সিলেটটুডে ডেস্ক

০২ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ২১:৪৪

আ.লীগ সাংসদ লতিফের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্য তাঁর নামে ব্যানার টানাতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে। তাঁর নামে করা বঙ্গবন্ধুর ছবিবিকৃতি অনলাইন মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়া এম এ লতিফ গত ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সফর উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ওই তৈরি করা ছবি সম্বলিত পোস্টার টানান চট্টগ্রাম নগরীর বিশেষ করে বন্দর-পতেঙ্গা-ইপিজেড এলাকায়।

যেখানে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধুর পরনে লম্বা ঝুলের পাঞ্জাবি ও ঢোলা পায়জামা এবং পায়ে কালো স্নিকার জুতা। এছাড়া দাঁড়ানোর ভঙ্গি মোটেও বঙ্গবন্ধুর নয়।

ছবির নিচে লেখা আছে- জনসংখ্যা আর নদ-নদী/বাংলাদেশের জীয়নকাঠি। তার নিচে লেখা- এম এ লতিফ এমপি।

ছবিতে বঙ্গবন্ধুর দাঁড়ানোর স্টাইল, পরিহিত পাঞ্জাবি ও পাজামা এবং জুতা বিতর্কের মাত্রাকে উসকে দিয়েছে।

ব্যানারের ‘বঙ্গবন্ধু’ বুকটান করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সেভাবে দাঁড়ানোর কোনো ছবিই গুগল সার্চ দিয়ে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ছবিতে বঙ্গবন্ধুর পরনে যে পাজামা সেটির নিচে বর্ডার দেয়া। কিন্তু এ ধরনের বর্ডার দেয়া চিকন পাজামা বঙ্গবন্ধু কখনোই পরতেন না। তিনি সব সময়ই ঢিলেঢালা পাজামা পরতেন।

এছাড়া ছবিতে দেখা যায় ‘বঙ্গবন্ধু’ স্পোর্টস কেডস পরে দাঁড়িয়ে আছে, অথচ এধরনের কেডস পরিহিত কোন ছবি কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় নি।

বঙ্গবন্ধুর এ ছবি ফেসবুকে প্রচার হওয়ার পর অনেকেই তীব্র সমালোচনা করে বলছেন, এটা স্পষ্টত বঙ্গবন্ধুকে অপমান। অনেকেই এ ছবি বিকৃতির জন্যে এম এ লতিফ এমপিকে দায়ি করে তাঁর অতীত ইতিহাস নিয়েও ইঙ্গিত করছেন।

এদিকে, বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ ওঠায় এম এ লতিফ এমপি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কিছু বিলবোর্ড লাগানো হয়েছিল।

“তবে চট্টগ্রাম চেম্বারের শতবর্ষ ও ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের পাঁচ দিনের অনুষ্ঠান নিয়ে আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম। যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তারা কীভাবে করেছে আমি ব্যস্ততার কারণে দেখিনি।”

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি এম এ লতিফ এর আগে জামায়াত নেতা থেকে হঠাৎ করে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন। এরপর আলোচনায় আসেন ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার’ নামের সংগঠনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে।

আগামী ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৫ পাকিস্তানি সেনার প্রতীকী বিচার করার লক্ষ্যে গঠিত ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার’ নামের সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের মঞ্চে সাংবাদিক আবেদ খানের পাশে বসেছিলেন এম এ লতিফ।

তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম ১১ আসনের সংসদ সদস্য এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজসম্পদ, নৌ-পরিবহন ও পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য।

জামায়াত সংশ্লিষ্টতা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে- মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক সেনাদের নির্যাতন কেন্দ্র চট্টগ্রাম ডালিম হোটেলের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী মওলানা শামসুদ্দিনের কাছের লোক ছিলেন লতিফ।

চাষী কল্যাণ সমিতির সেই অনুষ্ঠানে এম এ লতিফ (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)

২০০৯ সালের ৩১ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন চাষী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত যৌতুকবিহীন বিয়ের অনুষ্ঠানে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মুখে থাকা ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মাওলানা শামসুদ্দিন, জামায়াতের তৎকালীন নায়েবে আমির আফসার উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে মঞ্চে উঠে সমালোচনায় পড়েছিলেন তিনি।

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গেও একাধিকবার বিরোধে জড়িয়েছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি লতিফ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত