সিলেটটুডে ডেস্ক

২০ ফেব্রুয়ারি , ২০১৬ ১৩:০৯

নিয়োগ স্থগিতে মালয়েশিয়ার অবাক সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের পরদিন মালয়েশিয়ার বিদেশি শ্রমিক নেওয়া স্থগিতের ঘোষণায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সরকারের কর্মকর্তারা।

তারা বলেছেন, মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমে স্থগিতের খবর এলেও সরকারিভাবে আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে জানানো হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়া যেতে আগ্রহীদের এখনই বিচলিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ।

অন্যদিকে মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্তে সেখানে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

১৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়ার বিরোধিতা করে আসা মালয়েশীয় শ্রমিক সংগঠনগুলো তাদের সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও ম্যানুফ্যাকচারিং ও পাম প্ল্যান্টেশন খাতের উদ্যোক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ শ্রমিক নিতে সমঝোতা স্মারকে সই করার পরদিনই বিদেশি শ্রমিক নেওয়া স্থগিত করার এ ঘোষণা মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে আসায় বিস্মিত বাংলাদেশ।

গত শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দেশটির উপ প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি এ স্থগিতে ঘোষণা দেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশি সেখানে বিভিন্ন পেশায় রয়েছেন।

দীর্ঘদিন বন্ধ রাখার পর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে কেবল ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে শ্রমিক নেওয়া শুরু করে মালয়েশিয়া। এরপর গতবছর বাংলাদেশকে মালয়েশিয়ার জনশক্তির জন্য ‘সোর্স কান্ট্রির’ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে  ১৫ লাখ কর্মী নেওয়ার আলোচনা শুরু হয়।

এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী রিচার্ড রায়ত জায়েম এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি এতে সই করেন।

ওই চুক্তির আওতায় মালয়েশিয়া তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী নেবে বলে অনুষ্ঠানের পর জানানো হয়। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই শুক্রবার সকালে মালয়েশিয়ার উপ প্রধানমন্ত্রী আহমেদ জাহিদ হামিদি বাংলাদেশসহ সব ‘সোর্স কান্ট্রি’ থেকে জনশক্তি আমদানি স্থগিতের ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, “কতো শ্রমিক আমাদের প্রয়োজন সে বিষয়ে সরকার সন্তোষজনক তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত বিদেশি কর্মী নেওয়া স্থগিত থাকবে।”

দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বারনামা ওই খবর দেওয়ার পর মালয়েশিয়ার এ ধরনের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেন বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তারা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জাবেদ আহমেদ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “মন্ত্রী পর্যায়ে একটা রাষ্ট্রীয় চুক্তি হয়েছে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ডকুমেন্ট। আমরা যখন এটাতে প্রবেশ করি, তখন ওখান থেকে সেটার অবসায়নেরও একটা প্রক্রিয়া আছে। সেটাও আমাদের সামনে আসেনি।”

অবশ্য এখনই শঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “চুক্তি ঠিকই আছে। মালয়েশিয়ার পত্রিকায় কী আসছে বা তাদের ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার কী বলেছে, সেটা নিয়ে এই মুহূর্তে আমাদের মাথা ঘামানোর কিছু নেই।”

বিষয়টি ব্যাখ্য করে তিনি বলেন, “মনে করেন, আমি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মনে করছি, আমি মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাব না। তাহলে আমাকে নোটিশ দিতে হবে। বলতে হবে, এই এই কারণে আমি তোমার চুক্তি থেকে সরে যেতে চাই। দেয়ার ইজ অ্যা স্ট্রেইট প্রসিডিওর। এ রকম কিছু হয় নাই।”

শ্রমিক না নেওয়ার এই ঘোষণার পেছনে মালয়েশিয়া সরকারের ‘অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কারণ’ থাকতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত