সিলেটটুডে ডেস্ক

০৬ জুন, ২০১৬ ২২:২২

এসপির স্ত্রী হত্যা : সন্দেহের তালিকায় জামায়াত-শিবিরও

পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন ঘটনার পর জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মোজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জড়িত থাকার কথা বলা হলেও এখন নতুন করে সন্দেহের তালিকায় শিবিরের নাম রাখছে পুলিশ। তবে জেএমবিকেও আবার মূল সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়নি। এর রহস্য উদঘাটন করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছে সিএমপি।

সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ক্রস চেকের মাধ্যমে মূল খুনিদের সনাক্তের চেষ্টা করছে তদন্ত সংস্থা। এই হত্যা মামলাটি অফিসিয়ালি নগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করলেও পাশাপাশি মাঠে কাজ করছে পিবিআই, সিআইডি, র‌্যাব ও থানা পুলিশ। বিশেষ করে ডিবির দশটির অধিক টিম এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে মাঠে কাজ করছে। বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। খুনিদের ধরতে চট্টগ্রাম নগরীর বাইরের বিভিন্ন জেলায়ও অভিযান চলছে।

জেএমবির জঙ্গি বিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে ব্যাপক প্রশংসিত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে প্রতিশোধ পরায়ণ জঙ্গিরা এই হত্যাকাণ্ড করতে পারে এমন ধারণা পুলিশের থাকলেও রোববার রাতে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত নগরীর শুলকবহরের বড় গ্যারেজ এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি উদ্ধারের পর পুলিশ কর্মকর্তাদের সন্দেহের তীর শিবিরের দিকেই যাচ্ছে।

সোমবার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সিএমপি কমিশনার মো.ইকবাল বাহার আলাপকালে বলেন, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি (চট্টমেট্রো-ল-১২-৯৮০৭) শুলকবহর বড় গ্যারেজ এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এটি দিনভর সেখানে রাস্তার পাশে পড়ে থাকার পর রাতেও কেউ নিতে না আসায় সেটি জব্দ করা হয়। পরে চেক করে জানা যায় এটিই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটর সাইকেল।

তার মানে খুনিরা ওই এলাকায় মোটর সাইকেল রেখে নিরাপদে পালিয়ে যায়। আর ওই পুরো এলাকাটা জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত। এজন্য এ ঘটনার সঙ্গে শিবিরের সম্পৃক্ততার বিষয়ে সন্দেহ করছি। আমরা আগের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে দেখেছি শিবিরের একটি অংশ পর্যায়ক্রমে জেএমবিতে যোগ দেয়। এ কারণেই হত্যাকাণ্ডে জেএমবির সঙ্গে শিবিরও জড়িত ছিল কিনা সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।

এরআগে রোববার রাতে ধানমণ্ডির সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়েও মিতু হত্যায় বিএনপি-জামায়াত জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ।

হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনকে চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে পুলিশ কমিশনার বলেন, এটিকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। দেশবাসী ও আমার পুলিশ সদস্যদের জন্যও এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন জরুরী হয়ে পড়েছে। এটি একটি ক্যাচি অ্যান্ড টাসি ইস্যু। এর রহস্য উদঘাটন আমরা করবই।

আগামীকালের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে দাবি করে বাবুল আক্তারের সাবেক এ বস বলেন, ইতোমধ্যে আমরা মোটর সা্ইকেলটি উদ্ধার করেছি। সেটির মালিকানা যাচাই চলছে। ফুটেজ সংগ্রহ করে সব মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা সারা চট্টগ্রাম শহরের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করছি। মোটর সাইকেলটি কোথায় থেকে রওনা হয়েছে। আর কোন দিক দিয়ে শুলকবহর এসেছে সেটি আমরা জানার চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে অ্যাকশন শুরু হয়ে গেছে, কালকের মধ্যে কিছু একটা আপনাদের সামনে বলতে পারব।

এদিকে মাহমুদা আক্তার হত্যায় জড়িত সন্দেহে চারজন আটকের খবর বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া গেলেও পুলিশ কর্মকর্তারা তা স্বীকার করেননি।

এমনকি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আসা সিএমপির দুটি থানার ওসি জানান, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে এরা পেশাধার খুনি নয়। আর তাদের হাটাচলা ও খুনের ধরণ দেখে তাদেরকে অপেশাধার বলেই মনে হচ্ছে। শুধু জেএমবিকে নয়, শিবিরসহ অন্য কোন উগ্র গোষ্ঠিও এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে।

রোববার (৫ জুন) সকালে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাত ও গুলি করে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতুকে খুন করে দুর্বৃত্তরা।

মিতুকে খুনের পর হত্যাকারী তিনজন মোটরসাইকেলে করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। সিসিটিভি ফুটেজে তাদের পালাতে দেখা যায়।

পুলিশ জানিয়েছে, মিতু হত্যাকাণ্ড হয়েছে মাত্র ৫০ সেকেন্ডে। আর মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাত্র ১৭ সেকেন্ড সময় নিয়েছে ঘাতকরা। মোটর সাইকেল নিয়ে আগেই দাঁড়িয়ে ছিল দুই হামলাকারী, অপরজন মিতুকে অনুসরণ করেছে পেছন থেকে।

জিইসি মোড়সংলগ্ন মিষ্টির দোকান ওয়েল ফুডের সামনে পৌঁছার সাথে সাথে মিতুকে প্রথমে ছুরি মারে এবং পরে মাথায় গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে ঘাতকরা। এ সময় মিতুর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল তার পাঁচ বছরের শিশুসন্তান।

নগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) পরিতোষ ঘোষ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,হত্যার ধরণ দেখে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তারা আগে থেকেই ঘটনাস্থল রেকি করেছিল। ঘটনাস্থল থেকে ১০০ গজ দূরে বাসা থেকে বের হয়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে কখন আসবেন, তা নিশ্চয় দুর্বৃত্তরা আগে থেকেই খোঁজখবর রেখেছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী তাঁর ছেলে মাহমুদ আকতার মাহিরকে নিয়ে জিইসি মোড় পৌঁছার আগেই ওয়েল ফুড নামক দোকানের সামনে মোটরসাইকেলে করে তিন আরোহী আসে। যে গাড়ি চালাচ্ছিল, তার মাথায় হেলমেট ছিল। বয়স আনুমানিক ৩০ থেকে ৩৫। তার পেছনে দুজন বসা ছিল। মাঝখানে বসা যুবকের হাতে ছুরি ছিল। পেছনে বসা তৃতীয়জনের হাতে একটি পিস্তল ছিল।’

সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন,‘পুলিশের মনোবল নষ্ট করতেই চট্টগ্রামে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। যে অফিসারের স্ত্রী ওপর হামলা করা হয়েছে তিনি চৌকস অফিসার। জঙ্গি দমনে তার ভূমিকা ছিল। এ কারণে তিনি টার্গেটে ছিলেন। এটা একটি টার্গেট কিলিং।’

মন্ত্রী বলেন,‘আমরা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করছি, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের খুব দ্রুত ধরতে পারব।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত