেলায় আপদকালীন তহবিল আছে। কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। আমরা কোথাও কোথাও পৌঁছতে পারছি না, শুকনো খাবার পাওয়া যাচ্ছে না, দূর থেকে আনতে হচ্ছে- এটাই এখন সমস্যা।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত