সিলেটটুডে ডেস্ক

২৫ জানুয়ারি, ২০১৬ ২২:৩৬

‘আমিই সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি, যে ৮৩ বছর বয়সেও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে আছি’

নিজের জন্মদিনে বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত এক বছরে দেশে নতুন করে ‘রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না করায়’ মুহিতের এই ধন্যবাদ।

“আজকে আমার একটি বিশেষ দিন। এ দিন আমি খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। গত এক বছর কোনো জ্বালাও-পোড়াও না হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে গতির সঞ্চার হয়েছে।”

২০১৪ সালের শুরুর তিন মাসের টানা অবরোধে ব্যাপক নাশকতার পর প্রায় এক বছর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকার প্রসঙ্গ টেনে মুহিত বলেন, “দেশে কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। অর্থনৈতিক সূচকগুলোও ভালো। তাই অধরা ৭ শতাংশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবার ধরা দেবে বলে আশা করছি।”

সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর নিজের দপ্তরের কর্মীদের সঙ্গে জন্মদিন পালনের আয়োজনে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মুহিত।

“আমি আগেই বলেছিলাম, বাংলাদেশের মানুষ আর হরতাল-অবরোধ মানবে না। হয়েছেও তাই। আমার বিশ্বাস এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি বাংলাদেশ থেকে চিরতরে বিদায় নেবে।
“মানুষ এখন উন্নয়ন চায়। আর সেই কাজটিই আমরা করছি,” বলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।

১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্ম নেওয়া মুহিত এরইমধ্যে টানা সাত বছর বাংলাদেশের বাজেট ঘোষণার রেকর্ড গড়েছেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের শুভেচ্ছার জবাবে এ সরকারের আগামী তিনটি বাজেটও নির্বিঘ্নে দিয়ে যাওয়ার আশার কথা বলেন তিনি।

“শরীর ভালো থাকলে আরও তিনটা দিতে চাই। তাহলে সাইফুর রহমান সাহেবের ১২টার সমান হবে।”

জন্মদিনের কেক কেটে তৃপ্তির সঙ্গে মুহিত বলেন, “পৃথিবীতে আমিই সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি, যে ৮৩ বছর বয়সেও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছে।”

১৯৮২-৮৩ সালে তখনকার এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে প্রথমবারের মতো অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন মুহিত। এরপর দীর্ঘদিন বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মুহিত পান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তার কাঁধেই রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দীর্ঘ এই কর্মজীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য কী- এমন প্রশ্নে মুহিত বলেন, “বাংলাদেশকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে দেখতে পাওয়া সবচেয়ে বড় সাফল্য। আশা করছি ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হব। তখন আরও ভালো লাগবে।”

অর্থমন্ত্রী বলেন, গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ৬ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে, যা অনেক বড় দেশ পারেনি।

“এবার আমরা ৭ শতাংশ অতিক্রম করব। এটা হবে বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক।”
কোনো আক্ষেপ আছে কি না- জানতে চাইলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে মৃদু হেসে বলেন, “আমি তো খুঁজে পাই না।”

জন্মদিনে ফুরফুরে মেজাজে থাকা অর্থমন্ত্রী থমকে থাকা বিনিয়োগ নিয়েও আশার কথা বলেন।

“রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করেন না। এবার যেহেতু জ্বালাও-পোড়াও নেই, তাই বিনিয়োগ হবে। আমি এটা নিয়ে আগে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি, বেসরকারি বিনিয়োগ যে একেবারেই আসছে না তা কিন্তু নয়। ধীরে ধীরে বাড়ছে।

“আমাদের বিনিয়োগকারীদের হাতে টাকা-পয়সা আছে। কিন্তু রাজনৈতিক কোনো ঝামেলা হলেই তারা চুপ করে যায়। কোনো ধরনের বিনিয়োগ করে না। তবে এবার এসব নেই। তাই বিনিয়োগ নিয়ে আশা করাই যায়।”

সরকার বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আবারও বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, রংপুরে যমুনা নদীর বাঁ পাশ থেকে শুরু করে মংলা পর্যন্ত একটি রাস্তা তৈরি করা হবে। এর সঙ্গে নদী ড্রেজিং হবে। ড্রেজিংয়ে খরচ হবে ২ বিলিয়ন ডলার, আর রাস্তায় খরচ হবে ৪ বিলিয়ন। প্রকল্প বাস্তবায়নে সময় লাগবে চার বছর।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় বাংলাদেশেও কমা উচিৎ মন্তব্য করে মুহিত বলেন, “আসলে তেলের দাম কমে এখন যেখানে নেমে এসেছে তাতে আমি মনে করি আমাদেরও কমানো উচিৎ। তবে আরও উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা এটা কমাতে হবে।”

এরআগে জন্মদিনে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীসহ সহকর্মীদের শুভেচ্ছায় সিক্ত হন আবুল মাল আবদুল মুহিত।

প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের প্রাণশক্তির প্রশংসা করে একজন মন্ত্রী বয়স উল্টে মুহিতকে তুলনা করলেন ৩৮ বছরের তরুণের সঙ্গে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৩৪ সালের ২৫ জানুয়ারি সিলেটে জন্ম নেওয়া মুহিত ‘একাধারে একজন অর্থনীতিবিদ, কূটনীতিক, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা’।

টানা সাত বছর বাংলাদেশের বাজেট ঘোষণা করার রেকর্ডও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মুহিতের।

মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত একজন মন্ত্রী জানান, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ অর্থমন্ত্রীর জন্মদিনের প্রসঙ্গ বৈঠকে তোলেন।

“এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে তার দীর্ঘায়ু কামনা করেন। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরাও শুভেচ্ছা জানান অর্থমন্ত্রীকে।

“বয়সের অংক দুটো উল্টে দিয়ে একজন মন্ত্রী বলেন, তার যে অবস্থা তাতে বয়স ৮৩ না বলে ৩৮ বছর বলাই ভালো। অনেকেই তার এ কথায় সহাস্যে সায় দেন।”

বৈঠকে উপস্থিত একজন প্রতিমন্ত্রী জানান, শুভেচ্ছাসিক্ত অর্থমন্ত্রীর মুখে এ সময় ছিল স্মিত হাসি। তবে তিনি নিজে কোনো কথা বলেননি।

“একজন সিনিয়র মন্ত্রী রসিকতা করে অর্থমন্ত্রীকে বলেন, জন্মদিনের খাবার কই? এ সময় আরও কয়েকজন এই রসিকতায় যোগ দেন।”

সিলেট জেলা মুসলিম লীগের নেতা আবু আহমদ আব্দুল হাফিজের দ্বিতীয় ছেলে মুহিত। তার মা সৈয়দ শাহার বানু চৌধুরীও রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন।

১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স করার পর অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ডে উচ্চ শিক্ষা নেন মুহিত। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেওয়ার পর তখনকার পাকিস্তান এবং পরে স্বাধীন বাংলাদেশে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭১ সালে যখন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো, মুহিত তখন ওয়াশিংটন দূতাবাসে কূটনৈতিক দায়িত্বে। জুন মাসে পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করেন তিনি।

১৯৭২ সালে পরিকল্পনা সচিবের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৭৭ সালে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বহিঃসম্পদ বিভাগে সচিবের হন মুহিত। ১৯৮১ সালে চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে ‘অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ হিসেবে’ কাজ শুরু করেন ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও আইএফএডি-তে।

১৯৮২-৮৩ সালে তখনকার এইচ এম এরশাদ সরকারের সময়ে প্রথমবারের মতো অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রীর দায়িত্বে আসেন মুহিত।

দীর্ঘদিন বিশ্ব ব্যাংক ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কাজ করার পর দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন মুহিত। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি পান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব মুহিতের কাঁধেই রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া জীবন বৃত্তান্ত বলছে, মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ইতিহাস, জনপ্রশাসন এবং রাজনীতি নিয়ে ২৩টি বইও লিখেছেন মুহিত।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও মন্ত্রীকে নিয়ে তার জন্মদিন পালন করেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত